জহিরুল ইসলাম শিবলু, লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি: লক্ষ্মীপুরে বন্যাকবলিত এলাকা থেকে পানি নামতে শুরু করেছে। তবে ধীরগতিতে পানি কমায় পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি খুব একটা। বিভিন্ন সড়ক থেকে পানি কিছুটা নামলেও এখনো বাড়ি-ঘর তলিয়ে রয়েছে। ফলে দুর্ভোগ কমেনি বানভাসি মানুষের। জেলায় এখনো পানিবন্দি ১০ লাখেরও বেশি মানুষ। এদিকে জেলার বিভিন্ন দুর্গম এলাকায় এখনো ত্রাণ না পৌঁছানোয় সংকটে আছেন ওই এসব জায়গার বাসিন্দারা।
পৌর শহরের বাসিন্দা আবদুল হাই বলেন, বুধবারের তুলনায় বৃহস্পতিবার বাসা থেকে দুই থেকে তিন ইঞ্চি পানি কমেছে। কিন্তু সামনের যে সড়ক দিয়ে যাতায়াত করছি, সেখান থেকে পানি একটুও নামেনি। এনামুল হক নামের অপর একজন বলেন, গত ১৫ দিন ধরে পানিবন্দি। তবে অনেক দিন পর সূর্যের দেখা মিলছে। রোদ উঠছে। জমে থাকা জামা-কাপড় শুকাতে পারছি। তবে যেভাবে পানি নামছে, এভাবেই ধীরগতিতে পানি নামলে পরিস্থিতির উন্নতি হতে সময় লাগবে।
রশিদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে আশ্রয় নেওয়া আলেয়া বেগম বলেন, এক বছরের শিশু সন্তানকে নিয়ে অনেক কষ্টে আছি। সামান্য শুকানো খাবার ও ত্রাণ দেওয়া হয়। এটা দিয়ে চলে না।
লক্ষ্মীপুরের ভয়াবহ এ বন্যায় জেলার পাঁচটি উপজেলার ৫৮টি ইউনিয়ন ও চারটি পৌরসভার প্রতিটি এলাকার মানুষ এখনো পানিবন্দি। প্লাবিত রয়েছে বিস্তীর্ণ এলাক।
সরকারি হিসাবে পানিবন্দি রয়েছে অন্তত ১০ লাখ মানুষ। ১৫০টি আশ্রয়কেন্দ্রে ৪০ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। এসব মানুষের কেউ কেউ খাবার, ওষুধ, স্যালাইন ও বিশুদ্ধ পানির সংকটের কথা জানিয়েছেন। এরই মধ্যে দেখা দিয়েছে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে পানিবাহিত নানা রোগ।
আশ্রয়কেন্দ্রে না আসা পানিবন্দি মানুষের দুর্ভোগ আরও বেশি। কোথাও হাঁটু, কোথাও কমর এবং কোথাও গলাপানির নিচে তলিয়ে রয়েছে গ্রামের পর গ্রাম। অনেকেই ত্রাণ পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেছেন। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে রয়েছেন প্রসূতি, শিশু ও বৃদ্ধরা।
সরজমিনে গিয়ে বানভাসিদের সাথে কথা হলে তাঁরা বলেন, আমরা অনেক কষ্টে আছি, থাকার জায়গা নাই, টয়লেট নেই, খাটের এক অংশে কোনো মতে চেপে বসে আছি। সামান্য একটু জায়গায় কষ্ট করে ঘুমাই।
এরপরে কি ঘুম আসে? তোষক ভিজা, বালিশ ভিজা। পানির ওপর ঘুম আসে না। বলতে গেলে আসলে কোনো কিছুই নেই আমাদের। অবস্থা খুবই খারাপ।
তাঁরা আরও বলেন, প্রায় ১৮ থেকে ২০ দিন পানিবন্দি রয়েছি। দীর্ঘসময় পানিবন্দি থাকায় চলাফেরা, রান্নাবান্না, খাওয়া-দাওয়া, পয়ঃনিষ্কাশন, সুপ্রেয় পানির অভাব, রোগবালাই এবং চরম অর্থ কষ্টে রয়েছেন তাঁরা। বন্যা কবলিত হয়ে তাঁদের মতো দুর্দশাগ্রস্ত হয়ে আছেন জেলার লাখ-লাখ মানুষ। এদিকে বন্যায় এখন চারদিকে শুধু পানি আর পানি এতো পানির মধ্যে সংকট সুপেয় পানির। একটি পরিবারে দৈনন্দিন পানযোগ্য পানির যে চাহিদা, তা পুরোপুরি মেটানো সম্ভব হচ্ছে না ত্রাণের পানি দিয়। বন্যার ঘরবাড়ির পাশাপাশি তলিয়ে গেছে নলকূপ।
তাই নিরাপদ পানি উঠছে না নলকূপ দিয়ে। চুলাও পানির নিচে। তাই ফুটিয়েও পানি পান করা যাচ্ছে না। ফলে বন্যা দুর্গত এলাকায় এখন পানযোগ্য পানির জন্য হাহাকার চলছে। তবে যে সব এলাকায় ত্রাণ পৌঁছায়, সেখানে বোতলজাত পানির দেখা পান বন্যার্তরা। যদিও তা প্রয়োজনের তুলনায় নগণ্য। এজন্য লোকজনও খুব বুঝে শুনে পানি পান করেন৷
সদর উপজেলার দিঘলী ইউনিয়নের বাসিন্দা খালেক, লোকমান ও মরিয়ম বলেন, খাবার পানি নিয়ে সমস্যা হচ্ছে। যেটা পাই, কম কম করে পান করি। ত্রাণ হিসেবে বোতলের পানি যথেষ্ট নয়৷ এক-এক জনের পরিবারে ৫-৬ জন সদস্য। যতটুকু পাই, তা দিয়ে হয় না। বাড়িতে থাকা নলকূপের পানিতে আর্সেনিক। আগে যে নলকূপের পানি পান করতাম, সেটা ডুবে আছে। তাই পানি সংগ্রহ নিয়ে অনেক কষ্টে আছি।
লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নাহিদ-উজ-জামান বলেন, বন্যার পানি নামতে শুরু করেছে। তবে মেঘনার পানি বিপৎসীমার অনেক নিচে। ধীরগতিতে পানি নামছে। অনেক খালের বাঁধ কেটে দেওয়া হয়েছে। আশা করি খুব শিগগিরই বন্যার উন্ন