চোখের চিকিৎসায় থাইল্যান্ড যাচ্ছেন গুলিবিদ্ধ খুলনার শাফিল, সোমবার ঢাকা ত্যাগ

 

জাফর ইকবাল অপুঃ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিয়ে পুলিশের গুলিতে চোখ হারাতে বসা খুলনার আব্দুল্লাহ শাফিল উন্নত চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ড যাচ্ছেন। রোববার খুলনা থেকে ঢাকায় গিয়েছেন শফিলসহ তার মা ও বাবা। আজ সোমবার তারা থাইল্যান্ডের উদ্দেশ্যে ঢাকা ছাড়বেন। এর আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক দফা দাবিতে ২ আগস্ট (শুক্রবার) খুলনায় পুলিশের গুলিতে শাফিলের বাম চোখ গুরুতর আহত হয়।

শাফিল খুলনার নর্দান ইউনিভার্সিটির ইলেকট্রিক্যাল এ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের (ইইই) প্রথম বর্ষের ছাত্র। খুলনা মহানগরীর সোনাডাঙ্গা এলাকায় বাবা-মার সঙ্গে ভাড়া বাসায় থাকেন তিনি। তাদের গ্রামের বাড়ি বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে। তার বাবা ইউনুস আলী খোকন গ্রামে মাছের ব্যবসা করেন। রোববার সরকারি বিএল কলেজের এইচএসসি ৮৯ সালের ব্যাচের শিক্ষার্থীরা শাফিলকে চিকিৎসার জন্য নগদ ১ লাখ টাকা প্রদান করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রফেসর ড. মোঃ হায়দার আলী বিশ্বাস, ডাঃ মোঃ ইনামুল কবীর, ডাঃ শেখ আবু শাহীন, সহকারী অধ্যাপক মোঃ সিরাজুল ইসলাম, ব্যাংক কর্মকর্তা মোঃ তৌহিদুল ইসলাম, শামীম আহমেদ ও মোঃ মশিউল হক।

থাইল্যান্ড যাত্রার আগে শাফিলের বাসায় বিদায় জানাতে আসেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি মিনহাজুল আবেদীন সম্পদ।

এ সময় মিনহাজুল আবেদীন সম্পদ বলেন, গত ৫ আগস্ট দেশে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটেছে। নিজেদের সর্বোচ্চ ত্যাগ ও রক্তের বিনিময়ে স্বৈরাচার ও ভারতীয় আধিপত্যবাদ, সন্ত্রাস-দুর্নীতি ও লুটপাটমুক্ত এক নতুন বাংলাদেশ গড়ে তোলার নতুন দরজা খুলে দিয়েছে ছাত্র-জনতা। পুলিশ ও অস্ত্রধারী আওয়ামী সন্ত্রাসীদের নির্বিচার গুলিতে শাফিলের মতো শত শত মানুষ আহত হয়েছেন। নিহত হয়েছেন অগণিত ভাই বোন। শাফিলের চিকিৎসার জন্য আমরা অন্তর্বর্তী সরকারসহ বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে আবেদন করেছিলাম। অনেকে সহযোগিতা করেছেন। সরকারের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। আশা করি দ্রুতই সেখান থেকে সহযোগিতা পেয়ে যাবো।

গুলিবিদ্ধ শাফিল বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক দফা দাবিতে ২ আগস্ট খুলনায় আন্দোলন চরমে পৌঁছে যায়। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ছাত্র-জনতার মুখোমুখি পুলিশ। ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার এক পর্যায়ে পুলিশ রাবার বুলেট-টিয়ার শেলের পাশাপাশি ছররা গুলি ছুড়তে শুরু করে। বন্ধুদের সঙ্গে সেই আন্দোলনে অংশ নেন আব্দুল­াহ শাফিল। সম্মুখ সারিতেই ছিলেন তিনি। সেদিন বিকেলে হঠাৎ তার চোখের সামনে জ্বলে ওঠে লাল আলো। অন্ধকার হয়ে যায় তার চারপাশ। একাধিক স্পি­ন্টার আঘাত করে চোখ, মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে। বন্ধুরা উদ্ধার করে নিয়ে যায় হাসপাতালে। খুলনা ও ঢাকার একাধিক চক্ষু হাসপাতালে দেখিয়েও লাভ হয়নি তার। গুলি লাগায় বাঁ চোখ নষ্ট হয়ে গেছে সম্পূর্ণ। চোখে ও মাথায় এখনো স্পি­ন্টার রয়ে যাওয়ায় অপর চোখটিও নষ্ট হওয়ার উপক্রম প্রায়। এখন আর সীমাহীন যন্ত্রণা সহ্য করতে পারছি না যে কারণে পারিবারিক সিদ্ধান্তে চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ডে যাচ্ছি। আমার চিকিৎসার জন্য প্রায় দেড় কোটি টাকার প্রয়োজন।

শাফিল আরও বলেন, আমার বিষয়টি সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে জানানো হয়েছে। তারা অবশ্যই চেষ্টা করছে। কিন্তু বিভিন্ন প্রক্রিয়ার কারণে সেটা দেরি হচ্ছে। আজ ৩৬ দিন ধরে আমি চোখের যন্ত্রণা নিয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেরাচ্ছিলাম। আমার যন্ত্রণা পরিবার সহ্য করতে না পেরে তাদের অর্থায়নে এবং শ্রদ্ধেয় ভাইয়েরাসহ দেশ-বিদেশের ভাই এবং আপুদের সাহায্য সহযোগিতায় আমি ও আমার পরিবারের সদস্যরা সোমবার থাইল্যান্ডের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। রাষ্ট্রের কাছে আমার একটাই আকুতি বিষয়টি খুবই সেনসেটিভ যত দেরি হবে তত খারাপের দিকে যাবে। আহতদের চিকিসার বিষয়টি যেন অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দেখা হয়।

সম্পৃক্ত পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button