সিরাজগঞ্জে দুই শিশু সন্তানসহ ভাগ্নিকে হত্যার দায়ে যুবকের মৃত্যুদণ্ড

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি : সিরাজগঞ্জের বেলকুচিতে দুই শিশুপুত্রসহ সৎ ভাগ্নিকে হত্যার দায়ে আইয়ুব আলী সাগর (৩১) নামে এক যুবককে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে তাকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। আসামির উপস্থিতিতে রোববার (২৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে সিরাজগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক ফজলে-খোদা মো. নাজির এ রায় দেন।দণ্ডপ্রাপ্ত সাগর উল্লাপাড়া উপজেলার নন্দিগাঁতী গ্রামের মৃত মকছেদ মোল্লার ছেলে। আদালতের স্টেনোগ্রাফার মো. রাশেদুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। ঘটনার বিবরণে জানা যায়, ২০২২ সালের ১লা অক্টোবর বেলকুচি উপজেলার মবুপুর গ্রামের নিজ ঘর থেকে সুলতান আলীর স্ত্রী রওশনারা খাতুন (৩০) এবং তার দুই ছেলে জিহাদ হোসেন (১০) ও মাহিনের (৩) মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
এ ঘটনায় রওশনারার ভাই নুরুজ্জামাল বাদী হয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের নামে মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটন ও একমাত্র আসামি আইয়ুব আলী সাগরকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
 গ্রেপ্তারের পর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন আইয়ুব আলী সাগর।জবানবন্দিতে তিনি বলেন, ভিকটিম রওশনারা তার সৎ ভাগ্নি। তাঁতের কাজ করে যা আয়  হয় তা দিয়ে সংসার না চলায় দেড় বছর বিভিন্ন এনজিও থেকে লোন নেন সাগর। কিন্তু ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে পারছিলেন না তিনি। এ নিয়ে হতাশাগ্রস্থ হয়ে তার সৎ ভাগ্নি রওশনারার দ্বারস্থ হন সাগর। ২০২২ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর তিনি রওশনারার কাছে গিয়ে টাকা ধার চান। কিন্তু রওশনারা বলেন, তার কাছে টাকা নেই।  রওশনারার ঘরে থাকা চারটি ট্রাংক দেখে সাগর ধারণা করেন যে এগুলোর ভেতরে টাকা আছে। তাই তিনি চুরির সিদ্ধান্ত নেন। দুদিন পর ২৮ সেপ্টেম্বর আবার তিনি সৎ ভাগ্নি রওশনারার বাড়িতে যান। তার স্বামী বাড়িতে ছিলেন না। রাতে তাদের বাড়িতে থেকেও যান। সবাই একসঙ্গে খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ার পর সাগার চাবি নিয়ে ট্রাংক খুলে টাকা খুঁজতে থাকেন। একপর্যায়ে রওশনারা নড়চড়া করলে, সাগর ভাবেন, হয় তো তিনি তাকে চুরি করতে দেখে ফেলেছেন। তখনই পাথরের পুতা (পাটার শিল) দিয়ে ভাগ্নির বুকে আঘাত করে এবং  গলাটিপে তাকে হত্যা করেন। এরপর তিন বছর বয়সী মাহিন জেগে উঠলে তাকেও শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন তিনি। এর মধ্যে জিহাদ জেগে উঠলে তাকেও একইভাবে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে সাগর। তিনজনকে হত্যার পর ঘরের চারটি ট্রাংক খুলে টাকা খুঁজতে থাকেন। কিন্তু কোনো টাকা-পয়সা না পেয়ে ভোরে বাইরের দরজায় শিকল দিয়ে পালিয়ে যান তিনি।  মামলায় মোট ১৩ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়। শুনানি শেষে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় রোববার এ রায় দেন বিচারক।

সম্পৃক্ত পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button