অনলাইন ডেস্ক: ভাষা আন্দোলনের পথ দিয়েই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বুধবার (২১ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে রাজধানীতে আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস-২০২৪ উদ্যাপন উপলক্ষে চার দিনব্যাপী কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন সরকারপ্রধান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ মহান একুশে ফেব্রুয়ারি শহীদ দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। বাঙালি জাতি নিজের মাতৃভাষাকে মর্যাদা দেওয়ার জন্য মহান আত্মত্যাগ করেছিলেন। মাতৃভাষা রক্ষায় যারা আত্মত্যাগ করেছে তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। বাঙালি জাতি রক্ত দিয়ে ভাষার মর্যাদা দিয়ে গেছে।
তিনি বলেন, নিজের ভাষা রক্ষা করার মধ্য দিয়ে একটা জাতি উন্নত জীবন পেতে পারে। আর আমাদের মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকারটুকু কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। এছাড়া একটা বিজাতীয় ভাষা আমাদের উপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, মাতৃভাষার আন্দোলন শুরু হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তখনকার আইন বিভাগের ছাত্র বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান উদ্যোগ নেন, তিনি ছাত্র সংগঠন গড়ে তোলেন। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করেন। আরো কয়েকটি প্রগতিশীল সংগঠনকে নিয়ে ভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠন করেন।
তিনি আরও বলেন, জাতির পিতার উদ্যোগের ফলে এবং তার নেতৃত্বে ভাষা আন্দোলনের পথ দিয়েই আমরা আমাদের স্বাধিকার পেয়েছি, স্বাধীনতা পেয়েছি। স্বাধীন জাতি হিসেবে আত্মমর্যাদা পেয়েছি। দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র বাংলাদেশ হচ্ছে একটি ভাষার রাষ্ট্র। আমাদের মহান নেতা জাতির পিতার নেতৃত্বে আমরা এই মর্যাদা অর্জন করেছি।
অনুবাদ প্রসঙ্গে সরকারপ্রধান বলেন, অনুবাদ একান্তভাবে দরকার। বাংলাদেশের সাহিত্য নিয়ে অন্য ভাষায় যতটা অনুবাদ হবে, বিশ্বের মানুষ আমাদের ততটা জানবে।
তিনি বলেন, আর্টিফিসিয়াল ইনটেলিজেন্সের যুগে বাংলা ভাষা অনুবাদ হয়ে আসছে। তবে, এসব প্রযুক্তি ব্যবহার করে অনেক সময় অদ্ভূত অনুবাদ হয়। এ বিষয়ে তদারকি করতে হবে। ভাষার উন্নয়নে বাংলা একাডেমি এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সারা বিশ্বে অস্ত্রের প্রতিযোগিতা বন্ধ হোক। অস্ত্রের প্রতিযোগিতার অর্থ শান্তি প্রতিষ্ঠায় ব্যয় হোক। শিক্ষা এবং গবেষণা কর্মে খরচ করারও আহ্বান জানাই।
ইতিহাস জানার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, আমাদের দুর্ভাগ্য ইতিহাসকে বিকৃত করা হয়েছিল। পঁচাত্তরের পর এমন সময় এসেছিল, আমরা যে বিজয়ী জাতি তাই ভুলিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
শেখ হাসিনা বলেন, কিছু কিছু পরিবার হঠাৎ টাকা পয়সার মালিক হয়ে গেছেন। তারা মনে করেন ছেলেমেয়েরা ইংরেজিতে কথা বললে খুবই দক্ষ হয়ে গেল। ইংরেজিতে কথা বলে স্মার্ট হয়ে গেল। ৬ হাজার বিদেশি শব্দ রয়েছে, যেটা সহজে গ্রহণ করা যায়। কিন্তু স্মার্ট হতে হলে শুধুমাত্র একটা ভাষা শিখতে হবে এবং সে ভাষায় কথা বলতে হবে আমি সেটা বিশ্বাস করি না। নিজের ভাষা শিখে অন্যের ভাষাও শেখা যায়।
শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের সভাপতিত্বে উদ্বোধন অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন- প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী রুমানা আলী, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব সোলেমান খান, আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে মহাপরিচালক অধাপক ড. হাকিম আরিফ।