মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা ১০০ বিজিপি সদস্যকে টেকনাফে স্থানান্তর

টেকনাফ প্রতিনিধি:  মিয়ানমারের যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালিয়ে আসা দেশটির সীমান্ত রক্ষা বাহিনী বিজিপির ১০০ সদস্যকে তুমব্রু সীমান্ত এলাকা থেকে টেকনাফে স্থানান্তর করা হয়েছে।

৮ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে বিজিবির গাড়িতে করে টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা উচ্চ বিদ্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে সীমান্ত রক্ষা বাহিনীর জ্যেষ্ঠ জনসংযোগ কর্মকর্তা শরীফুল ইসলাম জানান।
কেন তাদের স্থানান্তর করা হল- জানতে চাইলে জনসংযোগ কর্মকর্তা বলেন, “প্রশাসনিক সুবিধার কথা বিবেচনা করে তুমব্রু থেকে ১০০ জনকে টেকনাফের হ্নীলাতে স্থানান্তর করা হয়েছে।”
তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে বিজিবির একটি বাস, দুটি সাঁজোয়া যান, তিনটি ট্রাক ও দুটি সেডান কার অপেক্ষা করছে। স্কুলের ভেতর থেকে এক এক করে বিজিপি সদস্যদের গণনা করে প্রথমে বাসে তোলা হয়। সেখানকার সিট পরিপূর্ণ হওয়ার পর বাকিদের ট্রাকে তোলা হয়েছে। তাদের অনেকের গায়ে বাহিনীর পোশাক পরিহিত ছিল। আবার কেউ কেউ সাধারণ পোশাকেও ছিলেন।
বিকাল ৩টা ২৬ মিনিটের দিকে দুটি সাঁজোয়া যানের পাহারায় টেকনাফের দিকে রওনা হয়। এ সময় সেখানে এলাকার উৎসাহী লোকজনকে জড়ো হতে দেখা যায়। কিন্তু সশস্ত্র বিজিবি সদস্যরা তাদের কাছে ঘেঁষতে দেননি।
এ সময় বিজিপির কয়েকজন সদস্যকে খোঁড়াতে দেখা যায়। তাদের অনেকের পায়েই জুতো ছিল না। কয়েকজনের হাতে ও শরীরে ব্যান্ডেজ দেখা গেছে।
সাঁজোয়া যান দুটি সামনে-পিছনে পাহারা দিয়ে ওই বহরটিকে ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয় পর্যন্ত নিয়ে আসে। সেখানে আগে থেকেই মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা দুই শতাধিক জনকে রাখা হয়েছে।
তবে ঘুমধুম থেকে আর কাউকে গাড়িতে তোলা হয়নি। বাকিদের দিয়ে গাড়ির বহর টেকনাফের পথে চলে যায়।
জানা যায়, মিয়ানমার রাখাইন রাজ্যে দেশটির সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সঙ্গে যুদ্ধে টিকতে না পেরে সোমবার কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার পালংখালি ইউনিয়নের রহমতের বিল সীমান্ত পেরিয়ে ১১১ বিজিপি সদস্য বাংলাদেশে এসে বিজিবির কাছে আত্মসমর্পণ করে।
তাদেরকে অস্ত্রমুক্ত করার পর সেখানকার তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বিজিপির হেফাজতে রাখা হয়েছিল। দুদিন তারা সেখানেই ছিলেন।
৩ ফেব্রুয়ারি রাতে বিদ্রোহীরা বিজিপির একটি ফাঁড়ি দখল করে নিলে পরদিন সকালে পালিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ১৪ সদস্য। এরপর থেকে ৭ ফেব্রুয়ারি বুধবার রাত পর্যন্ত সেই সংখ্যা বাড়তে বাড়তে ৩৩০ জনে পৌঁছেছে। বুধবার এসেছেন ৬৪ জন।
তাদের মধ্যে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিজিপি), সেনাবাহিনী, ইমিগ্রেশন সদস্য, পুলিশ ও অন্যান্য সংস্থার সদস্যরা রয়েছেন। তাদের নিরস্ত্র করে নিরাপদ আশ্রয়ে নেওয়ার কথা জানিয়েছে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী।
উল্লেখ্য: এই বিজিপি সদস্যরাই ২০১৭ সাল থেকে বাংলাদেশের বান্দরবানের তমব্রু-কক্সবাজারের টেকনাফ এবং উখিয়া সীমান্তে অবস্থান নিয়ে বাংলাদেশের প্রতি নানা রকম উসকানি দিয়ে আসছিলেন। বাংলাদেশে চলে আসা রোহিঙ্গারা যাতে আর মিয়ানমারে ঢুকতে না পারে এজন্য সীমান্ত ঘেঁষে একাধিক ট্রেঞ্চও তৈরি করেছিলেন।

২০১৪ সালের ২৭ মে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি লেম্বুরছড়ি সীমান্ত থেকে টহলে থাকা বিজিবির নায়েক সুবেদার মিজানুর রহমানকে গুলি করে হত্যা করে বিজিপি সদস্যরা। হত্যার পর তারা মিয়ানমারের অভ্যন্তরে নিয়ে লুকিয়ে রাখে। পরবর্তীকালে বিজিবির হুঁশিয়ারির পরিপ্রেক্ষিতে পাঁচ দিন পর নায়েক সুবেদার মিজানের মরদেহ ফেরত দিতে বাধ্য হয়।
একইভাবে ২০১৫ সালে মিয়ানমারের বিজিপি সদস্যদের হাতে হিংস্রতার শিকার হয়েছিলেন বিজিবির নায়েক রাজ্জাক। ওই বছরের ১৭ জুন ভোরে নাফ নদীর বাংলাদেশ অংশে টহল দেয়ার সময় বিজিপি সদস্যরা নির্বিচারে গুলি করে। এসময় বিপ্লব নামে এক বিজিবি সদস্য গুলিবিদ্ধ হওয়ার পাশাপাশি অপহরণ করে নিয়ে যায় নায়েক রাজ্জাককে। দুই দেশের পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে ৯ দিন পর রাজ্জাককে ২৫ জুন সন্ধ্যায় দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। আসামির মতো বন্দি করে ছবি তোলার পাশাপাশি এক বিজিপি সদস্য কামড়ে তার নাক ছিঁড়ে নিয়েছিলেন।

সম্পৃক্ত পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button