কাজী নুরনবী, নওগাঁ প্রতিনিধি: বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ পত্নীতলা ব্যাটালিয়ন (১৪ বিজিবি) এর উদ্যোগে নিরাপদ, শান্তিপূর্ণ , মাদক, চোরাচালানমূক্ত, আলোকিত সীমান্ত বিনির্মানে বিএসএফকে সাথে নওগাঁ সীমান্তে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শনিবার (২০ এপ্রিল) দুপরে এক বিজ্ঞপ্তিতে পত্নীতলা (১৪ বিজিবি) ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. হামিদ উদ্দিন জানায়, নওগাঁ সীমান্তের অধিক চোরাচালান প্রবণ এলাকা হিসেবে পরিচিত ভারতের ভুলকিপুর এবং বাংলাদেশের খয়েরবাড়ি। সীমান্তবর্তী গ্রাম দুটিতে দীর্ঘদিন যাবৎ মাদক পাচারকারী এবং চোরাকারবারীদের উপদ্রব দেখা যায়। বিজিবি এবং বিএসএফ ক্যাম্প হতে সীমান্তবর্তী এই গ্রাম দুটি কিছুটা দূরে অবস্থিত হওয়ায় এবং সীমান্তে এই অংশে ভারতের কাটাতারের বেড়া না থাকায় মাদক পাচার এবং চোরাচালানের রুট হিসেবে দুষ্কৃতকারীরা এই এলাকাকে ব্যবহার করে আসছে।
গ্রাম দুটিকে মাদক এবং চোরাচালান মুক্ত করতে বিজিবি-বিএসএফ এর অধিনায়ক পর্যায়ে বিভিন্ন সময়ে আলোচনা হয়। এই এলাকাকে মাদক ও চোরাচালানমুক্ত করার কৌশল নির্ধারণ এবং সে বিষয়ে সহযোগিতার ভিত্তিতে কিছু কার্যক্রম গ্রহণ করার ব্যাপারে যৌথ পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়।
এরই ধারাবাহিকতায় অদ্য ২০ এপ্রিল ২০২৪ তারিখ বাংলাদেশ সময় ১০০০ ঘটিকা হতে ১২৩০ ঘটিকা পর্যন্ত পত্নীতলা ব্যাটালিয়ন (১৪ বিজিবি) এবং প্রতিপক্ষ ১৩৭ ব্যাটালিয়ন বিএসএফ, পতিরাম এর মধ্যে সীমান্ত পিলার ২৫৮/৫-এস হতে ৩০০ গজ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে খয়েরবাড়ি গ্রামের খয়েরবাড়ি মাঠ নামক স্থানে বিজিবি এর আহবানে ব্যাটালিয়ন কমান্ডার পর্যায়ে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সভায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ এর পক্ষে ১৫ সদস্য বিশিষ্ট প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বদেন লেঃ কর্নেল মোঃ হামিদ উদ্দিন, বিজিবিএমএস, পিএসসি, অধিনায়ক, পত্নীতলা ব্যাটালিয়ন (১৪ বিজিবি)। অপরদিকে ১৫ সদস্য বিশিষ্ট বিএসএফ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বদেন শুকভীর ধাংগার কমান্ড্যান্ট, ১৩৭ ব্যাটালিয়ন বিএসএফ, পতিরাম, ভারত।
শুধুমাত্র বিজিবি এবং বিএসএফ এর নিরাপত্তামুলক দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে এইএলাকাকে মাদক ও চোরাচালানমুক্ত করা বেশ কঠিন। প্রয়োজন তৃণমূল পর্যায়ে জনগণের বৃহত্তর সহযোগিতা। আরো প্রয়োজন উভয় দেশের স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গের সম্পৃক্ততা।সকল পক্ষের সহযোগিতার মাধ্যমে এই গ্রামের মাদক ও চোরাকারবারীদের দৌরাত্ম্য দমিয়ে দেওয়া সম্ভব।
একই সাথে, মাদক পাচারকারী/চোরাকারবারিদের অন্ধকার জীবন থেকে আলোর পথে ফিরিয়ে আনার জন্য পত্নীতলা ব্যাটালিয়ন (১৪ বিজিবি) এই মহতী উদ্যোগ গ্রহণ করে। এই উদ্যেগের মূলপ্রতিপাদ্য হলো “আলোকিত গ্রাম, আলোকিত মানুষ,আলোকিত সীমান্ত”। এখানে স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের হাতে থাকবে বই খাতা। তাদের চোখ-মুখ ভরা থাকবে রংগীন স্বপ্ন। সীমান্তবর্তী কৃষক, বেকার ও সাধারণ মানুষের জীবন জীবিকার জন্য মাদক চোরাচালানের সাথে সম্পৃক্ততা নয় বরং বেছে নিবে বিকল্প কোন অর্থনৈতিক উপায়। সীমান্তরক্ষী বাহিনী হিসেবে সীমান্তবর্তী মানুষের জীবন বদলে দেওয়ার এই যুগান্তকারী উদ্যোগে বহুমুখী কার্যক্রম নিয়ে ১৪ বিজিবি পাশে থাকবে আস্থা ও নির্ভরতার প্রতীক হয়ে। পাল্টে দেবার প্রতিশ্রুতিতে খয়েরবাড়ি গ্রামটি হয়ত হয়ে উঠবে বাংলাদেশের অন্যান্য সীমান্তবর্তী এলাকার জন্য অনুকরণীয় মডেল গ্রাম।
বিজিবি-বিএসএফ এর সমন্বয়ে উভয় দেশের জনগণকে মাদক ও চোরাচালান বিরোধী কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করার বৃহত্তর কার্যক্রমের অংশ হিসেবে আজকে উভয় দেশের সাধারণ মানুষ এবং ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য বিভিন্ন খেলাধুলার আয়োজন করা হয়েছে। এই ধারাবাহিকতায় ভবিষ্যতে আরও বড় পরিসরে বিভিন্ন খেলাধূলা, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
সাধারণ জনগণকে সম্পৃক্ত রেখে মাদক ও চোরাচালানমূক্ত আলোকিত সীমান্ত বিনির্মানে এ ধারা অব্যাহত থাকবে। উভয় কমান্ডার সীমান্তকে সৌহার্দপূর্ণ ও সহিংসতামূক্ত একটি মডেল সীমান্ত বিনির্মানে দৃঢ অঙ্গীকার ব্যাক্ত করেন।
পত্নীতলা ব্যাটালিয়ন (১৪ বিজিবি) এবং প্রতিপক্ষ ১৩৭ ব্যাটালিয়ন বিএসএফ এর মধ্যে সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক, নিবিড় যোগাযোগ, সুসম্ন্বয় এবং সহযোগীতপূর্ন আচরণের কারনে গত দুই বছরে সীমান্তে ১৪ বিজিবির দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি যা সীমান্ত ব্যবস্থাপনার একটি অনুকরনীয় দৃষ্টান্ত।
দ্বীপাক্ষীয় সম্পর্কের এই অনন্য নিদর্শনকে সামনে রেখে জাতীয় স্বার্থকে সমুন্নত রেখে আমাদের ইতিবাচক ভুমিকা অব্যাহত রাখার ব্যাপারে উভয় অধিনায়ক দৃঢ় অংগীকার ব্যক্ত করেন
পরিশেষে, সভায় সীমান্তবর্তী জনসাধারণের নিরাপত্তা এবং সীমান্তে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রেখে উভয় অধিনায়ক একসাথে কাজ করার ব্যাপারে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করার মাধ্যমে সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে পতাকা বৈঠক শেষ হয়।