জামাল উদ্দীন, সাতক্ষীরা থেকেঃ সাতক্ষীরার সদর উপজেলার হাওয়ালখালী গ্রামের ৭৫ বছর বয়সী আমছদ্দীন (আনিস উদ্দীন) এর আত্মহত্যার ঘটনায় এলাকায় নানা জল্পনা কল্পনা চলছে। মৃত্যুর প্রায় এক মাসে লাশ দাফনের পর স্বজন সহ গ্রামবাসী প্রতিবেশীরা মৃত্যুর রহস্যের নানা তথ্যউপাত্ত নিয়ে আলোচনা সমালোচনার ঝড় বইছে।
গত ২০শে ফেব্রুয়ারী মঙ্গলবার দিবাগত রাতে আমছদ্দীনের লাশ ঘরের আড়ার সাথে মাফলার দিয়ে ঝুলানো অবস্থায় দেখতে পেয়ে এলাকাবাসী নিচে নামায়। পরেরদিন বুধবার পুলিশের উপস্থিতিতে আমছদ্দীন নাকি রোগগ্রস্থ ছিলেন সেকারণে আত্মহত্যা করেছেন। স্বজনদের অভিযোগ না থাকায় পুলিশ ময়লাতদন্ত ছাড়াই লাশ দাফনের অনুমতি দেন বলে ঘটনাস্থলে অবস্থানকারী সাতক্ষীরা সদর থানার সাব ইন্সপেক্টর ফিরোজ হোসেন নিশ্চিত করেন। এদিকে ঘটনায় দীর্ঘ অনুসন্ধানে জানা গেছে হাওয়ালখালী গ্রামের আমছদ্দীন সরদার (৭৫) একজন মুদি দোকানদার ছিলেন। তার এক ছেলে ও তিন মেয়ে। যেদিন আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে তার মাত্র চার দিন আগে ছেলে রাজু সরদার প্রবাস থেকে দেশে আসে। গত ১৫ বছর পূর্বে বাবা তার নিজস্ব অর্থে মালয়েশিয়া পাঠিয়ে দেয়। সেখান থেকে পরবর্তীতে সৌদি আরবে প্রবাসী ছিলেন। দীর্ঘ প্রবাস জীবনে আয় রোজগার করে বাবার জন্য এমনকি বাবার ভিটাতে কোন বাড়ি ঘর নির্মান করে নি। সবই পাশ্ববর্তী শ্বশুর বাড়িতে প্রবাসের আয় ব্যয় করেছেন। এমনকি রাজু তার নিজের ছেলেকেও বিদেশে পাঠিয়েছেন। ঘটনার দিন ১৮ই ফেব্রুয়ারী মৃত আমছদ্দীনের বড় কন্যা মাজেদা ও ছোট কন্যা মাহফুজা ভাই রাজু বাবার দোকান থেকে বাবাকে বের করে দেয়। রেউই বাজারে জমি থাকায় সে জমিতে মাঠের জমি বিক্রি করে বিল্ডিং নির্মানের চাপ দিতে থাকে। স্থানীয়রা জানায় বিদেশ প্রবাস কালীন সময়ে বাবাকে কিছু না দেওয়ায় বাবা তার শর্তে রাজি হয়নি। ঘটনার দিন শেষে বুধবার ভোরে আমছদ্দীনের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার হয় তার ঘর থেকে।
সরেজমিনে অনুসন্ধানে গিয়ে দেখা যায় রাস্তার ধারে দোকানের সাথে দুইটি রুম রয়েছে। একটি রুমে দোকান, অন্য রুমে তিনি ঘুমান। বাড়ির মধ্যে প্রবেশে কোন বাঁধা নাই। যেহেতু তিনি মুদি দোকানদার তার কাছে ১০/২০ হাজার টাকা থাকায় স্বাভাবিক। সে মানুষটি যখন ঘুমাবে তখন ঘরের দরজা দিবে না এটা কী হতে পারে! আবার যদি স্বেচ্ছায় আত্মহত্যা করে তাহলে ঘুমানোর রুমের দরজা নিশ্চিত ভিতর থেকে বন্ধ করবে। কিন্তু সেটি ছিল না। যে সমস্ত প্রতিবেশীরা লাশ কেটে নিচে নামায় তারা সকলেই রাজুর মায়ের আত্মচিৎকারে ঘরে লাশ ঝুলতে দেখে। ভিতর থেকে কোন ভাবেই দরজা দেওয়া ছিল না। দরজা প্রায় সম্পূর্ণ খোলা ছিল। এদিকে ২১শে ফেব্রুয়ারি লাশ দাফনের দিন তার মেঝ মেয়ে সাজেদা তার ভাই রাজু ও রাজুর স্ত্রীকে মারপিঠ করে আর বলে তুই আমার বাবাকে মেরে ফেলেছিস। ঐ মুহূর্তে মৃত পিতার লাশ নিয়ে টানাটানি ও অন্য ভাইবোনদের চাপের মুখে মেঝ মেয়ে সাজেদা কথা না বললেও এখন এই মৃত্যুর গোমর ফাঁস করতে শুরু করেছে। এলাকাবাসী আরও জানিয়েছে, বিগত দিনে প্রবাসী রাজু তার বাবার স্থাবর অস্থাবর সমস্ত সম্পত্তি জোর করে লিখে নেওয়ার জন্য দড়ি দিয়ে বেঁধে বাবাকে মারপিঠও করেছে। এ ঘটনায় স্থানীয় ভাবে ও সাতক্ষীরা সদর থানায় কয়েকবার বসাবসিও হয়েছে। নিহত আমছদ্দীনের মিলাদের জিলাপি নিয়ে মসজিদে প্রতিবেশীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়ারও সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই বলে এটি আত্মহত্যা না, পরিকল্পিত হত্যা। এ জিলাপি আমরা গ্রহণ করব না। এদিকে বোনেরা ও ভাই পৃথক ভাবে দোয়া মাহফিল করেছে। কেউ কারও আয়োজনে অংশগ্রহণ করে নি। এ বিষয়ে মোবাইল ফোনে তার বড় মেয়ে মাজেদার সাথে যোগাযোগ করে ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি ঘটনার আগের দিন বাবার বাড়িতে ছিলেন একথা অস্বীকার করলেও পরবর্তীতে স্বীকার করেন। এক পর্যায়ে বলেন, আপনারা এ নিয়ে কেন টানাটানি করছেন। আমরা তো আর বাবাকে ফিরে পাবো না। মেঝ মেয়ে সাজেদার সাথে ফোনে যোগাযোগ করা হলে জানায়, আমার বাবা আত্মহত্যা করতে পারে না। আমার বাবাকে পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করা হয়েছে। আমি এর বিচার চাই।
এ বিষয়ে সরাসরি সাক্ষাতের জন্য রাজু সরদারের এলাকাতে কয়েকবার গেলেও তাকে খুজে পাওয়া যায় নি। তার সেল ফোনে এক সপ্তাহ যাবৎ বারংবার ফোন করার পরে রিসিভ হলে সাংবাদিক পরিচয় নিশ্চিত হয়ে কোন কিছু না শুনেই অকথ্য ভাষা ব্যবহার করে ফোনটি কেটে দেন। এ বিষয়ে বাঁশদহা ইউনিয়নের ঐ ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য রিপন হোসেন জানিয়েছেন ঘটনার দিন এ মৃত্যু নিয়ে কেউ বাদী বা অভিযোগ করেনি। সেই কারণে পুলিশের মধ্যস্থতায় লাশ দাফন করা হয়েছে। হত্যা কি আত্মহত্যা তা নিয়ে তিনি কোন মন্তব্য করেন নি।