হিলিতে সুপারফুড চিয়া সিড চাষ হয়েছে

নুরুজ্জামান হোসেন হিলি থেকে : প্রথমবারের মতো হিলিতে  চাষ হচ্ছে সুপারফুড চিয়া সিড। উপজেলার  বোয়ালদাড় গ্রামে  ২০ শতাংশ  জমিতে চিয়া সিড  চাষ করেছেন মেহেদি হাসান খান (শামিম) নামে এক কৃষক। আশানুরূপ ফলনের প্রত্যাশা করছেন তিনি।

বোয়ালদাড় গ্রামের কৃষক মেহেদি হাসান খান (শামিম)  জানান, তিনি এই নতুন ফসল ২০ শতাংশ জমিতে চাষ করেছেন।  ইউটিউব এবং আগে চাষ করেছেন তাদের কাছে  বীজ সংগ্রহ করেছে এবং চাষ পদ্ধতি শিখিয়ে নিয়েছেন ।

বোয়ালদাড়  মাঠে বিস্তীর্ণ জমিতে ধুসর সবুজ রঙের গাছ দুলছে। প্রতিটি গাছ লম্বায় প্রায় তিন ফুট। গাছে তামাক রঙ হয়েছে । এসেছে গুটি গুটি ফলও। এর নাম ‘চিয়া সিড’।

চিয়া সিড পুষ্টিকর খাবার। এতে আছে দুধের চেয়ে ৫ গুণ বেশি ক্যালসিয়াম, কমলার চেয়ে ৭ গুণ বেশি ভিটামিন সি, পালং শাকের চেয়ে ৩ গুণ বেশি আয়রন, কলার চেয়ে দ্বিগুণ পটাশিয়াম, মুরগির ডিম থেকে ৩ গুণ বেশি প্রোটিন, স্যামন মাছের চেয়ে ৮ গুণ বেশি ওমেগা-৩।

পুষ্টিকর এই খাবারটি সপ্তাহের সাত দিনই খাওয়া যায়। তবে ৩-৪ দিন খেলেও শরীরে উপকারে আসে।

স্থানীয় কৃষক রা’ বলেন, এর আগে এই ফসল কোনোদিন দেখিনি। কৃষি বিভাগ থেকে জেনেছি, এই ফসল মানব শরীরের জন্য খুবই উপকারী। বাজারে এই ফসলের মূল্য অনেক বেশি। ভালো ফলন ও বাজার সুবিধা পেলে আগামীতে আরও বেশি জমিতে এই ফসল চাষ করবে বলেন স্থানীয় কৃষকরা।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, চিয়া সিড  মধ্য আমেরিকার একটি উদ্ভিদ। পুদিনার একটি প্রজাতি। বিভিন্ন পোষক পদার্থের উপস্থিতির জন্য এটিকে সুপারফুড বলা হয়। প্রতি বিঘা জমিতে চিয়া সিড  উৎপাদন করতে খরচ হয় ১২-১৫ হাজার টাকা। বীজ উৎপাদন হয় ৭০-৮০ কেজি। প্রতি কেজি বীজ বিক্রি হয় ৭০০-১০০০ টাকা দরে। নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে চিয়া বীজ বপন করতে হয়। ফলন ঘরে তোলা যায় মার্চের শেষ থেকে এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে। চিয়া বীজ উৎপাদনে জৈবসারের ব্যবহার বেশি করতে হয়।

বিভিন্ন গবেষণার সূত্র উল্লেখ করে কৃষি বিভাগ জানায়, শর্করা, ফাইবার, ম্যাঙ্গানিজ, ফসফরাসসহ একাধিক খনিজ পদার্থ রয়েছে চিয়া বীজে। এ ছাড়া, একাধিক ভিটামিন ও প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টি অক্সিড্যান্ট রয়েছে চিয়া বীজে। রয়েছে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডও। ফলে শরীরে পাচনতন্ত্র ও মেটাবলিজমের জন্য অত্যন্ত উপকারী চিয়া সিড । চিয়া সিড  ফাইবারের পরিমাণ থাকে অনেক। প্রয়োজনীয় ফাইবার পাওয়া যায় এই সিড থেকে। ফাইবারের প্রাধান্যের কারণে হজম প্রক্রিয়া ভালো থাকে।

চিয়া সিড  পাচন প্রক্রিয়া ঠিক রাখায় কমতে পারে ওজন । এ ছাড়াও, শরীরে অতিরিক্ত চর্বি কমাতেও সহায়ক। চিয়া সিড  খেলে শরীরে কোলেস্টেরলের সমস্যা কমে। রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করে এই সিড।

ফল বা দইয়ের মতো বিভিন্ন ধরনের খাবারের সঙ্গে খেতে হয় এই বীজ। পানিতে ভিজিয়ে রেখেও খাওয়া যায়। শরবতে ব্যবহার করা যায়। লেবুর রসের সঙ্গে বা দুগ্ধজাত পদার্থের সঙ্গে মিশিয়েও খাওয়া যায়।

কৃষক মেহদি হাসান বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানতাম যে, চিয়া সিড অনেক পুষ্টিকর খাদ্য। পরীক্ষামূলক ভাবে ২২ শতাংশ জমিতে এবার চিয়া সিড চাষ করছি ।  আশানুরূপ ফলন পেলে অবশ্যই আরো বেশি জমিতে চাষ করবো। চিয়া সিড চাষ অত্যন্ত লাভজনক হওয়ায় এই চাষে দিন দিন কৃষকরা আগ্রহ হবে বলে মনে করেন তিনি।

উপজেলা উপ সহকারী কৃষি অফিসার আরজেনাবেগম বলেন, হিলিতে এই প্রথম চিয়া সিড এর চাষ হচ্ছে উপজেলার বোয়ালদাড় মাঠে। এই চাষটি খুব লাভজনক  হওয়ায় আমরা কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি যাতে তারা চাষটি বৃদ্ধি করে।

সম্পৃক্ত পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button