জহিরুল ইসলাম শিবলু, লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি: অতি ভারী বৃষ্টিপাতে তালিয়ে গেছে লক্ষ্মীপুরের পাঁচটি উপজেলার বেশির ভাগ এলাকা। এতে পানিবন্দি হয়ে আছে জেলার ৬ লাখ মানুষ।
গত কয়েকদিন ধরে টানা বৃষ্টিপাতের পানি নামতে না পারায় বাড়ির উঠান, মাঠ-ঘাট, পুকুর, জলাশয়, ফসলি ক্ষেত তলিয়ে গেছে।
কারও কারও ঘরেও পানি ঢুকে পড়েছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন অনেকে। গবাদি পশু নিয়েও বিপাকে পড়েছেন বন্যাদুর্গতরা। ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মাছচাষিরা। কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিপাতে প্রায় ৪০ হাজার পুকুর ভেসে গেছে। এতে পুকুরের সব মাছ বের হয়ে গেছে বলে জানিয়েছে মৎস্য চাষিরা। এ কয়েকদিনেই জেলাব্যাপী মৎস্য খাতে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৭০ থেকে ৮০ কোটি টাকার। ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা করছে মৎস্যবিভাগ৷ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি জানান, জেলাতে প্রায় ৫৪ হাজার পুকুর রয়েছে। এর মধ্যে ৪০ হাজার পুকুরের ৯০ শতাংশ ভেসে মাছ বের হয়ে গেছে। তলিয়ে গেছে ৫ হাজার ৩০০ হেক্টর মাছ চাষের জলাশয়। মৎস্য কর্মকর্তা আরও বলেন, যেভাবে বৃষ্টিপাত হচ্ছে, এতে আরও পুকুর ভেসে যেতে পারে। তাই ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে।
জানা যায়, জেলার বিভিন্ন স্থানে থাকা ছোট-বড় প্রায় সবগুলো খালেই অবৈধ বাঁধ এবং দখলদারের কবলে পড়ায় ভয়াবহ জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে।
জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের হিসেব মতে, জেলাতে ৬ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছে। তবে বেশিরভাগ মানুষই এখনো আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেনি। জেলায় ১৮৯টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে।
প্রচণ্ড বৃষ্টিতে জেলার বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে ভোগান্তিতে পড়েছে স্থানীয় বাসিন্দারা। মানুষের বাসা-বাড়িতেও পানি ঢুকে পড়েছে।
স্থানীয় পানিবন্দি ফারুক হোসেন, লোকমান হোসেনের, বশির উল্লাহ, নিজাম উদ্দিন, ইয়াছমিন বেগম, পলি আক্তার, মোস্তফা মিয়া ও আমির হোসেন জানান, পানিবন্দি হয়ে অনেকে রান্না করতে পারেননি। শুকনো খাবার খেতে হচ্ছে অধিকাংশ পরিবারকে। আবার অনেককে দেখা গেছে অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিতে।
এদিকে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফুর রহমান গত দু’দিন থেকে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজ করে আসছেন।
তিনি জানান, খাল-বিল ভরাট এবং অবৈধ দখলদারের কবলে পড়ায় পানি নামতে পারছে না। এতে অনেক এলাকার মানুষ পানিবন্দি হয়ে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। মানুষের কষ্ট লাগবে অবৈধ বাঁধ অপসারণে তাঁদের কাজ চলমান রয়েছে।
অপরদিকে বৃষ্টির পানি মেঘনায় নেমে যেতে জেলার ছোট-বড় সবগুলো স্লুইস গেট খুলে দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।
লক্ষ্মীপুর পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী নাহিদ উজ জামান খান বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে লক্ষ্মীপুরের সবগুলো স্লুইস গেট খুলে দেওয়া হয়েছে। আমাদের কর্মীরা সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করছেন। মেঘনা নদীতে ভাটা পড়ার সময় স্লুইস গেট দিয়ে খালের পানি নদীতে নেমে যাচ্ছে। নদীতে জোয়ারের পানির উচ্চতা বাড়লে গেট বন্ধ করে দেওয়া হবে।
লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক সুরাইয়া জাহান বলেন, বিভিন্ন খালে প্রতিবন্ধকতা থাকায় বৃষ্টির পানি ঠিকমতো নামতে পারছে না। এতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে জেলার ৬ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রশাসনের উপস্থিতিতে স্থানীয়রা খালের অবৈধ বাঁধ অপসারণ করছেন।
তিনি আরও জানান, বন্যাদুর্গত এলাকায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুকনো খাবার বিতরণ করা হচ্ছে।