মহিবুল্লাহ চৌধুরী: মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার বড়টিয়া ইউনিয়নে ফুলহারা আঞ্চলিক উচ্চ বিদ্যালয়ে নানা দুর্নীতি ও জালিয়াতের মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শিল্পী আক্তারের অপসারণের দাবিতে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছে স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষার্থীও অভিভাবকবৃন্দ।
গত বুধবার (২০ নভেম্বর) সকালে স্কুলের মাঠে ঘন্টাব্যাপি এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
জানা যায়, ২০১০ সালে সহকারী শিক্ষক হিসেবে শিল্পি আক্তারের চাকরি এমপিওভূক্তি হয়। এরপরেই স্বামী বড়টিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক ও স্কুলের ৬ বারের এডহক কমিটির সদস্য সাইদুর রহমান মোল্লার ক্ষমতার দাপটে ২০১৩ সালেই হয়ে যায় স্কুলের প্রধান শিক্ষক। যদিও মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক অধীদপ্তরের আইনে সুস্পষ্ট বলা ছিলো কোনো সহকারী শিক্ষক প্রধান শিক্ষক হতে হলে তার প্রথম এমপিওভূক্তি থেকে ১০ (দশ) বছরের যোগ্যতার প্রয়োজন হবে। অধ্যাদেশকে বৃদ্ধাংগলি দেখিয়ে ক্ষমতার দাপতেই প্রধান শিক্ষক হয়ে যান।
প্রধান শিক্ষক হওয়ার পরেই শিক্ষার্থীদের ভর্তি ফি, বার্ষিক সেশন ফি, অতিরিক্ত আদায়কৃত ফরম ফিল আপ ফি, ১০ বছরের শিক্ষার্থীদের বেতন ও উপবৃত্তির টাকাসহ বিদ্যালয়ের অন্যান্য আয়ের কোন টাকাই তিনি বিদ্যালয়ের ব্যাংক হিসাবে জমাদান করেন নাই। এছাড়াও বিজ্ঞানাগারের যন্ত্রাংশ ক্রয়, মেরামত ও সংস্কারসহ নানাভাবে টাকা হাতিয়ে নেন তিনি। স্কুলের গাছ বিক্রির টাকাও মেরে দেন এই প্রধান শিক্ষক। সব মিলিয়ে প্রায় ১ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ এনে স্থানীয়রা ও বিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষকরা জেলা শিক্ষা অফিসার, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ জমা দেয়।
যার পরিপেক্ষিতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও আঞ্চলিক উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি আমিনুল ইসলাম তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। সদস্যরা হলেন- উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার, উপজেলা কৃষি অফিসার, উপজেলা মৎস অফিসার।
এরপর গত ৮ অক্টোবর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার উপজেলা পরিষদ হলরুমে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক শিল্পী আক্তারের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের তদন্ত কার্য পরিচালনা করেন।
প্রধান শিক্ষক শিল্পী আক্তারের বিরুদ্ধে আনীত অনিয়মের বিরুদ্ধে এলাকাবাসীর করা পিটিশনের তদন্ত কমিটির প্রধান ঘিওর উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা পারবতী পাল এ বিষয়ে বলেন, খুব দ্রুত তদন্তের কাজ এগিয়ে যাচ্ছে । দুই একদিনের মধ্যেই প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।
এবিষয়ে স্কুলের সহকারি শিক্ষক আয়শা আক্তার বলেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকার থাকায় আমরা কথা বলতে পারি নাই এই স্কুলের সভাপতি শুধু প্রধান শিক্ষকের পরিবার থেকেই আসে। বিগত বছরগুলোতে ওনার ভাসুর সাবেক উপজেলা আ.লীগের সমাজ কল্যাণ সম্পাদক শাহজাহান মজনু ছিল এর পরে প্রধান শিক্ষকের হাজবেন্ড বড়টিয়া ইউনিয়ন আ.লীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক সাইদুর মোল্লা সভাপতি হয়ে আসছিল পর পর ৬বার। তারা দুজনে মিলে নানা দুর্নীতি অনিয়মের সাথে জড়িত। আর আমাদের চাকরি হয় ২০০৪ সালে। এতোদিন কোন সমস্যা হয়নাই এখন শিল্পি আক্তার বলছে যে আমরা নাকি সার্টিফিকেট জাল করে চাকরিতে এসেছি। এতোদিন আমাদের চাকরি নিয়ে কোন সমস্যা হয়নি কিন্তু তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করায় সে কিছু মিডিয়া দিয়ে তা প্রচার করে আমাদের হয়রানি করার চেষ্টা করলে আমরা ঘিওর থানায় তার বিরুদ্ধে মামলা করি। আর আমাদের চাকুরির সব বৈধ কাগজপত্রও রয়েছে। তাই আমরা তার স্থায়ী বহিস্কার চাই।
৪নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মিজানুর রহমান বলেন, আমাদের অভিযোগ হচ্ছে প্রধান শিক্ষক শিল্পি আক্তারের অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরেুদ্ধে। একজন সহকারি শিক্ষক থেকে প্রধান শিক্ষক হতে কমপক্ষে যোগ্যতা লাগে ১২ বছর। সেখানে ওনি দুই বছর সাত মাসে প্রধান শিক্ষক হয়। দলীয় প্রভাব খাটিয়ে ওনি প্রধান শিক্ষক হয়ে যায়। শুধু তাই নয় আবুল কাশেম নামক একজন শিক্ষক নিয়োগ প্রদান করে তার এমপিওর টাকা বাবদ ২ বছরের বেতন সহ নগদ দুই লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা প্রধান শিক্ষক আত্নসাৎ করেছে।
স্কুলের নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী সিয়াম হোসেন বলেন, আমাদের প্রধান শিক্ষক শিল্পি আক্তারের আচরন খুবই খারাপ। সে ছাত্র ছাত্রীদের সাথে খারাপ আচরন করে।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক শিল্পি আক্তার এসব অভিযোগ অস্বিকার করে বলেন, তারা যে সমস্ত অভিযোগ করছে তার কোন সত্যতা নেই।