শ্রীমঙ্গলে প্রকৃত মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও মুক্তিযোদ্ধাদের অনেকেই এখনো মুক্তিযোদ্ধার তালিকাভুক্ত হতে পারেননি

সংগ্রাম দত্ত: মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলায় সত্যিকারের মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও মুক্তিযোদ্ধাদের অনেকেই শ্রীমঙ্গল উপজেলা যাচাই-বাছাই কমিটির কিছু সদস্যের সংকীর্ণ রাজনীতির কারণে স্বীকৃতি পাননি। তাদের মধ্যে শ্রীমঙ্গল পৌরসভার একমাত্র বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত চেয়ারম্যান এম এ মুসাব্বির, তৎকালীন ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এম এ রহিম, এস এ মুজিব, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ ইসমাইল হোসেন, ডঃ রমা রঞ্জন দেব, ডাক্তার সুধাংশু রঞ্জন দাস , শ্রীমঙ্গল ইউনিয়নের জনসংযোগের চেয়ারম্যান মোঃ রইস মিয়া ( শ্রীমঙ্গল ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা আফজাল এর পিতা) , আওয়ামী লীগের কমলেশ ভট্টাচার্য ( তিনি সংগ্রাম পরিচালনা কমিটির একজন সদস্য ছিলেন এবং স্বাধীনতার পর শ্রীমঙ্গল পৌরসভার গণসংযোগের চেয়ারম্যান হয়েছিলেন), বিমল জ্যোতি চৌধুরী ননী, পৌর কমিশনার শহিদুল আলম প্রমুখ।

উল্লেখ্য যে, ১৯৭০ সালের ৬ এপ্রিল পাকিস্তান সরকার সামরিক আইনের সৃষ্টি এম এল আর ক্লোজ এইট এর ধারা বলে পাকিস্তান ভাঙ্গা তথা জয় বাংলা মামলায় ন্যাপ দলীয় রাজনীতিবিদ ও সাংবাদিক রাসেন্দ্র দত্ত, মোহাম্মদ শাজাহান মিয়া, আওয়ামী লীগের এমএ রহিম ও এস এ মুজিব কে পাক সরকার গ্রেফতার করে মৌলভীবাজার জেল হাজতে প্রেরণ করে। পরদিন শ্রীমঙ্গল পৌরসভা মাঠে ন্যাপের পূর্বনির্ধারিত এক জনসভা ছিল। উক্ত জনসভায় যুগের অগ্নিকন্যা বলে খ্যাত বেগম মতিয়া চৌধুরী ও পাক আমলের ডাকসুর সাবেক ভিপি ও বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ সাংবাদিক আহমেদুল কবির ঢাকা থেকে ছুটে এসে জনসভায় জ্বালাময়ী বক্তব্য রেখে গ্রেপ্তারকৃত নেতাদের মুক্তির দাবি করেন। ফলে ন্যাপ , আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও ছাত্র ইউনিয়নের হাজার হাজার নেতাকর্মী সহ সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত তীব্র আন্দোলনের মুখে পাকিস্তান সরকার পরদিন তাদের নিঃশর্তভাবে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। পরবর্তীতে উক্ত নেতৃবৃদ্ধসহ অন্যান্যরা মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসেবে কাজ করেন। ডাক্তার রমা রঞ্জন দেব ও ডাক্তার সুধাংশু রঞ্জন দাস ভারতের ক্যাম্পে ডাক্তার হিসেবে শরণার্থী ও মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা সেবা দিয়ে সাহায্য করেন।

ন্যাপের প্রবীণ রাজনীতিবিদ ও সাংবাদিক রাসেন্দ্র দত্ত ভারতের একটি ক্যাম্পে সম্পাদক হিসেবে কাজ করে ভারত সরকারকে আইনশৃঙ্খলা পালনের সহযোগিতা ও বাংলাদেশের মানুষের স্বাধীনতার জন্য কাজ করায় ভারত সরকার তাঁকে সম্মানসূচক সার্টিফিকেট প্রদান করে। কিন্তু স্থানীয় যাচাই-বাছাই কমিটি সংকীর্ণ মনা রাজনীতির কারণে জয় বাংলা মামলার উপরোক্ত চার নেতা সহ অন্যান্যদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তাদের আবেদন পত্রে মুক্তিযোদ্ধা সংক্রান্ত নির্ভরযোগ্য তথ্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে অভিমত দিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় তাদের আবেদন গুলো প্রেরণ করেন। যা খুবই দুঃখজনক। যাচাই-বাছাই কমিটিতে অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ থাকায় এবং উপরোক্ত ব্যক্তিদ্বয় সব সর্বমহলে পরিচিত থাকার কারণে এবং রাজনীতিতে তাদের বিশাল অবদান রয়েছে জেনেও উপরোক্ত বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ অভিমত ব্যক্ত না করায় অনেকে হতাশা ব্যক্ত করেছেন। এর মধ্যে ‘৯০ এর গণঅদ্ভুত্থানের পর ন্যাপের মোহাম্মদ শাহজাহান মিয়া, আওয়ামী লীগের এম এ রহিম প্রচুর বেদনা ও আক্ষেপ নিয়ে মারা গেছেন, এস এ মুজিব, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ ইসমাইল হোসেন, গণসংযোগের চেয়ারম্যান মোঃ রইস মিয়া, ডাক্তার রমাদন দেব ডাক্তার, ডাক্তার সুধাংশু রঞ্জন দাস সহ অনেকেই মারা যান। অনেকে অনেক চেষ্টা করেও যাচাই-বাছাই কমিটির নেতৃবৃন্দের সংকীর্ণ রাজনীতির কারণে তাদের স্বীকৃতি আদায় করতে পারেননি। কয়েকজন আপিল করেছেন। কিন্তু বেশির ভাগই নিয়ম-কানুন না জানা ও পারিবারিক দারিদ্রতার কারণে জামুকা কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আপিল করতে পারেননি বলে জানা গেছে।
এর মধ্যে কয়েকজনের আপিল সংশ্লিষ্ট বিভাগের আপিল শুনানির অপেক্ষায় আছে। কিন্তু দীর্ঘদিন অতিবাহিত হওয়া সত্বেও তাদের শুনানির কোন ব্যবস্থা হচ্ছে না

সম্পৃক্ত পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button