সংগ্রাম দত্ত: বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে যেসব প্রাচীন স্থাপনা মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে, নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার হারুলিয়া পুরাতন মসজিদ তারই একটি। স্থানীয়দের বয়ান অনুযায়ী, আজ থেকে ৮২৩ বছর আগে ১২০০ খ্রিষ্টাব্দে মসজিদটি নির্মাণ করা হয়। অবাক করার বিষয় হলো, এই মসজিদে একসঙ্গে ১৭ জনের বেশি মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন না!
মোগলদের রাজত্বকালে ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজির স্নেহধন্য শাইখ মুহাম্মদ ইয়ার নামের এক ব্যক্তি কেন্দুয়া উপজেলার মোজাফফরপুর ইউনিয়নের হারুলিয়া গ্রামে এই মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেন।
গ্রামের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এক গম্বুজের মসজিদটি নির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছে পোড়ামাটি, লালি, চুন, চিনি, চিটাগুড়, কষ এবং এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ। মসজিদের ভেতরের দেয়ালে ফার্সিতে লেখা শাইখ মোহাম্মদ ইয়ারের নাম এবং ১২০০ খ্রিষ্টাব্দের কথা উল্লেখ থাকায় তাকেই মসজিদটির প্রতিষ্ঠাতা মনে করা হয়।
৭ শতাংশ জমির ওপর নির্মিত মসজিদটির চার কোনায় রয়েছে চারটি পিলার; যার ওপরে রয়েছে কারুকার্য করা কলসি আকৃতির গম্বুজ। এ ছাড়া মসজিদের ছাদজুড়ে বিশাল একটি গম্বুজও রয়েছে।
মসজিদটির সামনে রয়েছে সুবিশাল জালিয়ার হাওর। হাওরসংলগ্ন এ মসজিদে মোগল আমলে মানুষজন ইবাদত-বন্দেগি করতেন। কেন্দুয়া পৌর শহর থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার পূর্বে হারুলিয়া গ্রামের এই মসজিদ দেখতে প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে মানুষজন আসেন।
মসজিদের ইমাম মাওলানা মুহাম্মদ আবদুল্লাহ বলেন, মসজিদের দেয়ালে একটি পাথর ছিল; যেখানে খোদাই করে ফার্সিতে শাইখ মোহাম্মদ ইয়ারের নাম লেখা এবং ১২০০ খ্রিষ্টাব্দ উল্লেখ করা ছিল। পরবর্তী সময়ে পাথরটি কে বা কারা চুরি করে নিয়ে যায়।
তিনি জানান, বহুকাল আগে নির্মিত মসজিদটি জরাজীর্ণ হয়ে পড়ায় মূল অবকাঠামো অক্ষত রেখে বেশ কয়েকবার সংস্কার করা হয়েছে। মসজিদের ভেতরে জায়গা কম, তাই একসঙ্গে ১৭ জন মানুষ নামাজ আদায় করতে পারেন। এ কারণে পরবর্তী সময়ে মসজিদের সামনের অংশে ছোট্ট একটি চারচালা টিনের ঘর তৈরি করা হয়েছিল। পরে সেটি ভেঙে সবার সহায়তায় একটি পাকা বেডিং নির্মাণ করা হয়েছে। সেখানে একসঙ্গে অনেক মানুষ নামাজ আদায় করতে পারেন।
ঐতিহাসিক এ মসজিদের নির্মাণশৈলী সবার নজর কাড়ে। যে কারণে প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে মানুষজন এই মসজিদ দেখতে আসেন। মসজিদটি এলাকাবাসীদের কাছে ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ।