জহিরুল ইসলাম শিবলু, লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি: স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার কবলে লক্ষ্মীপুরের লাখ-লাখ মানুষ। খাল গুলোর পানি বৃদ্ধি পেয়ে ইতোমধ্যেই তলিয়ে গেছে জেলার অধিকাংশ এলাকা। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে লাখ-লাখ বানভাসি। এসব এলাকার গ্রামীণ সব রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে বন্যায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। সারাদেশ থেকে ত্রাণ ও উদ্ধার কর্মীরা লক্ষ্মীপুরের পাঁচটি উপজেলায় প্রবেশ করলেও এখনো ত্রাণ পাচ্ছেন না পানিবন্দি হাজার-হাজার মানুষ। পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে এইসব নারী-শিশু, বৃদ্ধসহ সববয়সি মানুষ।
জানা গেছে, স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে আশ্রয়কেন্দ্র গুলোতে সরকারি ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হলেও প্রত্যন্ত অঞ্চলের বন্যা কবলিত মানুষের মাঝে এখনো কোনো ত্রাণ সহায়তা পৌঁছায়নি। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সংগঠনের উদ্যোগ ত্রাণ পৌঁছানোর চেষ্টা চলছে, তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় কম বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
এমন পরিস্থিতিতে বন্যার্ত অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আকুতি জানিয়েছেন হাজার-হাজার বানভাসি পরিবার।
লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন, আবদুর রহমান, দেলোয়ার হোসেন ও পৌর শহরের বাসিন্দা জামাল উদ্দিন, আলমগীর, ফরিদ উদ্দিন বলেন, সদর উপজেলা ও পৌরসভার প্রায় সব এলাকা বন্যায় প্লাবিত। কিন্তু বিষয়টি সেভাবে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনায় আসেনি। তাঁরা আরও বলেন, রহমতখালী খালের পানি বৃদ্ধি পেয়ে বন্যার পানিতে তলিয়ে থাকা অনেক গ্রামগুলোতে এখনো কোনো ত্রাণ সহায়তা পৌঁছায়নি। খাবার ও বিশুদ্ধ পানির চরম সংকট দোকানপাটেও তেমন খাবার সামগ্রী নেই। থাকলেও দাম অনেক বেশি নেওয়া হচ্ছে। গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি হচ্ছে প্রায় দুই তিন গুণ বেশি দামে। এছাড়াও লক্ষ্মীপুর বাজারের কিছু অসাধু ব্যবসায়ী বর্তমানে দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। এতে সাধারণ মানুষ জিম্মি হয়ে পড়েছেন। এসব বিষয়ে তদারকি ও পানিবন্দিদের পর্যাপ্ত ত্রাণ সহায়তা দেওয়া দরকার।
মঙ্গলবার দুপুরে লক্ষ্মীপুর পৌর শহরের, জেবি রোড, শিশু পার্ক, ডিবি রোড, আইডিয়াল কলেজ এলাকা ও সদর উপজেলার বাঙ্গাখা, বশিকপুর, দত্তপাড়া, দিঘলী, টুমচর, লাহারকান্দিসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, পানিবন্দী হয়ে পড়েছে এসব এলাকার বাসিন্দারা। পানি বেড়েই চলেছে এসব এলাকায়।
বর্তমানে লাখো মানুষ পানিবন্দি এসব এলাকায়। এছাড়াও জেলার রামগতি, কমলনগর, রায়পুর এবং রামগঞ্জেরও একই পরিস্থিতি। এসব এলাকার পানিবন্দি লোকজন ছুটে চলছে আশ্রয়কেন্দ্রের দিকে। কোনো কোনো আশ্রয়কেন্দ্র পরিপূর্ণ হয়ে গেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নাহিদ-উজ-জামান বলেন, সোমবারের তুলনায় মঙ্গলবার জেলায় পানি বেড়েছে ৬ থেকে ৮ ইঞ্চি। প্রচুর পানি নামছে। কিন্তু এর পরও বন্যার উন্নতি নেই। এখনো বন্যার অবনতি হচ্ছে। বন্যা পরিস্থিতি উন্নত হতে আরও কয়েক দিন সময় লাগবে।
এদিকে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসন। যদিও প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ পর্যন্ত যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে তা পর্যাপ্ত নয় বলেও স্বীকার করেন জেলা প্রশাসক সুরাইয়া জাহান। মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) দুপুরে জেলা প্রশাসক সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির বিশেষ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে বরাদ্দকৃত নগদ অর্থ ও চালের পরিমাণ তুলে ধরা হয়।
জেলা প্রশাসক জানান, লক্ষ্মীপুরে সাত লাখ ২৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। এ পর্যন্ত আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে ৩০ হাজার মানুষ। বন্যা দুর্গত এলাকার বাসিন্দাদের জন্য ৭০০ টন চাল এবং নগদ ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৫০৯ টন চাল ও ১৬ লাখ টাকা ত্রাণ হিসেবে বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া শিশু খাদ্যের জন্য পাঁচ লাখ ও গো-খাদ্যের জন্য পাঁচ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়।ডিসি বলেন, বন্যা কবলিত এলাকায় এই বরাদ্দ পর্যাপ্ত নয়। এজন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে আরও ৩০ লাখ টাকার চাহিদা প্রেরণ করা হয়েছে।
সভায় বন্যা ব্যবস্থাপনা ও বন্যার্তদের সর্বাত্মক সহায়তায় সমন্বিত কার্যক্রম গ্রহণ করার কথা জানানো হয়। এ সময় যে কোনো সহায়তায় জেলা প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করার আহবান জানান জেলা প্রশাসক।