সড়ক দুর্ঘটনা বাড়লেও কমেছে নিহতের সংখ্যা: রোড সেফটি ফাউন্ডেশন 

অনলাইন ডেস্ক:   আর বছরের তুলনায় ২০২৩ সালে প্রায় ১০০ বেশি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। তবে এই সময়ে নিহতের সংখ্যা কমেছে প্রায় ১ হাজার। ২০২২ সালে ৬ হাজার ৮২৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা ছিল ৭ হাজার ৭১৩। বিপরীতে ২০২৩ সালে ৬ হাজার ৯১১টি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ৬ হাজার ৫২৪ জন। এ সময় আহত হয়েছে ১১ হাজার ৪০৭ জন।
শনিবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের কার্যালয়ে ‘২০২৩ সালের সড়ক দুর্ঘটনার বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ ও পর্যালোচনায়’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। সেখানে প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ আই মাহাবুব উদ্দিন আহমেদ। রোড সেফটি ফাউন্ডেশন ৯টি জাতীয় দৈনিক, ৭টি অনলাইন নিউজ পোর্টাল, ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম ও সংস্থার নিজস্ব তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে।

রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের হিসাব অনুসারে, ২০২৩ সালে দেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ৬ হাজার ৯১১টি। নিহত ৬ হাজার ৫২৪ জন এবং আহত ১১ হাজার ৪০৭ জন। নিহতের মধ্যে নারী ৯৭৪, শিশু ১ হাজার ১২৮। এর মধ্যে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ঘটেছে ২ হাজার ৫৩২টি। এসব দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ২ হাজার ৪৮৭ জন।

এ ছাড়া সারা দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় ১ হাজার ৪৫২ জন পথচারী নিহত হয়েছে। যানবাহনের চালক ও সহকারী নিহত হয়েছেন ৯৪২ জন। এই সময়ে, অর্থাৎ ২০২৩ সালে ১০৭টি নৌ দুর্ঘটনায় ১৪৮ জন নিহত, ৭২ জন আহত এবং ৪৬ জন নিখোঁজ হয়েছে। ২৮৭টি রেলপথ দুর্ঘটনায় ৩১৮ জন নিহত এবং ২৯৬ জন আহত হয়েছে।

দুর্ঘটনার যানবাহনভিত্তিক নিহতের চিত্র

দুর্ঘটনায় যানবাহনভিত্তিক নিহতের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, মোটরসাইকেলচালক ও আরোহী ২ হাজার ৪৮৭ জন, যা মোট নিহতের ৩৮ দশমিক ১২ শতাংশ। বাসযাত্রী ২৭৪ জন, যা মোট নিহতের ৪ দশমিক ১৯ শতাংশ, ট্রাক-পিকআপ, কাভার্ড ভ্যান, ট্রাক্টর-ট্রলি-লরি আরোহী ৩৮৪ জন, প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস, অ্যাম্বুলেন্স ও জিপের যাত্রী ২২৯ জন।

এর বাইরে ইজিবাইক, সিএনজি অটোরিকশা, অটো ভ্যান, মিশুক, টেম্পো, লেগুনা দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ১ হাজার ২০৯ জন। স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহনের যাত্রী (নসিমন, করিমন, ভটভটি, আলমসাধু, পাখি ভ্যান, চান্দের গাড়ি, মাহিন্দ্র, টমটম) নিহত হয়েছে ২৯৬ জন এবং বাইসাইকেল, প্যাডেল রিকশা, রিকশাভ্যান আরোহী ১৯৩ জন নিহত হয়েছে।

দুর্ঘটনা সংঘটিত সড়কের ধরন

রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের বিশ্লেষণ বলছে, দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ২ হাজার ৩৭৩টি বা ৩৪ দশমিক ৩৩ শতাংশ ঘটেছে জাতীয় মহাসড়কে, ২ হাজার ৮৮৭টি বা ৪১ দশমিক ৭৭ শতাংশ ঘটেছে আঞ্চলিক সড়কে, ৯৯৪টি বা ১৪ দশমিক ৩৮ শতাংশ ঘটেছে গ্রামীণ সড়কে, ৫৮৩টি ৮ দশমিক ৪৩ শতাংশ ঘটেছে শহরের সড়কে এবং অন্যান্য স্থানে ৭৪টি দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়েছে।

 

দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ১ হাজার ২৯১টি বা ১৮ দশমিক ৬৮ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষ, ৩ হাজার ১৪৯টি বা ৪৫ দশমিক ৫৬ শতাংশ দুর্ঘটনা ঘটেছে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে, ১ হাজার ৪৪৬টি বা ২০ দশমিক ৯২ শতাংশ ক্ষেত্রে পথচারীকে চাপা/ধাক্কা দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে, ৮১৭ টি ১১ শতাংশ ৮২ দুর্ঘটনায় যানবাহনের পেছনে আঘাত করা হয়েছে এবং ২০৮টি দুর্ঘটনা ঘটেছে অন্যান্য কারণে।

দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহন

দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের মধ্যে ট্রাক-পিকআপ, কাভার্ডভ্যান, ডাম্পট্রাক, ট্রাক্টর, ট্রলি, লরি, তেলবাহী ট্যাংকার, বিদ্যুতের খুঁটিবাহী ট্রাক, সিটি করপোরেশনের ময়লাবাহী ট্রাক ২৭ দশমিক ৫৬ শতাংশ; যাত্রীবাহী বাস ১৩ দশমিক ২২ শতাংশ; মাইক্রোবাস, প্রাইভেট কার, অ্যাম্বুলেন্স, পাজেরো জিপ ৪ দশমিক ৮০ শতাংশ; মোটরসাইকেল ২৩ দশমিক ৪ শতাংশ; থ্রি-হুইলার (ইজিবাইক, সিএনজি অটোরিকশা, অটো ভ্যান, মিশুক, টেম্পো, লেগুনা ইত্যাদি) ১৭ দশমিক ২৫ শতাংশ; স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহন (নসিমন, করিমন, ভটভটি, আলমসাধু, পাখি ভ্যান, মাহিন্দ্র, টমটম, চান্দের গাড়ি) ৬ দশমিক ৩৬ শতাংশ; বাইসাইকেল, প্যাডেল রিকশা, রিকশাভ্যান ৪ দশমিক ৬৭ শতাংশ এবং অজ্ঞাত যানবাহন ৩ দশমিক ৭ শতাংশ।

সম্পৃক্ত পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Check Also
Close
Back to top button