শ্রীমঙ্গলে সঙ্ঘবদ্ধ বালু সিন্ডিকেটের গডফাদাররা গ্রেপ্তার হবে ?

সংগ্রাম দত্ত: দীর্ঘদিন থেকে মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলায় শক্তিশালী ও সঙ্ঘবদ্ধ সিন্ডিকেট চক্র ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে সব যন্ত্রকে মেনেজ করে উপজেলার বিভিন্ন ছড়া থেকে বালু উত্তোলন করে পাচারের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ফলে সরকার কোটি কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সঙ্ঘবদ্ধ সিন্ডিকেট চক্রটিতে প্রভাবশালীদের অনেকে থাকায় স্থানীয় জনসাধারণ মুখ খুলতে ভয় পায়।

সম্প্রতি শ্রীমঙ্গল উপজেলার ভূনবীর ইউনিয়নের পাত্রীকুল নামক স্থানে ট্রাকের ধাক্কায় এক বৃদ্ধা সহ এক শিশু নিহত হওয়ার ঘটনায় স্থানীয় জনসাধারণ শ্রীমঙ্গল উপজেলার উপজেলা প্রশাসন ইউএনও পুলিশ প্রশাসনের সামনে ঘুষখোর ঘুষখোর বলে স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে বলে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় খবর বেরিয়েছে। বিক্ষুব্ধ জনতা কার হুকুমে এসব উত্তোলন হচ্ছে প্রশ্ন করে প্রশাসনের কাছে জানতে চায়। যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়।

গত ১ জুলাই উপজেলার ভূনবীর ইউনিয়নের পাত্রীকুল নামক স্থানে বাল বুঝাই ট্রাকের ধাক্কায় স্বামী পরিত্যক্তা পেয়ারা বেগম (৫৫) ও আলিশারকুল গ্রামের দুদু মিয়ার মেয়ে সাদিয়া আক্তার (৮) মারা যায়।

মর্মান্তিক দুই মৃত্যুর পর বিক্ষুব্ধ জনতা ইউএনও, স্থানীয় উপজেলা চেয়ারম্যান, পুলিশ প্রশাসনের ওসির সামনে ঘুষখোর ঘুষখোর (ঘুষ গ্রহীতা) বলে স্লোগান দেয় এবং অবিলম্বে ছড়া থেকে বালু উত্তোলন বন্ধের দাবি জানায় জাতীয় ইংরেজি দৈনিক দি অবজারভার পত্রিকায় খবর বেরিয়েছে। গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে যে মৃত ব্যক্তিদের পরিবারবর্গ কে কিছু টাকা পয়সা দিয়ে ম্যানেজ করে কিছুদিন বালু উত্তোলন বন্ধ রেখে পরবর্তীতে আবার চালু করা হবে। অতীতে এরকমের কয়েকটি লোক দেখানো অভিযান পরিচালনা করে দু-একজনের কাছ থেকে জরিমানাও আদায় করা হয়।

উপজেলার শ্রীমঙ্গল ইউনিয়নের দক্ষিণ তালতলা গ্রামের বয়ে যাওয়া ফুল ছড়া থেকে বালু উত্তোলনের ফলে অনুষ্ঠানে নানার সমস্যার সৃষ্টি হওয়ায় বর্ষাকালীন সময়ে ওই এলাকাসমূহ প্লাবিত হয়ে থাকে। ফলে জনসাধারণের দুর্ভোগ বাড়ে। অনেক বড় বড় রাঘববোয়াল এসবের সাথে জড়িত থাকার কারণে স্থানীয় গ্রামবাসীরা মুখ খুলতে সাহস পায় না বলে জানা গেছে।
এ বছরের শুরুতেই জানুয়ারি মাসে শ্রীমঙ্গল উপজেলার নোয়াগাঁও গ্রামের বিস্কুট ফ্যাক্টরির পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া জাগছড়া থেকে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী চক্র মাসুম শীপু ও শাহেদ এর নেতৃত্বে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে ট্রাক বুঝাই করে বিশিষ্ট শিল্পপতি সিরাজুল ইসলাম হারুন ও সাবেক চেয়ারম্যান রাসেন্দ্র দত্তের পতিত জমির উপর দিয়ে ট্রাক দিয়ে পাচার করে বলে জানা যায়। খবর পেয়ে শিল্পপতি সিরাজুল ইসলাম সাহেব লোকজন পাঠিয়ে বালু উত্তোলন বন্ধ করে দেন।

পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে যে স্বার্থের জন্য এক ব্যবসায়ী আরেক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে সাংবাদিক সম্মেলনে করে একে অপরের বিরুদ্ধে বালু উত্তোলনের অভিযোগ এনে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় খবর ছাপিয়েছেন।

জানা গেছে, একটি প্রভাবশালী মহল দীর্ঘদিন ধরে সিন্ডিকেট করে উপজেলার বিভিন্ন ছড়া বা ছোট নদী থেকে বালু উত্তোলন করে আসছে । বিষয়টি সকলের কাছে ওপেন সিক্রেট হয়ে আছে।

উল্লেখ্য যে, ইতিপূর্বে ২০১৯ সালে উপজেলার হিগলিবাজার এলাকায় বালু বোঝাই ট্রাকের চাপায় এক ছাত্র নিহত হয়।
অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের বিষয়ে প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় অসংখ্য প্রতিবেদন প্রকাশিত হলেও সংঘবদ্ধ চক্রের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোনো কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি

সম্পৃক্ত পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button