বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি বলেছেন, দীর্ঘ ১৫ বছর আমরা অন্যায় অত্যাচার শিকার হয়ে এদেশে আন্দোলন সংগ্রাম করেছি। বিএনপির অনেক নেতাকর্মী ঘুম-খুনসহ মামলা-হামলার শিকার হয়েছে। আওয়ামী ফ্যসিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার গণআন্দোলন তৈরি হয়েছে। এ গণআন্দোলনের মুখে তারা পলায়ন করেছে। একটি সরকার কতটুকু জনশত্রুতে পরিণত হতে পারে, যখন তারা পলায়ন করে। এটা বুঝতে আর বাকী থাকে না।
শনিবার (৩১ আগস্ট) সন্ধ্যায় লক্ষ্মীপুর প্রেসক্লাবে ভয়াবহ বন্যার সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা রাজনৈতিক ভাবে অতীত এ কর্মকাণ্ডকে মোকাবিলা করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি। যারা দীর্ঘ ১৫ বছর অত্যাচার নির্যাতন করেছে, তাদের বিরুদ্ধে নিয়ম অনুযায়ী মামলা হবে। আমরা কখনো আইনকে নিজের হাতে তুলে নেবো না। আমরা সরাসরি প্রতিশোধ গ্রহণ করব না। আইনানুযায়ী যতটুকু সম্ভব বিচার বিভাগ পদক্ষেপ গ্রহণ করবে আইনের মাধ্যমে। সেজন্য দলের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক ভাবে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি। এরপরও একটি অস্বাভাবিক পরিস্থিতি ঘটানোর জন্য ব্যক্তি বিশেষ কিছু কিছু কর্মকাণ্ড এমনভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করছে, তার পরেও আমরা স্থানীয়ভাবে সহজ ও শান্তিপূর্ণভাবে রাজনৈতিক কৌশলে আলোচনার মাধ্যমে কর্মকাণ্ডগুলো মোকাবিলার করছি। কিন্তু কেউ কোনোভাবে আইনকে হাতে তুলে নেবে এ ধরনের সিদ্ধান্ত আমাদের নেই।’
তিনি বলেন, ‘মানুষ এত অত্যাচার নির্যাতন সহ্য করার পর বর্তমান বন্যা পরিস্থিতিতেও মানুষের মুখে হাসি রয়েছে। তারা মনে করে আমরা এখন শান্তিতে আছি, সামাজিক পর্যায়ে থেকে চলাফেরা করতে পারছি। এসমাজিক পর্যায় যেন অব্যহত থাকে। ভবিষ্যতে এ সমাজিক পর্যায়ের মধ্য দিয়ে দেশে যেন একটি জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। সে জন্য আমরা বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সসর্বাত্মক সহযোগিতা করব। যত রকমের সাহয্য সহযোগিতার প্রয়োজন আইনশৃঙ্খলার উন্নয়নে সেটা আমরা স্থানীয় প্রশাসনকে করে যাচ্ছি এবং করবো।’
এ্যানি বলেন, ‘বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে বন্যাকবলিত জেলাগুলোতে বিএনপি ত্রান বিতরণ করছে। কীভাবে এ ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি আমাদের ওপর সওয়ার হলো বাস্তবে তা দেখার জন্য সেখানে গিয়েছি। বিশেষ করে ফিলোনিয়া যে বর্ডারের পাশে দেড় থেকে দুই কিলোমিটার বাঁধ কেটে দেয় পাশের দেশ ভারত। এতে কারেন্টের গতিতে পানি ফেনীতে প্রবেশ করে। এতে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হয়েছে ফেনীবাসীকে। এখন পর্যন্ত সেখানে বিদুৎ নেই। মানুষ বাড়ির ছাদেসহ বিভিন্ন স্থানে গিয়ে আশ্রয় নেয়। সেখানে মানুষ যুদ্ধ করে মোকাবিলা করেছে। এরপর এ পানি যখন নোয়াখালী হয়ে লক্ষ্মীপুরে গড়ায়, প্রত্যান্ত অঞ্চলে ঘুরে আমরা দেখেছি। ১০-১২ দিন যাবত পানিতে ভাসছে মানুষ। তাদের মাঝে দলীয়ভাবে ত্রাণ বিতরণ করেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘এখন ত্রাণের সাথে ওষুধসহ আরও কিছু প্রয়োজন। তবে তারেক রহমানের নির্দেশনা ও বেগম জিয়ার পরামর্শ অনুযায়ী বন্যাকবলিত এলাকায় তিন স্তরে ত্রাণ সহায়তা করার পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। এতে ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে ক্যাম্প এবং মোবাইল টিম করে স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করাসহ ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন বিএনপির পক্ষ থেকে করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। এতে আরও এক দেড় মাস সময় লেগে যাবে।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির সদস্য সচিব সাহাব উদ্দিন সাবু, বিএনপি নেতা হারুনুর রশিদ বেপারী, জেলা যুবদল আহ্বায়ক রেজাউল করিম লিটন ও বিএনপি নেতা মাইন উদ্দিন চৌধুরী রিয়াজ প্রমুখ।