অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে খোলা চিঠি: সাংবাদিক সুরক্ষা আইন এখন সময়ের দাবি

✍️  আব্দুল্লাহ আল মামুন: একটি দেশের সভ্যতা, উন্নয়ন, গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রা এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ—সর্বক্ষেত্রেই সাংবাদিকদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। তাঁরা “জাতির বিবেক” হিসেবে সমাজকে পথ দেখান এবং রাষ্ট্রের প্রতিটি কাজের স্বচ্ছতা নিশ্চিতে অতন্দ্র প্রহরীর মতো কাজ করেন।

🔹গৌরবময় ভূমিকার বিপরীতে নির্মম বাস্তবতা
কিন্তু এই গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকার বিপরীতে তাদের প্রাপ্তি কী? কোনো প্রাতিষ্ঠানিক সুরক্ষা আইন নেই, নেই কোনো বিশেষ ভাতা বা রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি। উল্টো, সত্য প্রকাশে বাধা দিতে দুটি আইনকে সাংবাদিকদের দমনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করার সুযোগ তৈরি হয়েছে:
১. ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন (বর্তমান সাইবার নিরাপত্তা আইন) এবং
২. চাঁদাবাজির হয়রানিমূলক মামলা।
সাংবাদিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে তার সত্যতা যাচাইয়ের আগেই মামলা এবং অনেক ক্ষেত্রে অতি উৎসাহী হয়ে গ্রেফতারের ঘটনা ঘটছে। অথচ দেশের আইনেই বলা আছে, আদালতে দোষী সাব্যস্ত না হওয়া পর্যন্ত কাউকে অপরাধী হিসেবে গণ্য করা বা হয়রানি করা যাবে না।
বিচারহীনতার সংস্কৃতি ও সরকারের ভূমিকা
দুঃখজনকভাবে, সাংবাদিকদের ওপর নির্যাতন, গুম, খুন এবং মিথ্যা মামলার এই ধারা বিগত সরকারের আমলেও ছিল, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়েও এর অবসান ঘটেনি। এটি কোনো দলীয় সরকারের ব্যর্থতা নয়, বরং রাষ্ট্রের একটি প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা হিসেবেই প্রতিষ্ঠা পেয়েছে।

🔹এখান থেকেই সরকারের কাছে আমাদের প্রশ্ন:
যদি সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য ন্যূনতম সুরক্ষাই নিশ্চিত করা না যায়, তবে দমনমূলক আইনের অধীনে তাদের গ্রেফতার করার নৈতিক অধিকার রাষ্ট্রের থাকে কি? স্বাধীনতার পর এতগুলো বছর পেরিয়ে গেলেও কেন একটি “সাংবাদিক সুরক্ষা আইন” বাস্তবায়ন করা সম্ভব হলো না? রাষ্ট্র কি চায়, সাংবাদিকরা মুখে কুলুপ এঁটে দুর্নীতি ও অনিয়মের নীরব দর্শক হয়ে থাকুক?
সাংবাদিকতা মানে সমাজের দর্পণ, জাতির জাগ্রত বিবেক। শুধু সরকারের আশ্বাসের বাণী শুনে ঘুমিয়ে থাকা তাদের কাজ নয়।
🔹আমাদের সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব: রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশের মাধ্যমে সুরক্ষা আইন
যেহেতু রাজনৈতিক দলগুলো অতীতে নিজেদের স্বার্থে সাংবাদিকদের সুরক্ষার বিষয়টি এড়িয়ে গেছে এবং ভবিষ্যতেও তাদের কাছ থেকে નક્কার কোনো প্রতিশ্রুতির আশা করা কঠিন, তাই আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছেই এই ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানাই।
আমরা রাষ্ট্রপতির বিশেষ অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে অবিলম্বে “সাংবাদিক সুরক্ষা আইন” প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন চাই।

🔹এই আইনের পাশাপাশি যা নিশ্চিত করতে হবে:
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধানকে এই বিষয়ে সরাসরি দায়িত্ব গ্রহণ করতে হবে এবং নিম্নোক্ত পদক্ষেপগুলো নিশ্চিত করতে হবে:

১. বিগত দিনে সাংবাদিকতা করতে গিয়ে নিহত, আহত ও গুমের শিকার সকল সাংবাদিকের পরিবারকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ ও রাষ্ট্রীয় সহায়তা প্রদান করা।
২. সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সকল হয়রানিমূলক ও মিথ্যা মামলা বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনার মাধ্যমে অবিলম্বে প্রত্যাহার করার উদ্যোগ গ্রহণ করা।

ইতিহাস গড়ার এই সুযোগ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সামনে। সাংবাদিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার মাধ্যমে আপনারা কেবল একটি পেশার মানুষকে রক্ষা করবেন না, বরং একটি গণতান্ত্রিক, স্বচ্ছ ও দুর্নীতিমুক্ত রাষ্ট্র গঠনের ভিত্তি স্থাপন করে যাবেন। এই দাবি পূরণ না হলে সত্যের কণ্ঠ রুদ্ধ হবে, যা প্রকারান্তরে রাষ্ট্রকেই দুর্বল করে ফেলবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button