হবিগঞ্জে দেশ সেরা কন্টেন্ট নির্মাতা ও শিক্ষিকার রহস্যজনক মৃত্যু: হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে মানববন্ধন

 

সংগ্রাম দত্ত: সম্প্রতি হবিগঞ্জ জেলার লাখাই উপজেলার শিক্ষিকা ও দেশের সেরা কন্টেনার বিরন রুপা দাশের রহস্যজনক মৃত্যু নিয়ে জেলা শহরে নাগরিক সমাজসহ সাধারণ মানুষের মাঝে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। অনেকে বলছেন এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড । হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের হবিগঞ্জ জেলা সদর উপজেলার সভাপতি পিন্টু আচার্য, জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক বিপ্লব কুমার রায় সুজন ও হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় পরিষদের সহ-সম্পাদক অভিজিৎ ভট্টাচার্যের নাম শিক্ষিকা রুপা দাশের চিরকুটে পাওয়া গেছে। উপরোক্ত তিন ব্যক্তি আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠন যুবলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত বলে জানা গেছে। উপরোক্ত অভিযুক্ত তিন নেতা শিক্ষিকা রূপা দাশের রহস্যজনক মৃত্যুর সাথে সংশ্লিষ্ট বলে তাদের গ্রেপ্তারের দাবী জানিয়ে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট ও স্থানীয় শিক্ষক সমিতি মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান করে দোষী ব্যক্তিদের অবিলম্বে গ্রেফতারক্রমে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।

হবিগঞ্জ শহরে পরস্পর শোনা যাচ্ছে যে উপরোক্ত অভিযুক্তরা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ ও একটি প্রভাবশালী দলের সাথে জড়িত থাকার কারণে প্রভাব প্রতিপত্তি দেখিয়ে মামলাটিকে ভিন্নখাতে পরিচালিত করতে পারে ও গ্রেফতার এড়াতে খুব দ্রুত সীমান্ত অতিক্রম করে দেশের বাইরে পালিয়ে যেতে পারে ।

উল্লেখ্য যে, গত ১২ মে রোববার বিকেলে হবিগঞ্জ জেলার লাখাই থানা পুলিশ উপজেলার ভবানীপুরের হাওর এলাকা ঝনঝনিয়া ব্রীজের নিকট থেকে ভরপূর্ণি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা রিবন রূপা দাশ (৪০) এর মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য হবিগঞ্জ আড়াইশ শয্যা জেলা সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করে।

পুলিশ শিক্ষিকা রুপা দাসের মরদেহের সাথে থাকা ভ্যানেটি ব্যাগ, মোবাইল ফোন, চেক বইয়ের পাতা ও ব্যাংকের এটিএম কার্ড উদ্ধার করেছে। মরদেহের কাছে দুটি বিষের বোতল পাওয়া গেছে। একটি ব্যবহৃত এবং অপরটি অব্যবহৃত।

নিহত রিবন রুপা দাস (৪০) লাখাই উপজেলার ভবানীরপুর গ্রামের বাসিন্দা ও লাখাই মুক্তিযোদ্ধা কলেজের শিক্ষক অজয় চন্দ্র দাশের স্ত্রী ও স্থানীয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষিকা পদে কর্মরত ছিলেন। তাঁর শিশুবয়সী দুটি সন্তান রয়েছে। তিনি সপরিবারে হবিগঞ্জ জেলা শহরের পুরান মুন্সেফী এলাকায় বসবাস করতেন।

শিক্ষিকা রিবন রূপা দাশ দেশের একজন সেরা কন্টেন্ট নির্মাতা ছিলেন। তিনি মাইক্রোসফ্ট শিক্ষাবিদ এ এমআইই বিশেষজ্ঞ। তিনি মাস্টার ট্রেইনার, বিষয়ভিত্তিক বাংলা, শিক্ষক বাতায়নে দেশ সেরা উদ্ভাবক ২০২২, জেলা প্রশাসন হবিগঞ্জ থেকে শিক্ষক সম্মাননা ২০২২ শ্রেষ্ঠ পুরষ্কার অর্জন, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস থেকে করোনাযোদ্ধা শিক্ষক সম্মাননা ২০২১ অর্জন, ১৫১তম কাব স্কিল কোর্স সম্পন্নকারী, অনলাইন ক্লাস গ্রহণকারী সেরা শিক্ষক প্রথম স্থান অধিকারী ২০২০, প্রাথমিক পর্যায়ে হবিগঞ্জ জেলায় ৪৪২তম কাব স্কাউট ইউনিট লিডার, ওয়াকেলেট কমিউনিটি লিডারে কাজের অভিজ্ঞতা, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক, বাংলাদেশ শিক্ষক ঐক্য পরিষদ, হবিগঞ্জ জেলা, সেরা কন্টেন্ট নির্মাতা, ২০২১, উদ্ভাবক ২০২১ জাতীয় পর্যায়ে নির্বাচিত, দুর্বার এ্যাম্বাসেডর মডার্ণ প্র্যাকটিস ট্রেণিং এ সরকারি সফরে ভিয়েতনাম সফর ২৩ জুলাই ২০১৯, এটুআইতে তথ্য অ্যাক্সেস করার জন্য আইসিটিফোরই ডিস্ট্রিক্ট অ্যাম্বাসেডরে কাজ করেন, লাখাই উপজেলার শ্রেষ্ঠ নারী জয়িতা, হবিগঞ্জ জেলার শ্রেষ্ঠ শিক্ষিকা ২০১৮, গহীন অরণ্যে, আত্মশুদ্ধি ও সম্পর্কের সমীকরণ গল্প ও কবিতার বইয়ের লেখিকা।

গত ১৯ মে হবিগঞ্জ জেলা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট
জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে শিক্ষিকা রিবন রূপা দাশের (৪০) মৃত্যুরহস্য উদ্‌ঘাটনের দাবিতে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা করেছে ।
বিকেলে হবিগঞ্জের নারী শিক্ষকেরাও একই দাবিতে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করেন।

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের মানববন্ধনে বক্তব্য দেন হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আতাউর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি অসিত রঞ্জন দাস, সাংবাদিক ও আইনজীবী মনসুর উদ্দিন আহমেদ, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সহসভাপতি সিদ্ধার্থ বিশ্বাস, বর্ণমালা খেলাঘর আসরের সাধারণ সম্পাদক দিপুল কুমার রায়, কবি অপু চৌধুরী, যাত্রী সেবা সংগঠনের সভাপতি জালাল উদ্দিন প্রমুখ। মানববন্ধনে নানা শ্রেণি–পেশার লোকজন অংশ নেন।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, শিক্ষিকা রিবন রূপা দাশকে ষড়যন্ত্র করে হত্যা করা হয়েছে। এর পেছনে যাঁরা জড়িত, তাঁরা এই নারীকে দীর্ঘদিন ধরে ব্ল্যাকমেল করে আসছিলেন। তাঁদের মানসিক অশান্তি ও নিপীড়নের কারণে এই শিক্ষিকার মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা এ এলাকায় একটি চিহ্নিত অপরাধী চক্রের। তাঁরা এলাকায় সুদের ব্যবসার আড়ালে নানা অপরাধ করে বেড়াচ্ছেন।

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি শহীদ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘এই শিক্ষিকার মৃত্যুর পেছনে রহস্য লুকিয়ে আছে। আমরা প্রশাসনের কাছে মৃত্যুর সঠিক রহস্য উদ্‌ঘাটনের দাবি জানাই। পাশাপাশি যাঁদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, তাঁদের বিচারের আওতায় আনা প্রয়োজন।’

গত ১৯ মে “দৈনিক আমার হবিগঞ্জ পত্রিকা” শিক্ষিকার রিবন রিপা দাস এর মৃত্যু সম্পর্কে প্রতিবেদক তারেক হাবিব এক প্রতিবেদনে তাঁর হোয়াটসঅ্যাপে পাঠানো এক মেসেজে শিক্ষিকা রুপা দাস উল্লেখ করেন যে ‘ভাই, সশ্রদ্ধ আদাব। আপনাকে জানিয়ে রাখলাম। বিচারটা যেন পাই। ওর সাগরেদ বিপ্লব কুমার রায় সুজন ও অভিজিৎ ভট্টাচার্য্য। উনি আমার কাছ থেকে তিন লাখ পঁচাত্তর হাজার টাকা নিছে’ ‘আমার আত্মহত্যার জন্য দায়ী থাকবে পিন্টু আচার্য্য। আমাকে নানাভাবে ব্লাকমেইল করে সমিতি করবে বলে চাপ দিয়ে একটি চেক ও স্ট্যাম্পে দস্তখত নিছে। মিথ্যা কথা বলে আজ তিন বছর ধরে মাসে মাসে ২৫০০০/- নিছে।
আমাকে ভয় দেখাতো তর সংসার ভেঙে দেবো। তাই
আমি ভয়ে ভয়ে টাকা দিতাম। যাতে আমার স্বামীকে জানায় না। আমার সাথে অনেক অশ্লীল ব্যবহার করেছে। ফার্মেসী ব্যবসার আড়ালে ছিল সুদের ব্যবসা। অনেক নামকরা ভাল শিক্ষককে সে ফাঁসিয়েছে। ওর বিচার যেন ভগবান করে’। বক্তব্যগুলো নিহত স্কুল শিক্ষিকা রিবন রুপা মৃত্যুর আগে সাংবাদিক ও শুভাকাঙ্খিদের উদ্দেশ্যে লিখে মেসেজ পাঠিয়েছেন ।

গত ১৯ মে “দৈনিক হবিগঞ্জের মুখ” এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে যে শিক্ষিকা রিবন রূপা দাশের স্বামী অজয় দাশের দায়েরকৃত মামলার বিবরণে উল্লেখ করেন যে আমি অজয় কুমার দাশ (৪৮) পিতা অধীর দাশ, সাং ভবানীপুর, ৬নং বুল্লা ইউপি, থানা লাখাই, জেলা হবিগঞ্জ থানায় হাজির হয়ে লিখিতভাবে এজাহার দায়ের করছি যে, আমি অনুমান ১২/১৩ বৎসর পূর্বে হিন্দু এ ধর্মের বিধান অনুযায়ী রিবন রানী দাশ, পিতা সীতেশ চন্দ্র দাশ, সাং নন্দীপুর (নয়নপুর) থানা ও জেলা মৌলভীবাজারকে বিবাহ করি। আমার স্ত্রী রিবন রানী দাশ প্রাথমিক সরকারি এর বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষিকা ছিলেন। দাম্পত্য জীবনে ০২ সন্তান হয়। যথাক্রমে- ১। অনুসূর্য্য দাশ (১১), ২। অনুভ্রত দাশ (৮) দ্বয়কে নিয়া পারিবারি জীবন স্বচ্ছল এবং সুন্দরভাবে পরিচালনা করে আসছিলাম। আমার স্ত্রী রিবন রানী দাশ ভরপূর্ণী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষিকা হিসাবে কর্মরত ছিলেন। আমি আমার স্ত্রী সন্তানকে নিয়া হবিগঞ্জ শহরে ভাড়া বাসায় বসবাস করতাম। আমার স্ত্রী হবিগঞ্জ শহর হতে স্কুলে যাওয়া আসা করত। গত ১০/০৫/২০২৪ইং তারিখ রোজ শুক্রবার সকাল অনুমান ১০.০০ খ্রিঃ ঘটিকার সময় আমি স্ত্রী সন্তান রেখে আমার নিজ বাড়ীতে যাই। আমার স্ত্রী আমার সন্তানদেরকে বলে তার পিতার বাড়ীতে যাওয়ার কথা বলে বাসা হতে বের হয়ে যায়। ঐদিন অর্থাৎ ১০/০৫/২০২৪ইং তারিখ রাত্র অনুমান ১০.০০ ঘটিকার সময় হবিগঞ্জ শহরস্থ বাসায় এসে আমার স্ত্রীকে বাসায় দেখতে না পেয়ে আমার সন্তানদেরকে জিজ্ঞেস করলে তারা জানায় তাদের মা অর্থাৎ আমার স্ত্রী তার বাবার বাড়ীতে চলে গেছে। তখন আমি আমার ব্যক্তিগত মোবাইল নাম্বার ০১৭১২-৭৫৭০৩০ হইতে আমার স্ত্রী রিবন রানী দাশ এর মোবাইল নাম্বার ০১৭০৬-০৭৭০৮৯, ০১৩০৩-২২৫৪০৩, তে একাধিকবার ফোন করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয় নাই। পরবর্তীতে আমার স্ত্রী রিবন রানী দাশ এর ধর্মভাই মোঃ আলাউদ্দিন এর মোবাইল ফোন নাম্বার- ০১৭১৩-৮০১৯৯৫ এ ফোন করলে জানায়, আমার স্ত্রী রিবন রানী দাশ কোর্ট স্টেশনে তার সাথে সকাল বেলা দেখা করে এবং পিন্টু আচার্য্য ৫,০০,০০০/- (পাঁচ লক্ষ) টাকা রিবন রাণী দাসের কাছে পায়। এ পর্যায়ে আমার মৃত স্ত্রী রিবণ রাণী দাশ তার ধর্মভাই আলাউদ্দিনকে বলে, আমি পরে আপনার মোবাইলে একটা মেসেজ দিব বলে চলে যায়। পরের দিন আমি বাবুল পালকে নিয়ে আমার শ্বশুর বাড়ীতে স্ত্রীর সন্ধ্যানে যাই। আমি মৌলভীবাজারস্থ শ্বশুর বাড়ীতে যাওয়ার পর জানতে পারি আমার স্ত্রী রিবন রানী দাশ আমার শ্বশুর বাড়ীতে যায় নাই। এরপর আমি হবিগঞ্জ শহরে আমার বাসায় আসার পর আমার স্ত্রীর ধর্মভাই আলাউদ্দিনকে ফোন দেই। আলাউদ্দিন জানায় আমার স্ত্রী রিবন রানী দাশ আলাউদ্দিনের মোবাইলে তিনটি মেসেজ দেয়। যা হল ১। “আমার আত্মহত্যার জন্য দায়ী থাকবে পিন্টু আচার্য্য। আমাকে নানাভাবে ব্ল‍্যাকমেইল করে সমিতি করবে বলে চাপ দিয়ে একটি চেক ও স্ট্যাম্পে দস্তখত নিছে। মিথ্যা কথা বলে আজ ০৩ (তিন) বছর ধরে মাসে মাসে ২৫,০০০/- (পঁচিশ হাজার) টাকা নিছে। আমাকে ভয় দেখাতো তোর সংসার ভেঙ্গে দেবো। তাই আমি ভয়ে ভয়ে টাকা দিতাম। যাতে আমার স্বামীকে জানায় না। আমার সাথে অনেক অশ্লীল ব্যবহার করেছে। ফার্মেসী ব্যবসার আড়ালে ছিলো সুদের ব্যবসা। অনেক নামকরা ভাল শিক্ষককে সে ফাঁসিয়েছে। ওর বিচার যেন ভগবান করে”,
২। “ভাই সশ্রদ্ধ আদাব। আপনাকে জানিয়ে রাখলাম। বিচারটা যেন পাই। ওর সাগরেদ বিপ্লব কুমার রায় সুজন ও অভিজিৎ ভট্টাচার্য” এবং “উনি আমার কাছ থেকে ৩,৭৫,০০০/- (তিন লক্ষ পচাত্তর হাজার) টাকা নিছে।

আমার স্ত্রী রিবন রানী দাশ আলাউদ্দিনকে ওই মেসেজগুলো পাঠানোর পাশাপাশি ঐদিন “দৈনিক আমার হবিগঞ্জ” পত্রিকার সাংবাদিক তারেক হাবিবকে ফোন করে মেসেজের বক্তব্যগুলো জানিয়ে রাখে।
সাংবাদিক তারেক হাবিব তার ফেসবুক আইডি “Tarek Habib তারেক হাবিব’ নামক আইডিতে তা ব্যক্ত করে।

গত ১২/০৫/২০২৪ইং তারিখ রোজ রবিবার বিকাল অনুমান ০৩.০০ ঘটিকার সময় ০৬ নং বুল্লা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমাকে জানায়, আমার স্ত্রী রিবন রানী দাশ এর মৃতদেহ হবিগঞ্জ জেলার লাখাই থানাধীন ০৬নং বুল্লা ইউ/পির অন্তর্গত ফান্ডা মৌজাস্থ নায়েব খালের পাড় যাহা ঝনঝনিয়া ব্রীজের ৮০০ মিটার দক্ষিনে উত্তর শিয়রী অবস্থায় পড়ে আছে। উক্ত সংবাদ পেতে আমার সঙ্গীয় বাবুল পাল, তাপস রায়, লিটন দাশ সহ উক্ত স্থানে হাজির হয়ে আমার স্ত্রীকে মৃত অবস্থায় দেখতে পাই। থানার পুলিশ এসে আমার স্ত্রী রিবন রানী দাশএর সুরতহাল প্রস্তুত করে মৃত্যুর সঠিক কারন নির্ণয় করার জন্য মৃতদেহ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেলা সদর হাসপাতাল হবিগঞ্জ মর্গে পাঠায়। আমার স্ত্রী রিবন রানী দাশ এর ময়না তদন্ত শেষে ধর্মীর বিধান মতে লাশ সৎকার করি। আমার স্ত্রী রিবন রানী দাশ এর মেসেজের ভাষ্য অনুযায়ী খোজখবর নিয়ে ১। পিন্টু আচাৰ্যা (৫০) পিতা ব্রজেন্দ্র চন্দ্র আচার্য্য উরফে ডাক্তার কুকাবাবু, সাং রিচি থানা ও জেলা হবিগঞ্জ, এপি- হেমদা ফার্মেসী, কোর্ট স্টেশন রোড, হবিগঞ্জ শহর, হবিগঞ্জ, ২। অভিজিৎ ভট্টাচার্য্য (৪৩) পিতা-মৃত উমাপদ ভট্টাচার্য্য, সাং জয়পুর, থানা বাহুবল, জেলা হবিগঞ্জ এবং ৩। বিপ্লব রায় সুজন (৪৩) পিতা বিজন রায়, সাং চিড়াকান্দি, থানা ও জেলা হবিগঞ্জ। এদের সাথে আমার স্ত্রী রিবন রাণী দাশের দীর্ঘদিন যাবৎ যোগাযোগ ছিল, তারা আমার স্ত্রীকে ব্ল‍্যাকমেল করে দীর্ঘ তিন বছর যাবৎ মাসে মাসে ২৫,০০০/- করে টাকা নিয়েছে, তারা আরো টাকার জন্য চরম চাপ অব্যাহত রেখেছিল।
উপরোক্ত ১। পিন্টু আচার্য্য (৫০) পিতা ব্রজেন্দ্র চান্দ্র আচার্য্য উরফে ডাক্তার কুকাবাবু, সাং রিচি থানা ও জেলা হবিগঞ্জ, এপি- হেমদা ফার্মেসী, কোর্ট স্টেশন রোড, হবিগঞ্জ শহর, হবিগঞ্জ, ২। অভিজিৎ ভট্টাচার্য্য (৪৩) পিতা-মৃত উমাপদ ভট্টাচার্য্য, সাং জয়পুর, থানা বাহুবল, জেলা হবিগঞ্জ এবং ৩। বিপ্লব রায় সুজন (৪৩) পিতা বিজন রায়, সাং চিড়াকান্দি, থানা ও জেলা হবিগঞ্জদেরসহ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের এহেন চরম মানষিক ও শারিরিক যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে গত ১১/০৫/২০২৪খ্রিঃ তারিখ রাত ০৮.০০ ঘটিকা হতে গত ১২/০৫/২০২৪খ্রিঃ বিকাল ০৩.০০ ঘটিকার মধ্যে যে কোন সময় উক্ত স্থানে আত্মহত্যা করেন ।

এদিকে অভিযুক্ত হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক ও যুবলীগ নেতা বিপ্লব কুমার রায় সুজন তার ফেসবুক একাউন্টে পুলিশকে উদ্দেশ্য করে একটি স্ট্যাটাস দেন যাতে তিনি উল্লেখ করেন যে “গতকাল নাকি আমার বাসায় পুলিশ গিয়েছিলো কেন গিয়েছিলো মামলা হলে কি আসামী বাড়িতে থাকে? লুট আতংক করার জন্য গিয়েছিলো পুলিশ?
এতে তিনি আরো উল্লেখ করেন যে মামলা সত্য মিথ্যা হোক রেকর্ড হলে কি আসামী বাড়িতে থাকবে মাননীয় পুলিশ সুপার মহোদয় SP Habiganj পুলিশ বাড়িতে কেনো যাবে ভয়ভীতি লাগানোর জন্য?

টাকার বিজিট বাড়ানোর জন্য? আতংক ছড়ানোর জন্য? টাকা নিয়ে ওসির সাতে দেখা করার জন্য? আপনি সৎ নিষ্টবান অফিসার আপনার কাছে আশা করি সুষ্ঠু তদন্ত। বাসাত সর্ন যেনো লুট না হয়””

ঘটনা সম্পর্কে হবিগঞ্জ পৌরসভার কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র গৌতম কুমার রায় ফেসবুকে এক কমেন্টে তিনি উল্লেখ করেন যে এক সময়ের আন্ত জেলা ডাকাত দলের সদস্য ” চিড়াকান্দি এলাকার ডাঃ মিহির দাস হত্যা ও ডাকাতি মামলার প্রথম গ্রেপ্তার কৃত আসামি ও চৌধরী বাজারে চোখে মরিচের গুড়া মেরে ৯৪ হাজার টাকা ছিনতাই কারি আসামী বিপ্লয় রায় ওরফে চোরা বিল্লু এখন হিন্দুদের নেতা।

আইনজীবী ভি ডি নিউটন লেখিকা রুমা মোদক এর এক ফেসবুক পোস্টে মন্তব্যে বলেন যে লাখাই থানার ভবানীপুর গ্রামের অজয় দাশের স্ত্রী হলেন রিবন রুপা দাশ। রিবনের স্বামী লাখাই মুক্তিযোদ্ধা সরকারি কলেজের প্রভাষক। রিবন ভরপুর্ণী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন মেধাবী সহকারি শিক্ষিকা।

রিবন দুবার জেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ট শিক্ষক হয়েছে। রিবনের কাকা শ্বশুর বীর মুক্তিযোদ্ধা অবনী চন্দ্র দাশ।
এদের বাড়ীতে FCPS ডাক্তারসহ পুলিশের SP পর্যন্ত আছে।
একজন মানুষ ঋনগ্রস্ত হতে পারে। ঋণের জন্য সুইসাইড করতে হবে মেনে নিতে পারি না। সুইসাইড করলে লাখাই হাওড়ে গিয়ে মরবে কেন? গলায় ওড়নার পেছানো চিহ্ন রয়েছে। এ বিষয়ে অধিক তদন্ত প্রয়োজন।

ঋনের কারণ হলে রিবন প্রতিবাদ করতে পারতো।
আইনের আশ্রয় নিতে পারতো। তবে, সুদখোরদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া জরুরী।

একজন মেধাবী শিক্ষক অকালে ঝড়ে গেল। এই মৃত্যু মেনে নেয়া খুবই কষ্ট দায়ক। দুটি অবুঝ সন্তানের জন্য কষ্ট হচ্ছে। তবে রিবন ছিল একজন সহজ ও সরল টাইপের মহিলা। মানুষকে খুবই সম্মান করতেন।

আমার মতে বিচারবিভাগীয় তদন্ত করা প্রয়োজন।দোষী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনতে হবে।

হবিগঞ্জ জেলা প্রেসক্লাবের সেক্রেটারি পাভেল খান চৌধুরী ফেসবুকে এক কমেন্টে বলে এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে ঘটনার রহস্য উদঘাটনের দাবী জানাচ্ছি।

হবিগঞ্জ জেলা শহরের নারীবাদী লেখিকা রুমা মোদক
গত ১৭ ই মে দৈনিক আজকের পত্রিকায় “সুবিচারের উচ্চাশা” শীর্ষক এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন যে ভিডিও ক্লিপ দিয়ে শিক্ষিকাকে ব্ল্যাকমেইল করা হচ্ছিল।

মৌলভীবাজার জেলা শহরের বিশিষ্ট সাংবাদিক ও শিক্ষক রজত কান্তি গোস্বামী তাঁর এক ফেসবুক একাউন্টের স্ট্যাটাসে উল্লেখ করেন যে শিক্ষিকা রিবন রুপা দাস মৃত্যুটি হত্যাকান্ড বলে সন্দেহ হয়।

গত ১৯ মে “দৈনিক আমার হবিগঞ্জ” এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে যে হিন্দু বুদ্ধ খৃষ্টান ঐক্য পরিষদের তিন নেতা ধর্মীয় ও একটি প্রভাবশালী রাজনৈতিক দলের সাথে জড়িত থেকে পুঁজি করে বিভিন্ন সংগঠনের নাম ভাঙ্গিয়ে প্রভাব বিস্তার করে সুদ, মাদকসহ তদবীর বাণিজ্য করেই জীবিকা নির্বাহ ও বিলাসী চলাফেরায় অভ্যস্ত ছিলেন । সনাতন ধর্মাবলম্বী সরকারি চাকুরিজীবী বিশেষ করে মহিলারা ছিল তাদের টার্গেটে। ব্যাংকের খালি চেকের পাতা ও স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিয়ে ইচ্ছেমত লেনদেন হতো। রমরমা চড়াও সুদের ব্যবসায় নিবন্ধনহীন গোপন সমিতি আছে তাদের। কিছুটা সুদ জমা হলেই সেটা চক্রবৃদ্ধি হারে বেড়ে যেত। এছাড়াও নারীদের ব্লাকমেইলিং করে সংসার ভেঙ্গে দেয়ার হুমকি দিয়ে চলত ভিন্ন কিছু। মূলত ধর্মীয় সংগঠনকে পুজি করে মানবিক মুখোশের আড়ালে ছিল তাদের ভয়ঙ্কর রূপ। তারা ব্ল্যাকমেইলিং করে ওই শিক্ষিকার সাথেও অশ্লীলতা করেছে বলে শিক্ষিকা সাংবাদিকসহ কয়েকজনের কাছে হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ করে অভিযোগ করেছেন বলে পত্রপত্রিকায় খবর বেরিয়েছে।

গত ১৯শে মে “দৈনিক হবিগঞ্জের মুখ” এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে যে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ হবিগঞ্জ জেলা শাখা সভাপতি এডভোকেট নলীনি
কান্ত রায় নিরুর সভাপতিত্বে শিক্ষিকা রিবন রুপা দাস এর রহস্যজনক হত্যাকাণ্ডের শোক প্রস্তাব এনে অবিলম্বে দোষী ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন ও সর্বসম্মতিক্রমে উপরোক্ত তিন অভিযুক্ত নেতাকে সংগঠনের বিভিন্ন পদ থেকে সাময়িকভাবে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে রিপোর্টটি উল্লেখ করেছে।

জানা গেছে যে, তিনি বাসা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার দুই দিন দুই রাত পর তাঁর লাশ উদ্ধার হয়। ওই দুই রাত শিক্ষিকা কোথায় ছিলেন? তিনি কি আত্মহত্যা করেছেন নাকি তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে লাশ সেখানে ফেলে রেখেছে?
অভিজ্ঞ মহলের মতে এ ব্যাপারে শিক্ষিকার স্বামীসহ অভিযুক্ত ব্যক্তিদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে পুঙ্খানুপুঙ্খ রূপে তদন্তক্রমে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে শাস্তি মূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পুলিশ প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।

সম্পৃক্ত পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button