খুলনার খালিশপুরে তিন বছর ধরে তালাবদ্ধ ৩০টি দোকান খুলে দিলো বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীরা

জাফর ইকবাল অপু: খুলনা নগরীর খালিশপুর জুট ওয়ার্কার্স ইনস্টিটিউটের মডেল শপিং কমপ্লেক্সের ৩০টি দোকান গত তিন বছর ধরে পাটকল শ্রমিক নেতাদের নেতৃত্বে জোরপূর্বক বন্ধ করে দেয়া হয় বলে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন। এতে করে তারা পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। অবশেষে দোকানের তালা বৃহস্পতিবার খুলে দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা।
এদিকে বিগত দিনে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হলে আদালত দোকানগুলো আগামী এক মাসের মধ্যে দোকানগুলো খুলে দেয়ার জন্য খুলনার জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দিলেও আ’লীগ নেতাদের চাপের মুখে তা খোলা হয়নি। গত ৭ আগস্ট বিচারপতি কে এম কামরুল কাদির ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলী বেঞ্চ রিট পিটিশনের শুনানী শেষে এ আদেশ দেন। রিট পিটিশনে ৬ জনকে বিবাদী করা হয়। এর মধ্যে ২নং বিবাদী হলেন জেলা প্রশাসক। তাকেই আদালত বাদীগণের দোকানগুলো যারা অবৈধভাবে জোরপূর্বক বেআইনীভাবে মূল ফটকে তালা লাগাইছে। তা খুলে দিয়ে বাদীগণের নিকট শান্তিপূর্ণভাবে বুঝিয়ে দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। ক্ষতিগ্রস্ত দোকানদারদের মধ্যে সোহেল মাহমুদ পলাশ হাই কোর্টে এই রীট পিটিশন দাখিল করেন (নং-৮৯৫৯/২২)। গত ১ আগস্ট’২২ তিনি রিট পিটিশন দাখিল করেন বলে জানান বাদীর আইনজীবী এড. গাজী মুসতাক আহমেদ। তিনি বলেন, আদালতের আদেশ রিসিভ করার পর এক মাসের মধ্যে দোকানগুলো খুলে দেয়ার জন্য জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু রাজৗনৈতিক চাপে তারা দোকান খুলতে পারেননি।
ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম পলাশ জানান, গত ২০২১ সালের ২০ এপ্রিল দিবাগত রাত ২টার দিকে শ্রমিক নেতা মুরাদ হোসেন ও হুমায়ুন কবিরের নেতৃত্বে একদল শ্রমিক নেতা তাদের মডেল শপিং কমপ্লেক্সের গেট তালা দিয়ে দেয়। এমন কি তালা যাতে না খুলতে পারে এ জন্য সিলগালা করা হয়। অনেক দপ্তরে এ ব্যাপারে ছোটাছুটি করলেও তালা খোলার কোন ব্যবস্থা হয়নি। এতে করে তারা পরিবার পরিজন নিয়ে তারা মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
অবশেষে ছাত্ররা এসে বৃহস্পতিবার তাদের দোকান খুলে দেয়ায় তারা চিরকৃতজ্ঞ বলে জানান। অপর ব্যবসায়ী ডাঃ মোঃ নজরুল ইসলাম সজল বলেন, নগরীর খালিশপুর জুট ওয়ার্কার্স ইনস্টিটিউটের মডেল শপিং কমপ্লেক্সের ব্যবসায়ী তারা। এ কমপ্লেক্সে বিভিন্ন ধরনের ৩০টি দোকান রয়েছে তাদের। দীর্ঘ দিন ধরে তারা দোকান ঘর ভাড়া নিয়ে ব্যবসা বাণিজ্য পরিচালনা করে আসছে। বিজেএমসি সব জুট মিল বন্ধ করে দেয়। এরপর পাটকল শ্রমিক সংগঠন দ্বারা পরিচালিত খালিশপুর জুট ওয়ার্কার্স ইনস্টিটিউটের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় শ্রমিক নেতা শাহানা, হুমায়ুন, মুরাদসহ কতিপয় ব্যক্তি এসে দোকান ঘরের জামানত ও ভাড়া অতিরিক্ত দাবি করে এবং বিরক্ত করতে থাকে। এতে বাধ্য হয়ে তারা জেলা প্রশাসক বরাবর একটি আবেদন করেন। এমন কি মাকের্টের জমির মালিকানা নিয়ে সমস্যা থাকায় তারা দোকান ঘরের ভাড়া আদালতে জমা দিয়ে যাচ্ছেন। এরপর চক্রটি ক্ষুব্ধ হয়ে মার্কেটে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে। অনেক চেষ্টা করে দীর্ঘ তিন বছরেও তালা খুলতে পারিনি। এতে তাদের কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। অবশেষে বৃহস্পতিবার ছাত্ররা এসে তালা খুলে দেয়।
এদিকে গত ১৬ আগস্ট ২১ ক্ষতিগ্রস্ত দোকানদার শরিফুল ইসলাম জেলা প্রশাসকের নিকট আবেদন করেছেন। আবেদনে তিনি উলে­খ করেন, তারা মার্কেটের ৪৮ জন দোকানদার বৈধভাবে সরকারের নিকট থেকে বরাদ্দ পেতে চায়। ইতোমধ্যে তারা জেলা প্রশাসকের নিটক দোকান ঘরের প্রতিমাসের ভাড়া জমা দিয়ে আসছে। তারই ধারাবাহিকতা বজায়ে রাখতে চায় এসব ব্যবসায়ীরা। কিন্তু সাবেক প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান, সাবেক মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক, সাবেক এমপি এস এম কামাল হোসেন, আ’লীগ নেতা আশরাফ, নান্নু, জিয়ার বাধার মুখে তারা তালা খুলতে পারেননি। ভিতরে থাকা মালামাল সব পচে গলে নষ্ট হয়ে যায়। ৫ আগস্টের  পর নির্যাতিত ব্যবসাযীরা বিভিন্ন মহলে নতুন করে দৌড়-ঝাঁপ শুরু করে। তারই ধারাবাহিকতায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার সময় গিয়ে ব্যবসায়ীদের নিয়ে ওই মার্কেটের তালা খুলে দেন।
এ সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র প্রতিনিধি রাউফুল নাছিম শিশির বলেন, আমরা ছাত্র সমাজ যেখানে নির্যাতন ও বৈষম্য দেখছি, সেখানেই যাচ্ছি। এ নির্য়াতনে শিকার মানুষদের রক্ষা করে চলেছি। তারই ধারাবাহিকতায় মডেল শপিং কমপ্লেক্সের নির্যাতিন ৩০ জন দোকানদের ন্যায্য দাবি পূরণ করতে বৃহস্পতিবার সেখানে যাই। তাদের বন্ধ করে রাখা দোকান খুলে দেয়া হয়। মানবেতর জীবন যাপন করা ব্যবসায়ীরা দোকান খুলতে পেরে খুব খুশি। তারা আমাদের জন্য প্রাণ খুলে স্রষ্টার নিকট দোয়া করেছে। এটাই আমাদের জন্য বড় পাওয়া।

সম্পৃক্ত পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button