সংগ্রাম দত্ত: সিলেট বিভাগের প্রবেশদ্বার হবিগঞ্জ জেলায় রয়েছে পর্যটনের অপার সম্ভাবনা। এ জেলায় পাহাড়, হাওর, নদী, চা ও রাবার বাগান, বনজ ও প্রাকৃতিক সম্পদ, প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনসহ খাসিয়া, টিপরা উপজাতি এবং মণিপুরী সম্প্রদায়ের বসবাস রয়েছে । পৃথিবীর বৃহত্তম গ্রাম হচ্ছে বানিয়াচং যা’ এ জেলায় অবস্থিত। এ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ২৪ টি দৃষ্টিনন্দন চা বাগান রয়েছে।
সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান : জেলার চুনারুঘাট উপজেলার পাইকপাড়া ইউনিয়নের রঘুনন্দন পাহাড়ে অবস্থিত। উদ্যানের কাছাকাছি ৯টি চা বাগান আছে। উদ্যানের পশ্চিম দিকে সাতছড়ি চা বাগান এবং পূর্ব দিকে চাকলাপুঞ্জি চা বাগান অবস্থিত। উদ্যানের অভ্যন্তরভাগে টিপরা পাড়ায় একটি পাহাড়ী উপজাতির ২৪টি পরিবার বসবাস করে। এই ক্রান্তীয় ও মিশ্র চিরহরিৎ পাহাড়ী বনভূমি ভারতীয় উপমহাদেশ এবং উন্দো-চীন অঞ্চলের সংযোগস্থলে অবস্থিত।
দেব জমিদার বাড়ি: জেলার মাধবপুর উপজেলার অন্তর্গত বাড়াচান্দুরা গ্রামে অবস্থিত এক ঐতিহাসিক জমিদার বাড়ি। স্থানীয়দের কাছে এই বাড়িটি “দেব বাড়ি” নামে সুপরিচিত জমিদার বাড়িটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন জমিদার রাজেন্দ্র চন্দ্র দেব।
শংকর পাশা শাহী মসজিদ: হবিগঞ্জ সদর উপজেলার রাজিউড়া ইউনিয়নের শংকরপাশা গ্রামে অবস্থিত ।
এটি পঞ্চদশ শতাব্দীতে নির্মিত প্রাচীন স্থাপত্যের একটি মসজিদ।
কালার ডুবা পর্যটন কেন্দ্র:
হবিগঞ্জ সদর উপজেলায় কালারডুবা হাওড় অবস্থিত । জেলা শহরের কাছাকাছি কোন বিনোদনকেন্দ্র না থাকায় বিকেলে হাজারো মানুষ জড়ো হন এই হাওড়পাড়ে। দর্শনার্থীদের বসে খাওয়ার জন্য এখানে তৈরি করা হয়েছে ছোট ছোট ঘর। পানি ভেসে বেড়ানোর জন্য রয়েছে নৌকা।
কমলা রানীর দিঘী: জেলার বানিয়াচং উপজেলায় অবস্থিত একটি বৃহদায়তনের জলাধার। ৬৬ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত এই দীঘিটি আয়তনের দিক থেকে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম জলাধার হিসাবে স্বীকৃত। এই দীঘিটি খনন করান স্থানীয় সামন্ত রাজা পদ্মনাভ।
চাকলা পুঞ্জি চা বাগান: এটি ব্রিটিশ চা কোম্পানি ডানকান ব্রাদার্সের একটি চা বাগান। এখানে পর্যটনের জন্য অনেক সুন্দর সুন্দর ভিউ রয়েছে।
লালচাঁন্দ চা বাগান: এই চা বাগানে একটি দৃষ্টিনন্দন ডাক-বাংলো রয়েছে। এটি হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলায় অবস্থিত।
দি প্যালেস লাক্সারি রিসোর্ট: হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার পুটিজুরী পাহাড়ে ৫ তারকা মানের দ্যা প্যালেস রিসোর্ট অবস্থিত। রিসোর্টের চারপাশে সবুজ পাহাড়ের সমারোহ আর মেঘের লুকোচুরি খেলা মনকে সহজেই প্রফুল্য করে তোলে। প্রায় ১৫০ একর পাহাড়ি ভূমিতে ৩০ হাজার গাছ, ঝর্ণা, চা বাগান, রাবার বাগান দিয়ে সাজিয়ে পরিপূর্ণ করে দ্যা প্যালেস রিসোর্টের ভিলা গুলো গড়ে তোলা হয়েছে। চমৎকার নির্মাণশৈলী ও মনোরম পরিবেশের এই রিসোর্ট সত্যিকার অর্থেই যেন এক রাজপ্রাসাদ। হানিমুন কিংবা পরিবার নিয়ে নিরিবিলিতে ছুটির সময় কাটাতে চাইলে দ্যা প্যালেস লাক্সারি রিসোর্ট একটি অতুলনীয় স্থান।
বিথঙ্গল আখড়া: বিথাঙ্গল বড় আখড়া যা’ বিতঙ্গল আখড়া নামেও পরিচিত । এটি জেলার বানিয়াচং উপজেলাতে অবস্থিত । এটি বৈষ্ণব ধর্ম-অবলম্বীদের জন্য একটি অন্যতম তীর্থস্থান । এটি ষোড়শ শতাব্দীর দিকে নির্মিত একটি আখড়া ।
বানিয়াচং প্রাচী রাজবাড়ির ধ্বংসাবশেষ: জেলা শহর থেকে ১৮ কিলোমিটার দূরে বানিয়াচং উপজেলায় প্রাচীরাজ বাড়ির ধ্বংসাবশেষ একটি দৃষ্টিনন্দন স্থান। এল আর হাইস্কুলের কাছে দালানের ধ্বংসাবশেষ আজও বিদ্যমান ।
বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্র: জেলায় নবীগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত একটি প্রাকৃতিক গ্যাসক্ষেত্র।এটি মার্কিন বহুজাতিক কোম্পানি শেভরন কর্তৃক নিয়ন্ত্রণাধীন একটি প্রতিষ্ঠান। বিবিয়ানা গ্যাস ফিল্ড দেশের সবচেয়ে বড় গ্যাস ফিল্ড। শুধু বাংলাদেশ নয়,এশিয়া মহাদেশের বিচারেও এটি সর্ববৃহৎ গ্যাস ক্ষেত্র।
বিবিয়ানা থেকে দেশের দৈনন্দিন চাহিদার প্রায় ৪৫ শতাংশ জ্বালানী সরবরাহ করা হয়ে থাকে। ১৯৯৮ সালে গ্যাসক্ষেত্রটি কসবা ও দীঘলবাক ইউনিয়ন জুড়ে আবিষ্কৃত হলেও বর্তমানে এটির আরো চারটি এলাকা নাদামপুর, করিমপুর কাকুরা, পিরিজপুর এলাকা জুড়ে বিস্তৃতি লাভ ঘটেছে। এখানে একটি কেপিআই শ্রেণির স্থাপনা আছে।
উল্লেখ্য, এশিয়ার বৃহত্তম এই গ্যাসক্ষেত্রে অনুমিত গ্যাসের মোট মজুত প্রায় ৫ টি.সি.এফ যার মধ্যে উত্তোলনযোগ্য মজুত ২.৪ টি.সি.এফ।
বাওয়ানী টি স্টেট: নবীগঞ্জ উপজেলার পানিউমদা ইউনিয়নে অবস্থিত বাওয়ানী চা বাগান। এখানে রয়েছে দেখার মত আকর্ষণীয় পর্যটন স্থান।
মশাজানের দিঘী: জেলা শহরের পাঁচ মাইল দক্ষিণে মশাজান গ্রামে এই দিঘীর অবস্থান। দিঘীটি স্থানীয় ভাবে মশাজানের দিঘী নামে পরিচিত। ষোল’শ শতকের প্রথম দিকে দুইশত একর সীমানার মধ্যভাগে অবস্থিত এ দীঘির প্রতিষ্ঠাতা আধ্যাত্নিকপুরুষ খ্যাত সৈয়দ গোয়াস উদ্দীন। তিনি ছিলেন মধ্য যোগীয় মহাকবি সৈয়দ সুলতানের জ্যেষ্ঠসন্তান এবং সিলেট ও তরফ বিজয়ী সিপাহসালার সৈয়দ নাসির উদ্দিন’র ষষ্ঠ অধস্থনপুরুষ। দৃষ্টিনন্দন ও সুবিশাল এ দীঘিটি বাংলাদেশের দর্শনীয় স্থান হিসাবে স্বীকৃত।
শ্রী শ্রী শচীঅঙ্গ ধাম: এই ধর্মস্থানটি হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার জয়পুর গ্রামে অবস্থিত। এখানে বারো মাসে তের পার্বণ লেগেই থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় এবারো এই তীর্থভূমিতে আসন্ন শারদীয় দুর্গোৎসব পালিত হবে। শ্রী শ্রী শচীঅঙ্গন ধাম শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর মায়ের বাড়ি।
নিরিবিলি পার্ক: জেলা শহরের নিরিবিলি এলাকায় অবস্থিত এই পার্কটি পিকনিকের জন্য একটি জনপ্রিয় স্পট। পার্কে বিভিন্ন ধরনের গাছ এবং ফুল রয়েছে। এটি একটি বিকেল কাটানোর জন্য একটি সুন্দর জায়গা করে তুলেছে।
লক্ষী বাওড় জলাবন: লক্ষ্মী বাওড় জলাবন বা লক্ষ্মী বাওড় সোয়াম্প ফরেস্ট দেশের সর্ববৃহৎ মিঠাপানির জলাবন এবং পাখির অভয়ারণ্য। যা’ হবিগঞ্জের বানিয়াচং এ অবস্থিত। দৈর্ঘ্য ও প্রস্থে প্রায় সমান এই বনের আয়তন সাড়ে ৩ কিলোমিটার এবং আকার ও আয়তনের ব্যাপ্তিতে এটি রাতারগুল জলাবন অপেক্ষাও অনেক বড়।
শাহাজীবাজার রাবার বাগান: জেলা শহর থেকে ৩০কিলোমিটার দক্ষিণে, মাধবপুর উপজেলা পরিষদ হইতে ১৫কিলোমিটার উত্তরে, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের দরগা গেইট হইতে ১ কিলোমিটার পূর্বে ও শাহজীবাজার রেলওয়ে ষ্টেশন হইতে ১কিলোমিটার দক্ষিনে শাহজিবাজার রাবার বাগান অবস্থিত।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ১৯৮০ সালে বাংলাদেশ বনশিল্প উন্নয়ন কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনায় প্রায় ২ হাজার ১০৪ একর পাহাড়ি জমির ওপর বাগানটি স্থাপিত হয়।
তেলিয়াপাড়া স্মৃতিসৌধ:
হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার তেলিয়াপাড়া চা বাগানের ম্যানেজার বাংলোর পাশে তেলিয়াপাড়া স্মৃতিসৌধ অবস্থিত। ১৯৭১ সালের ৪ এপ্রিল এখানে স্বাধীনতাযুদ্ধের
প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ঊর্ধ্বতন ২৭ সেনা কর্মকর্তার উপস্থিতিতে এ বৈঠকেই দেশ স্বাধীন করার শপথ এবং যুদ্ধের রণকৌশল গ্রহণ করা হয়। মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গন ভাগ করা হয় ১১ সেক্টর ও তিনটি ব্রিগেডে। অস্ত্রের জোগান, আন্তর্জাতিক সমর্থনসহ গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় এ সভায়।
রঘুনন্দন পাহাড়: জেলার চুনারুঘাট ও মাধবপুর উপজেলার পাহাড়ি এলাকায় রঘুনন্দন রেঞ্জের অবস্থান। প্রায় ১০৬৫০.৩৭ একর জমির অধীনে শালটিলা, শাহজিবাজার, শাহপুর ও জগদীশপুর বিট রয়েছে। টিলার পর টিলায় রয়েছে নানা প্রজাতির গাছ। প্রতি বছর নতুন করে নানা প্রজাতির গাছের চারা রোপণ করা হচ্ছে। এতে ধীরে ধীরে গভীর অরণ্যে রূপ নিয়েছে রঘুনন্দন রেঞ্জটি।
এখানে শাল, সেগুন, আগর, গর্জন, চাপালিশ, মেহগনি, কৃষ্ণচূড়া, ডুমুর, জাম, জামরুল, সিধা জারুল, আওয়াল, মালেকাস, আকাশমনি, বাঁশ, বেত, জলপাই, তেঁতুল, বহেরা, আমলকী, হরীতকীসহ ঔষধি ও ফলের নানা প্রকার গাছ রয়েছে।
এছাড়াও এ বনে রয়েছে বানর, উল্লুক, চশমা পরা হনুমান, শিয়াল, মেছো বিড়াল, মায়া হরিণের বিচরণ। আছে নানা প্রজাতির সাপ। কাও ধনেশ, বন মোরগ, লাল মাথা ট্রগন, কাঠ ঠোকরা, ময়না, ভিমরাজ, শ্যামা, ঝুটিপাঙ্গা, শালিক, হলদে পাখি, টিয়া প্রভৃতি পাখির অবাধ বিচরণস্থল এ বন।
রেমা–কালেঙ্গা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য: এটি দেশের একটি সংরক্ষিত বনাঞ্চল এবং বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য যা জেলার চুনারুঘাট উপজেলায় অবস্থিত। এটি একটি শুকনো ও চিরহরিৎ বন এবং সুন্দরবনের পর দেশের সবচেয়ে বড় প্রাকৃতিক বনভূমি। এছাড়াও এটি দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বণ্যপ্রাণী অভয়ারণ্য এবং জীব ও উদ্ভিদবৈচিত্র্যে দেশের সবচেয়ে সমৃদ্ধ বনাঞ্চল। এ অভয়ারণ্যের আয়তন ১৭৯৫.৫৪ হেক্টর।
দেশের যে কয়েকটি প্রাকৃতিক বনভূমি এখনো মোটামু্টি ভাল অবস্থায় টিকে আছে, রেমা-কালেঙ্গা তার মধ্যে অন্যতম।
বনের মধ্যে রয়েছে সুন্দর একটি লেক। লেকের চারপাশ প্রাকৃতিক দৃশ্য। বন্য প্রাণীদের খাবার পানির চাহিদা মেটাতেই এটি তৈরি করা হয়েছে। লেকের পাশে রয়েছে একটা ওয়াচ টাওয়ার। এখানে রয়েছে দুর্ভেদ্য জঙ্গল। এই অভয়ারণ্যে ৬৩৮ প্রজাতির উদ্ভিদ, গাছ-পালা, লতা-পাতা আছে। উদ্ভিদগুলোর মধ্যে রয়েছে-আওয়াল, সেগুন, কাঁকড়, নেউড়, হারগাজা, গন্ধরই, হরীতকী, বহেরা, জাম ডুমুর, কাঠাল, চামকাঠাল, কাউ, কদম, রাতা, চিকরাশি, চাপালিশ, নিম, বনমালা ইত্যাদি।
আছে ৭ প্রজাতির উভয়চর প্রাণী, ১৮ প্রজাতির সরীসৃপ, ১৬৭ প্রজাতির পাখি। উল্লেখযোগ্য পাখিগুলো হচ্ছে-ভিমরাজ, পাহাড়ি ময়না, কাও ধনেশ, বনমোরগ, ফোটা কান্টি সাতভারলা, শ্যামা, শালিক, শামুক খাওরি, টুনটুনি ইত্যাদি। ৩৭ প্রজাতির স-ন্যপায়ী প্রাণী আছে। তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য-কালো বন্যশুকর, সাদা বন্যশুকর, বানর, হনুমান, মুখপোড়া হনুমান, খরগোশ, ছোট হরিন, মেছোবাঘ, মেছোবিড়াল, বনকুকুর, রামকুত্তা প্রভৃতি।
এ অভয়াশ্রমে আছে আধা ঘন্টা, এক ঘন্টা ও তিন ঘন্টার তিনটি ট্রেইল বা পথ। প্রতিটি ছবির মতো সুন্দর আর সাজানো। অভয়ারণ্যের ভেতরে আছে সুউচ্চ একটি পর্যবেক্ষণ টাওয়ার। টাওয়ারের মাথাটি বনের উঁচু উঁচু গাছগুলোর মাথা ভেদ করে আকাশে উঁকি মেরেছে। সেখানে দাঁড়িয়ে তাই দেখা যায় বনের ভেতরের দূর-দূরান্তের দৃশ্যাবলী। টাওয়ারের নিচেই আছে আঁকাবাঁকা একটি লেক।
রেমা-কালেঙ্গা বনের ভেতরে রয়েছে চারটি আদিবাসী সম্প্রদায়ের বসবাস। ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের কয়েকটি পাড়া আছে এ বনের ভেতরেই। এছাড়াও সাঁওতাল, তেলুগু ও উড়ং আদিবাসীরও বসবাস আছে।
পৃথিবীর বৃহত্তম গ্রাম বানিয়াচং: জেলার বানিয়াচং এক সময় এশিয়া মহাদেশের বৃহত্তম গ্রাম ছিল আর তখন পৃথিবীর বৃহত্তম গ্রাম ছিল যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো, বর্তমানে শিকাগো নগর হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় বর্তমানে পৃথিবীর বৃহত্তম গ্রাম হচ্ছে বানিয়াচং। ১২০ টি পাড়া ও ৪টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত বানিয়াচং গ্রামে ১ লাখ ২০ হাজার মানুষের বসবাস।
মাকালকান্দি স্মৃতিসৌধ: জেলার বানিয়াচং উপজেলার একটি স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ভাস্কর্য। এটি মূলত: মাকালকান্দি গ্রামের গণহত্যার স্মৃতি স্মারক যা বানিয়াচং উপজেলা সদর হতে আনুমানিক ১৫ কিলোমিটার উত্তরে কাগাপাশা নামক স্থানে অবস্থিত।
১৯৭১ সালের ১৮ আগস্ট সকালে কাগাপাশা ইউনিয়নের হিন্দু অধ্যুষিত গ্রাম মাকালকান্দিতে চন্ডি মন্দিরে মনসা পূজার প্রস্তুতির সময় ৪০-৫০টি নৌকাযোগে পাকবাহিনী রাজাকারদের সহায়তায় এসে পূজারত নারী-পুরুষকে চন্ডি মন্দিরের সামনে দাঁড় করিয়ে ব্রাশ ফায়ার করলে ১৪১ জন সনাতন ধর্মাবলম্বী বাঙালি হত্যা করে। হত্যাকান্ডের পর পাক-হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকারেরা গ্রামজুড়ে নারকীয় তান্ডব চালায় – নারীদের সম্ভ্রমহানী, লুটতরাজ ও বাড়িঘরে আগুন ধরিয়ে দেয় তারা। স্বাধীনতা লাভের দীর্ঘ ৩৬ বছর পর ২০০৭ সালে গণহত্যা সংগঠিত এলাকায় মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে শহীদ ব্যক্তিদের নামের তালিকাসহ একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়। বর্তমানে এখানে সরকারি ব্যবস্থাপনায় প্রতিবছর ১৮ আগস্ট “মাকালকান্দি গণহত্যা দিবস” পালিত হয়।
ফয়েজাবাদ হিলস্ স্মৃতিস্তম্ভ: এ স্মৃতিসৌধটি জেলার বাহুবল উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে ঢাকা- মৌলভীবাজার মহাসড়কের বাহুবল উপজেলার রশিদপুর গ্যাস ফিল্ড সংলগ্ন ফয়েজাবাদ পাহাড়ে অবস্থিত। এ বধ্যভূমিতে পাক খানেদার বাহিনী প্রায় দেড়শতাধিকের উপর মুক্তিযোদ্ধাসহ অসংখ্য লোককে হত্যা করে। শহীদদের স্মরণে ২০০৫ সালে ১ একর ভূমির ওপর বধ্যভূমিতে নির্মাণ করা হয়েছে স্মৃতিস্তম্ভ