সিলেটের আজীবন ত্যাগী চা শ্রমিক নেতা সুরেন্দ্র চন্দ্র ব্যানার্জি

 

সংগ্রাম দত্ত: সিলেট জেলার বিশিষ্ট চা শ্রমিক নেতা সুরেন্দ্র চন্দ্র ব্যানার্জি এর জন্ম ১৯২৭ সালের ২৪ শে ফেব্রুয়ারি মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার ফুলছড়া চা বাগানে।
১৯৫৫ সালে তিনি শ্রীমঙ্গল ভিক্টোরিয়া হাইস্কুল থেকে মেট্রিক পাশের পর নোয়াপাড়া তহশিল অফিসে তহশিলদার পদে চা শ্রমিক সমাজের প্রথম সরকারি চাকরি পরে- মৌলভীবাজার ও সিলেট অফিসে বদলি হন।
১৯৬৫ সালে স্বেচ্ছায় সরকারি চাকরি ছেড়ে ঢাকাস্হ গেট ইষ্টার্ন ইন্সুরেন্স কোম্পানিতে ভর্তি হয়ে চাকরির সুবাদে চা বাগানে ভ্রমণ করা অবস্থায় ১৯৬৯ সালের কোন এক সময়ে সংবাদ পান যে চা শ্রমিক ইউনিয়নের সেই সময়কালের ২য় সাধারণ সম্পাদক ও কোষাধ্যক্ষ এম সুলাইমান ( সুলাইমান সাহেবের বাড়ি বর্তমান চাঁদপুর জেলার মতলব থানায়) ইউনিয়নের নেতৃত্বে থাকাবস্থায় আকস্মিকভাবে ইউনিয়ন অফিস তাঁর দেয়া নাম ইউনিটি হাউস এর দায়িত্ব কারো কাছে হস্তান্তর না করে আই এল ও হতে প্রাপ্ত ইউনিয়ন মালিকানাধীন দামি গাড়িটি সঙ্গে নিয়ে ঢাকার পথে আগস্ত্য যাত্রা করেন। এই সকল সংবাদ পেয়ে তিনি দ্রুততম সময়ে ইউনিয়নের সহ-সভাপতি অজয় চন্দ্র রায়, নির্বাহী সদস্য মেসার্স রজনী তন্ত্রবায়, পাদু ব্যনারজি, সর্বেশ্বর ব্যানার্জি ও মদন সরদার এর সঙ্গে যোগাযোগ করে কাকিয়া ছড়া, ফুল ছড়া, কালীঘাট চা বাগান হতে ১০/১২ জন সাধারণ শ্রমিককে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সাথে নিয়ে সিলেটের মার্শাল অফিসে যোগাযোগ করেন। ঐদিন মার্শাল অফিস থেকে ইউনিয়নের পরবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠান সংক্রান্ত বিষয়ে নিশ্চিত আশ্বাস পেয়ে শ্রীমঙ্গলে ফিরে এসে ওই সকল নেতৃবৃন্দ সহিত যোগাযোগের ফলে ১৫ ডিসেম্বর ১৯৬৯ সালে এক জরুরী সভা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এম সুলেমানের বিরুদ্ধে অনাস্থা জ্ঞাপন করে তাঁর স্হলে রশিদপুর চা বাগানের কৃতি সন্তান স্থানীয় সমাজকর্মী মতিলাল বিনকে ইউনিয়নের অস্থায়ী সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্ব প্রদান করা হয়।
স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে তিনি চা শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাহী সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হন।
দেশ স্বাধীনের পর চা শ্রমিক ইউনিয়নের নেতৃত্বে আসলে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের স্হানীয় লালবাহিনীর বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে চা শ্রমিক এর পক্ষে বিশাল ভূমিকা রাখেন।

প্রসঙ্গত আরো উল্লেখযোগ্য যে চা শ্রমিক ইউনিয়নের নেতৃত্বে থাকাবস্থায় এক পর্যায়ে চাকরি হতে পদত্যাগ করে ১৯৭৩ থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত তিন মেয়াদ এ ১৫ বছর কালের জন্য স্থানীয় ৮ নং কালীঘাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে তিনি স্থানীয় জনগণের সেবা করে তাদের কাছে স্মরণীয় হয়ে আছেন।

এলাকায় গুঞ্জন রয়েছে যে, ১৯৮৫ সালের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তিনি চেয়ারম্যান পদে জনগণের ভোটে জয়লাভ করেছিলেন। কিন্তু তৎকালীন সময়ে তাঁকে কৌশলে ফেল দেখানো হয় বলে এলাকায় মুখরোচক আলোচনা ছিল।

শ্রীমঙ্গল শহরের মৌলভীবাজার রোডে দুর্গা বাড়ি নিয়ে মামলা চলাকালীন সময়ে বিভিন্ন জরুরি প্রয়োজনে শলা পরামর্শ ও নেতৃত্ব দিয়ে হিন্দু সম্প্রদায়কে সহযোগিতা করেছেন।

তিনি সবসময়ই চা শ্রমিক ও সাধারণ মানুষের পক্ষে কথা বলাসহ বিভিন্ন জায়গায় লেখালেখি ও সংবাদ মাধ্যমে নিউজ ছাপানোর ব্যবস্থা করতেন যাতে চা শ্রমিকরা উপকৃত হয়।

তিনি গত ১ আগস্ট ২০০৭ খ্রিস্টাব্দে বালিশিরা সেন্ট্রাল হাসপাতালে ( কালীঘাট চা বাগান) মাসাধিকাল চিকিৎসার পর ইহ জগতের মায়া ত্যাগ করে পরপারে উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। তিনি চিরকুমার ছিলেন

সম্পৃক্ত পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button