বর্ষাকালের রূপসী তরুর অন্যতম সৌন্দর্য “কদমফুল”

এমরান মাহমুদ প্রত্যয়,নওগাঁ  গাছে হলুদ সাদা রঙা কদমফুল মনে করে দিচ্ছে বর্তমানে চলছে বর্ষাকাল। জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাস বর্ষাকাল।বর্ষাকালের আরেক সৌন্দর্যের নাম হচ্ছে প্রাকৃতিক ভাবে বাড়ির আনাচে-কানাচে কিংবা রাস্তার পাশে বড় হওয়া কদমগাছের হলুদ আর সাদার আভায় বের হওয়া কদমফুল। সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে ঝুলে থাকা এই কদমফুলগুলো খুব সহজেই মনকাড়ে ফুল ও প্রকৃতি  প্রেমীদের।
আবার কখনো কখনোও গ্রামের ছোট বাচ্চাদের খেলার প্রধান উপকরন হিসেবে এই কদমফুলের কোন জুড়ি নেই। এছাড়া মধু সংগ্রহ করতে ফুলে ব্যস্ততা বেড়েছে মৌমাছিসহ নানা রকম পতঙ্গের। মাঝে মাঝে বৃষ্টির টুপটাপ শব্দে ছন্দ তুলছে আবার ধুয়ে মুছে অমলীন বিমোহিত সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে অবহেলিত ভাবে ফোটা কদমফুলগুলো।
আমাদের বাংলাদেশ প্রকৃতির অপরুপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি এবং ঋতুর বর্ষা এক অনন্য ঋতু। আর বর্ষার আগমনকে স্বাগত জানাতে কদমফুল যেন সর্বদা প্রস্তুত। রূপসী তরুর অন্যতম রূপবতী হলো কদমফুল। কদম ফুলের সৌন্দর্যে বিমোহিত হন না এমন বেরসিক মানুষ হয়তো খুঁজে পাওয়া মুশকিল। আবার বর্ষায় প্রেমিকার মনোরঞ্জনে কদমের জুড়ি নেই। একই সাথে বর্ষার প্রকৃতি বাংলা সাহিত্যে এনে দিয়েছে স্নিগ্ধতা। বর্ষার উপহার সোনা রঙের কদম ফুল নিয়ে রচিত হয়েছে নানা গল্প, উপন্যাস, কবিতা আর গান। মানব কল্যাণে প্রকৃতির সৃষ্টি অসংখ্য ছোট-বড় মাঝারি বৃক্ষরাজির অংশ বিশেষ কদম ফুলের জুড়ি নেই।
নওগাঁর আত্রাইয়ের পথে-প্রান্তরে কদম গাছগুলো ভরে উঠতে শুরু করেছে ফুলে ফুলে। এ যেন আবহমান বাংলার বর্ষা বরণের প্রাকৃতিক আয়োজন। বিভিন্ন সড়কের পাশে এখন হলুদ আর সাদায় সেজেছে সর্বত্র। বিভিন্ন স্থানে দেখা মিলছে কদম ফুলের। গাছের শাখে শাখে সবুজ পাতার আড়ালে ফুটে উঠেছে অসংখ্য কদম ফুল। অসংখ্য কদম ফুল গাছ দেখা মিলছে যেখানে সবুজ পাতার ফাঁকে উকি দিচ্ছে হলুদ বর্ণের অসংখ্য কদম ফুল। মাঝেমধ্যেই শিক্ষার্থীদের দেখা যাচ্ছে কদম ফুল হাতে নিয়ে বিদ্যালয়ে যাচ্ছে আবার কেউ কেউ ছোট ফুলগুলো কানে গুজে থাকছে।
আষাঢ়-শ্রাবণে কদম গাছ ফুলে ফুলে ভরে থাকে আর প্রকৃতিতে মৌ মৌ গন্ধ থাকে বিরতিহীন তবে সময়ের আগেই দেখা মিলছে কদম ফুলের। কদম ফুলে সৌন্দর্যে পিপাসুদের তৃপ্তি এনে দেয়। তরুণ-তরুণীরা কদম ফুল তাদের প্রিয়জনকেও উপহার দেয়। মেয়েরা খোঁপায় বাঁধে, খেলায় মেতে উঠে শিশুরাও। মূলত শিশুরা ফুলগুলো ছিঁড়ে ভেতরে থাকা গোলা আবরণ ছোট্ট বল বানিয়ে খেলাধুলা করে। কদম ফুলের গাছ ঘরবাড়ি ও আসবাবপত্রে কাজে ব্যবহার হয়। কদম গাছ কমে যাওয়ায় এখন মানুষ ঐতিহ্য ভুলতে বসেছে। সবাই এখন বাড়ির আঙ্গিনায় ফলমূল ও ফুলের গাছ লাগাচ্ছে যার ফলে হারিয়ে যেতে বসেছে কদম ফুলের গাছ।
 উপজেলার প্রকৃতি প্রেমী আল আমিন বলেন ছোট বেলায় কদমফুল নিয়ে অনেক খেলাধুলা করেছি, সে-সময় যত গাছ দেখেছি বর্তমানে এতো গাছ আর চোখে পড়ে না। শিমুল ফুলসহ অনেক ফুলেরই এখন বাণিজ্যিক চাষ হচ্ছে কিন্তু কদমফুলের গাছ রোপনে এখন পর্যন্ত সরকারী উদ্যোগের পাশাপাশি ব্যক্তি উদ্যোগও গ্রহণ করা হয় না। অবহেলিত ভাবে এখানে-সেখানে প্রাকৃতিক ভাবে যা হয়। কদমফুল অন্যরকম একটা ফুল যেটি দেখলে মন ভালো হয়ে যায়। আমাদের গাছটিকে রক্ষা করতে বেশি বেশি রোপন করা উচিৎ। গাছের বৃদ্ধি অত্যন্ত দ্রুত বলে জ্বালানি কাঠের জন্য রোপণ করা যেতে পারে। নরম কাঠ বলে সহজেই নানা কাজে ব্যবহার করা হয়।
আত্রাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সঞ্চিতা বিশ্বাস বলেন, বর্ষাকাল যেন একখন্ড মেঘের আড়ালে সূর্যের লুকোচুরি। বর্ষাকাল এলে আজও অতীতে ফিরি।মনে পড়ে শৈশবের যত স্মৃতি।
ছোটবেলায় বর্ষাকালে খেলার অন্যতম উপকরন ছিলো কদমফুল। ফুলের সৌন্দর্য আমাকে মুগ্ধ করে। ফুলগুলো হাতে নিলে এতোই ভালো লাগে যা বলে বুঝানো যাবে না। বর্ষাকালে পথে প্রান্তরে প্রচুর পরিমাণে কদম ফুলের দেখা মিলতো যা ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। আমরা ছোটবেলায় শুনেছি কদম গাছের ছাল জ্বরের ঔষধ হিসেবেও উপকারী আবার কদম পাতার রস কৃমি দূর করে। তাই এমন উপকারী গাছের বেশি বেশি রোপনের জন্য সরকারী উদ্যোগের কোন বিকল্প নেই।
 কৃষিবিদ তাপস কুমার রায় বলেন,ফুল ভালোবাসার প্রতীক আর কদম ফুল ভালোবাসা এবং শুভ্রতার প্রতীক। বাংলাদেশে কদমফুল বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টিস্নাত দিনে বাঙালীদের মনে অন্য রকম অনূভূতি এনে দেয়। অনেক কবি সাহিত্যিক বর্ষার কদম ফুল নিয়ে অনেক কবিতা সাহিত্য রচনা করেছেন। কদম ফুল আসলে বাংলাদেশের প্রকৃতির বর্ষা মৌসুমে সৌন্দর্যের সাথে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। কদম গাছের কাঠ জ্বালানির কাজে ব্যবহার করা হয়। এটির বেশ ঔষধিগুন আছে । আগামীতে সরকারী ভাবে এই গাছ রোপনের জন্য কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে উদ্যোগ গ্রহণ করার হবে।

সম্পৃক্ত পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button