
সংগ্রাম দত্ত: মৌলভীবাজার জেলার চারিদিকে চা বাগান পর্যটন নগরী হিসেবে খ্যাত কমলগঞ্জ উপজেলায় দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে কমলগঞ্জ-আদমপুর-কুরমা সড়কটি দীর্ঘদিন ধরে বেহাল হয়ে পড়েছে। সড়কটির ৫ কিলোমিটার অংশের বিটুমিন ও খোয়া উঠে অসংখ্য ছোট-বড় গর্ত আর খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। এতে প্রায়ই স্কুল, কলেজগামী শিক্ষার্থী ও বহনকারী যাত্রীদের টমটম, ইজিবাইক, অটোরিকশা উল্টে গিয়ে আহত হওয়ার ঘটনা ঘটছে অহরহ। তবে সংশ্লিষ্টদের দাবী সড়কটি মেরামতের জন্য দুই বছর আগে ঠিকাদার নিয়োগ করা হলেও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবার ভয়ে ঠিকাদার কাজটি করেননি। ফলে সড়কটি মেরামত না হওয়ায় দিন দিন আরো বেহাল দশায় পরিণত হচ্ছে। দ্রুত সড়কটি মেরামতের দাবী জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
জানা যায়, কমলগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে আদমপুর বাজার পর্যন্ত সড়কটির দৈর্ঘ্য ৭ কিলোমিটার। ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে প্রায় সাড়ে ৩ কোটি ব্যয়ে এলজিইডির অর্থায়নে কমলগঞ্জ উপজেলা চৌমুুহনী থেকে আদমপুর বাজার পর্যন্ত রাস্তার কার্পেটিং করা হয়। দীর্ঘ প্রায় ৭ বছরে রাস্তাটিতে কার্পেটিং উঠে খানাখন্দে সৃষ্টি হয়েছে। দিন যত যাচ্ছে ততই বিশাল গর্ত হচ্ছে। রাস্তাটিতে চলাচলের অনুপযোগী হওয়ায় ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে প্রায় ৩ কোটি ৮৪ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয় ধরে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর মৌলভীবাজার সড়কটি মেরামতের জন্য দরপত্র আহবান করেছিল। ওই ঠিকাদার বাজারে পাথর ও বিটুমিনের দাম বৃদ্ধিতে ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে কাজটি না করে সরকারী বিধি মোতাবেক ১০ লাখ টাকা লোকসান দিয়ে চলে যায়। ফলে রাস্তাটি মেরামত করতে হিমশিম খাচ্ছে এলজিইডি বিভাগ।
আদমপুর এলাকার স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, প্রায় ৪ বছর আগে থেকেই কমলগঞ্জ-আদমপুর সড়ক চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। আদমপুর, ইসলামপুর, কমলগঞ্জ সদর ও আলীনগর ইউনিয়নের প্রায় ২০ হাজার মানুষের চলাচলের প্রধান সড়ক এটি। এই রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন শত শত গাড়ি জেলা ও উপজেলা সদরের সাথে চলাচল করে থাকে। সর্বশেষ সাত বছর আগে সড়কটি সংস্কার করা হয়। এরপর মেরামত না করায় সড়কের অনেক স্থানে বিটুমিন ও ইট-পাথর উঠে গিয়ে ছোট-বড় প্রায় দুআ শতাধিক গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। দুর্ঘটনা এড়াতে যানবাহন চলছে ধীরগতিতে।
কমলগঞ্জ-আদমপুর সড়কটির আলেপুর নামক এলাকা হতে আদমপুর বাজার পর্যন্ত প্রায় ৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে সড়কের অসংখ্য স্থানে কার্পেটিং উঠে ইটের খোয়া ও পাথর বেরিয়ে পড়েছে। সড়কজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে ছোট-বড় খানাখন্দ। এর মধ্যে ঝুঁকি নিয়ে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, ইঞ্জিনচালিত যানবাহন, ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহন চলাচল করছে।
জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে এই সড়কের কোনো সংস্কার না হওয়ায় পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। এ সড়কের দুর্ঘটনা এখন নিত্যদিনের সঙ্গী। বিশেষ করে বিগত বন্যায় সড়কের ক্ষতিগ্রস্ত অংশগুলো আরও নাজুক হয়ে পড়েছে। এ অঞ্চলের জন্য আদমপুর বাজারটি গরুর বাজারের জন্য প্রসিদ্ধ। প্রতি শুক্রবার এখানে গরুর বিরাট হাট বসে। সামনে কোরবানীর ঈদে এখানে জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে ক্রেতা-বিক্রোতারা আসবে।
এ সড়কটি দিয়ে মৌলভীবাজার জেলা সদর, ভানুগাছ বাজার, শমশেরনগর ও শ্রীমঙ্গল শহরের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এ অঞ্চলের মানুষ। কৃষি ও পর্যটননির্ভর এই অঞ্চলের মানুষের জন্য সড়কটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হামহাম জলপ্রপাত, মণিপুরি কমিউনিটি বেইজ ট্যুরিজম, রাসপূর্ণিমার মত দর্শনীয় স্থানে যাওয়া পর্যটকরাও এই সড়ক ব্যবহার করেন।
এছাড়া এই সড়কে টমেটো, খাসিয়া পানের মতো কৃষিপণ্য পরিবহন করতে গিয়ে প্রায়ই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন কৃষক ও ব্যবসায়ীরা। ভাঙাচোরা রাস্তায় মালবাহী ট্রাকের চাকা খুলে যাওয়া, এক্সেল ভেঙে যাওয়া বা উল্টে যাওয়ার মতো ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। এমনকি কয়েকটি দুর্ঘটনায় প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, সড়কের বিভিন্ন স্থানে কার্পেটিং উঠে গিয়ে ছোট-বড় অসংখ্য গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এসব গর্তের কারণে সিএনজি, টমটম, ট্রাকসহ সব ধরনের যানবাহন চলাচলে মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।
স্থানীয়রা দ্রুত এই গুরুত্বপূর্ণ সড়কটির সংস্কার কাজ দ্রুত শুরুর দাবি জানিয়েছেন, যাতে কৃষক, পর্যটক ও সাধারণ মানুষ এই দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
রাস্তায় অনেক খানাখন্দ থাকায় প্রতিদিনই ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটছে। অনেক সময় গাড়ি করে এই রাস্তা দিয়ে রোগী নিয়ে গেলে চালক রোগী যাত্রী ও গাড়ি অবস্থা কাহিল হয়ে পড়ে।
ভাঙাচোরা রাস্তায় গাড়ি চালাতে গিয়ে প্রায়ই নাটবল্টু খুলে পড়ে যায়। ফলে সারা দিন গাড়ি চালিয়ে যা রোজগার হয়, তার একটা অংশ মেরামতেই শেষ হয়ে যায়। ২০ মিনিটের রাস্তা যেতে সময় লাগে ৩০-৩৫ মিনিট।
আদমপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো: আবদাল হোসেন গণমাধ্যম কর্মীদের বলেন, রাস্তাটি মেরামতের জন্য বার বার সংশ্লিষ্টদের কাছে জানিয়েও কোন কাজ হচ্ছে না। দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না করায় চলাচলে অনুপযোগী হয়ে উঠেছে সড়কটি। দ্রুত মেরামতের দাবী জানাচ্ছি।
এ ব্যাপারে এলজিইডি’র কমলগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী মো. সাইফুল আজম গণমাধ্যম কর্মীদের বলেন, কমলগঞ্জ-আদমপুর সড়কটি সংস্কারেরর জন্য ২০২২-২৩ অর্থ বছরে টেন্ডার আহবান করা হয়ছিল। কিন্তু জিনিস পত্রের মুল্য বৃদ্ধির কারণে ক্ষতিগ্রস্তের ভয়ে ঠিকাদার কাজ করতে রাজি হয়নি। পরবর্তীতে আবারও রাজস্ব খাত হতে মেরামতের চেষ্টা করলেও টাকা বেশি হওয়ায় সেটাও করা সম্ভব হয়নি। অচিরেই আবার টেন্ডার হয়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করছি।
জনগুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটি আর সংস্কার না করে নতুনভাবে টেকসই করে নির্ম্মাণ করা প্রয়োজন । এজন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রকল্প প্রস্তাব প্রেরণ করে অনুমোদন নিয়ে টেন্ডার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কাজ শুরু করা প্রয়োজন