জিয়াবুল হক, টেকনাফ:পাশ্ববর্তী দেশ মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে বিচ্ছিন্নবাদী সশস্ত্র সংগঠন বিদ্রোহী গোষ্টি আরাকান আর্মির হেফাজত থেকে বাংলাদেশি ১৬ জেলেকে ফেরত এনেছেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (২বিজিবি)। আরাকান আর্মি বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর এমন ঘটনা দ্বিতীয়বার ঘটেছে।
১৫ অক্টোবর মঙ্গলবার দুপুরের দিকে ১৬ বাংলাদেশিকে মিয়ানমার থেকে ফেরত আনার বিষয়টি টেকনাফ বিজিবির সদর দফতরে সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন টেকনাফ ২ বিজিবি অধিনায়ক লে. কর্নেল মহিইদ্দীন আহমেদ।
তিনি জানান, গত ২৯ সেপ্টেম্বর কক্সবাজার থেকে ১৬ মাঝিমাল্লা ‘এফবি মা বাবার দোয়া’ নামে একটি ট্রলারে সাগরে মাছ শিকারে বের হয়। পরে গত ৫ অক্টোবর সাগরে তারা একদল ডাকাতের কবলে পড়ে। ডাকাতদল সবকিছু ছিনিয়ে নেওয়ার পর তাদের মারধর করে ট্রলারে বরফ কল ষ্টোরে আটকে দিয়ে ট্রলারটি ছেড়ে দেয়। এক পর্যায়ে ওই ট্রলারটি ভাসতে ভাসতে মিয়ানমারে কূলে চলে যায়। পরে আরাকান আর্মি তাদের উদ্ধার করে হেফাজতে নেয়।’
আরকান আর্মি সাথে আলোচনার মাধ্যমে জেলেদের ফেরত আনা হয়েছে উল্লেখ করে বিজিবির এই কর্মকর্তা বলেন, ‘এরপর বাংলাদেশের বিজিবির সাথে তাদের ফেরতের বিষয়ে যোগাযোগ শুরু করে আরকান আর্মি। আমরা তাদের (আরকান আর্মি) সাথে মুঠোফোনে আলোচনা শেষে গত ১৪ অক্টোবর রাতে অবশেষে তাদের ফেরত আনা হয়। এদের মধ্য একজন টেকনাফের, বাকিরা কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা। তাদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে।’
ফেরত আসা জেলে আব্দুল হাফেজ বলেন, গত সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে আমরা কক্সবাজার থেকে ১৬ মাঝিমাল্লা মাছ শিকারের উদ্দেশ্য সাগরে যায়। পরে গত ৪ অক্টোবর কক্সবাজার পাটোয়ারটেক বরাবর সাগরে ডাকাতদল আমাদের ট্রলারকে উদ্দেশ্য করে গুলি বর্ষণ করে ধাওয়া করে আটক করে।
এরপর আমাদের অমানবিক নির্যাতন করে ও আমাকে অস্ত্র দিয়ে মাথায় আঘাত করে এবং মাঝিকে হাতে গুলি করে। ট্রলারে থাকা জাল ও মাছ লুট করে নিয়ে যায়। পরে ট্রলারে মাছ-বরফের কল ষ্টোরে ভিতরে আলপিন মেরে সবাইকে আটকিয়ে রেখে মিয়ানমার অংশের একটি চরে রেখে চলে যায়। পরে আমাদের নিয়ে যায় আরকান আর্মি। অবশেষে ১৫ দিন পর দেশে ফেরত এসেছি।’
আরেক জেলে রহিম উল্লাহ বলেন, সাগরে যারা নিয়মিত ডাকাতি করে জেলেদের তাদের কবলে পড়ি আমরাও। ডাকাতরা আমাদের কয়েকজনকে অনেক মারধর করে। আমাদের সাথে থাকা জেলেদের কারো কারো মাথায় জখম করে। মাঝি আমান উল্লাহকে হাতে গুলি করে। তারা আমাদের অস্ত্র মুখে জিম্মি করে ট্রলারের মাছের বক্সে আলপিন মেরে আটকিয়ে দিয়ে মিয়ানমারের দিকে ছেড়ে দেয়। পরবর্তী মিয়ানমার একটি চরে আমাদের ট্রলার রেখে চলে যায়। পরে আরকান আর্মি আমাদের উদ্ধার করে। অবশেষে বিজিবি আরকান আর্মির সাথে যোগাযোগের মাধ্যমে আমাদের ফেরত আনে। এ জন্য বিজিবিকে আমরা ধন্যবাদ জানায়।’
এব্যাপারে ট্রলারের মালিক মো. আয়ুব বলেন, আমার মালিকানাধীন ট্রলারে গত ২৮ সেপ্টেম্বর সাগরে মাছ শিকারে যায়। তাদের সঙ্গে কয়েকদিন যোগাযোগ হয়েছিল। এরপর যোযোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়। পরে বিভিন্ন ট্রলার থেকে তাদেও খোঁজ খবর নিয়েছি। খোঁজ না পেয়ে অবশেষে গত ১৫ অক্টোবর বিজিবি ফোন করে জানাল মিয়ানমার থেকে আমার ট্রলারের মাঝিমাল্লা ফেরত এনেছে। অবশেষে ১৫ অক্টোবর মঙ্গলবার জানলাম তারা ডাকাতদলের কবলে পড়েছিল। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া তারা প্রাণে বেঁচে ফেরত এসেছে। কিন্তু আমার ট্রলার এখনো ফেরত পায়নি।’
এর আগে মাছ ধরতে গিয়ে নাফনদীতে অপহৃত বাংলাদেশি পাচঁ জেলেকে ৯ অক্টোবর বিজিবির কাছে হস্তান্তর করছিল বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্টি আরকান আর্মি।