খুলনায় স্ত্রী হত্যার দায়ে স্বামীর মৃত্যুদন্ডসহ এক লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা জরিমানা

 

খুলনা প্রতিনিধি:  বুধবার ১৫ মে খুলনা থানার মামলা নং-৪৫, তারিখ-২৭/০৮/১১, জিআর-৩৩০/১১, ধারা-নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সং-২০০৩) এর ১১(ক)/৩০ সংক্রান্তে অত্র মামলার ভিকটিম জোহরা খাতুন (২৪), স্বামী-নুরন্নবী, সাং-মতিয়ারা, থানা ও জেলা-ফেনী, এ/পি-৯/৫ বেলায়েত হোসেন সড়ক রূপসা স্ট্যান্ড রোড, থানা-খুলনা সদর, খুলনা মহানগরীকে যৌতুকের জন্য মারপিট করে মৃত্যু ঘটানোর অপরাধে অভিযুক্ত আসামী ভিকটিমের স্বামী ১) মোঃ নুরুন্নবী (২৮), পিতা-মোঃ হাদু মিয়া ওরফে আদু মিয়া, সাং-মতিয়ারা, থানা ও জেলা-ফেনী, এপি সাং-৯/৫ বেলায়েত হোসেন সড়ক, রূপসা স্ট্যান্ড রোড, থানা-খুলনা সদর, খুলনা মহানগরীর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সন্দেহাতীত ভাবে প্রমাণিত হওয়ায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল নং-৩ এর বিজ্ঞ বিচারক জনাব আঃ ছালাম খান আসামী নুরুন্নবীকে মৃত্যুদন্ডসহ ১,৫০,০০০/-(এক লক্ষ পঞ্চাশ হাজার) টাকা জরিমানার আদেশ প্রদান করেন। মামলার বিবরণী হতে জানা যায় যে, বর্ণিত মামলার এজাহারকারী মোঃ সাদ্দাম হোসেন ভিকটিম জোহরা খাতুনের ভাই। মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই (নিঃ) আসমানী খানম, খুলনা সদর থানা, কেএমপি, খুলনা।

মামলার এজাহার হতে জানা যায় যে, গত ২০০৫ সালে আসামী নুরন্নবী এর সহিত বাদী সাদ্দাম হোসেনের বোন মোছাঃ জোহরা খাতুন এর বিয়ে হয়। বিয়ের সময় আসামির পরিবার ৮০,০০০/- টাকা যৌতুক দাবী করে। এর মধ্যে যৌতুকের ৫০,০০০/- টাকা নগদ প্রদান করার পর বিবাহ সম্পন্ন হয়। আসামীর পরিবার বিয়ের পরও যৌতুকের বাকি ৩০,০০০/- টাকার জন্য দীর্ঘদিন মামলার ভিকটিম জোহরা খাতুনকে ঘরে তুলে নেয়নি। পরবর্তীতে ঘটনার ০২ বছর পূর্বে আসামীর পরিবার বাদীর বোনকে বাদীর বাড়ি হতে আসামীদের বাড়িতে নিয়ে আসে। ভিকটিম জোহরা খাতুনকে আসামীদের বাড়িতে নেওয়ার পর হতে আসামীর পরিবার পুনরায় বাদীর পিতার নিকট যৌতুকের বাকি ৩০০০০/- টাকা যৌতুক দাবী করে।

এর প্রেক্ষিতে বাদীর পিতা গত ১৩/০৭/১১, যৌতুকের বাকি ৩০,০০০/- টাকা আসামীর পরিবারকে প্রদান করলে আসামি নুরন্নবরী ১৪/০৭/১১ বাদীর ভিকটিম জোহরা খাতুন এবং তাদের ০২ বছর বয়সী ছেলে বেলালকে নিয়ে খুলনা সদর থানা এলাকার ৯/৫ বেলায়েত হোসেন সড়ক রূপসা স্ট্যান্ড রোডে জনৈক মোঃ মোশারফ হোসেন এর বাড়ির ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস শুরু করে।

ঘটনার কয়েকদিন পূর্বে বিভিন্ন সময়ে আসামী মোঃ নুরুন্নবী (২৮) তার স্ত্রী ভিকটিম জোহরা খাতুনকে তার স্ত্রীর পরিবারের কাছ থেকে এক লক্ষ টাকা যৌতুক নিয়ে আসার জন্য চাপ সৃষ্টি করে কিন্তু জোহরা খাতুন তার পিতা গরীব মানুষ তাই টাকা দিতে পারবে না জানিয়ে যৌতুকের টাকা দিতে অস্বীকার করলে। যৌতুকের দাবীতে আসামী মোঃ নুরুন্নবী প্রায়ই জোহরা খাতুনকে শারীরিকভাবে নির্যাতন এবং মারধর করতো।

এরই ধারাবাহিকতায় ২৬/০৮/১১ বিকাল অনুমান ০৫.০০ টার সময় ভিকটিম জোহরা খাতুনের ভাই বাদী মোঃ সাদ্দাম হোসেন মোবাইলে জানতে পারেন যে, তার বোন জোহরাকে তার স্বামী মোঃ নুরুন্নবী ২৫/০৮/১১ তারিখ দিবাগত রাতের যেকোন সময় শ্বাসরোধ করে হত্যা করে বাদী সাদ্দাম হোসেনের বোন ভিকটিম জোহরা খাতুন ও তার ছেলে বেলালকে ঘরে তালাবদ্ধ করে রেখে পালিয়ে গেছে।

এই ঘটনায় পরবর্তীতে ভিকটিমের ভাই সাদ্দাম হোসেন বাদী হয়ে এজাহার দায়ের করলে খুলনা থানার মামলা নং-৪৫, তারিখ-২৭/০৮/১১, জিআর-৩৩০/১১, ধারা-নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সং-২০০৩) এর ১১(ক)/৩০ রুজু করা হয়।

খুলনা থানায় তৎকালীন সময়ে কর্মরত এসআই (নিঃ) আসমানী খানম মামলাটি সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ তদন্ত করে আসামী মোঃ নুরুন্নবী এর বিরুদ্ধে বিজ্ঞ আদালতে অভিযোগ পত্র দাখিল করেন।

মামলাটির দীর্ঘ বিচারিক কার্যক্রম শেষে বিজ্ঞ আদালত আজ মামলাটির রায় প্রদান করে। মামলার রায়ে বাদী পক্ষ সন্তোষ প্রকাশ করে খুলনা মেট্রাপলিটন পুলিশকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেছেন এবং আসামীর দ্রুত মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার দাবী জানিয়েছেন।

সম্পৃক্ত পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button