জাফর ইকবাল অপুঃ বাংলাদেশজামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘অন্তবর্তীসরকার দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করার জন্য কর্মতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। দেশের এ শান্তিপূর্ণপরিবেশ বিনষ্ট করার জন্য ফ্যাসিবাদের দোসররা অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ছাত্র-জনতারআন্দোলনের এই বিজয়কে দুষ্কৃতকারীরা যেন নস্যাৎ করতে না পারে এজন্য সাংবাদকিসহ দেশবাসীকে সোচ্চারথাকতে হবে এবং কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে ভূমিকা পালনকরতে হবে। প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। আমাদের ঐক্যকেআরও দৃঢ়তার এবং মজবুত করতে হবে। আমরা একটা ষড়যন্ত্রের মধ্যে সময় অতিবাহিত করছি।’ তিনি বলেন, হাজারো প্রাণের বিনিময়ে আমরা এই দ্বিতীয় স্বাধীনতা পেয়েছি।দেশ গড়ার কাজে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী নিয়োজিত রয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি জনগণেরঐক্য সুদৃঢ় হবে এবং ছাত্র-জনতার সঙ্গে একাকার হয়ে যেকোনো ষড়যন্ত্র এবং চক্রান্ত আমরা মোকাবিলা করব ইনশাআল্লাহ। ২৩আগস্ট (জুময়াবার) রাতে খুলনা মহানগরী জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে নগরীর সোনাডাঙ্গাস্থ আল-ফারুক সোসাইটিতে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে তিনি এ সব কথা বলেন। এ সময় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও খুলনা অঞ্চলের সহকারী পরিচালক মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও অঞ্চল টিম সদস্য মাস্টার শফিকুল আলম, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও খুলনা মহানগরী আমীর অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও খুলনা জেলা আমীর মাওলানা এমরান হুসাইন, মহানগরী নায়েবে আমীর অধ্যাপক নজিবুর রহমান, জেলা নায়েবে আমীর অধ্যক্ষ মাওলানা কবিরুল ইসলাম, মহানগরী সেক্রেটারি এডভোকেট শেখ জাহাঙ্গীর হোসাইন হেলাল, জেলা সেক্রেটারি মুন্সী মিজানুর রহমান, মহানগরী সহকারী সেক্রেটারিএডভোকেট শাহ আলম ও প্রিন্সিপাল শেখ জাহাঙ্গীর আলম, জেলা সহকারী সেক্রেটারি মুন্সি মঈনুল ইসলাম, এডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান, অধ্যাপক মিয়া গোলাম কুদ্দুস, অধ্যক্ষ গওসুল আযম হাদী, মহানগরী ছাত্রশিবির সভাপতি আরাফাত হোসেন মিলন ও সেক্রেটারি মুহাম্মদ নূরুল্লাহ, জেলা সভাপতি মো. রিয়াদ হোসাইন বেলাল, শ্রমিককল্যাণ ফেডারেশনের মহানগরী সভাপতি আজিজুল ইসলাম ফারাজী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সেক্রেটারি জেনারেল সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে বলেন, আজ যেখানে বসে আমরা আপনাদের সাথে মতবিনিময় করছি সেখানে ১০/১২ বছর আগে এখানেই জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ সাংবাদিক সম্মেলনে বক্তব্য রাখার পর তৎকালীন সরকারের পেটোয়া বাহিনী এখানে হামলা করেছিল। তারা শুধু হামলা করেই ক্ষ্যান্ত হননি তাকেসহ আমাদের হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল। পরবর্তীতে তারা এই আল ফারুক সোসাইটি ও মাদরাসাটি দখল করে তাদের নাম দিয়েছিল। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গনঅভ্যুত্থানে তারা দেশ থেকে পালিয়ে গিয়েছে। আমাদের এটি ট্রাস্টের সম্পত্তি। এটা দখল করে রাখা যায় না। তারা এখান থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা লুটপাট করেছে। আমরা বিষয়টি প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষন করেছি। তিনি অপর এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, একটি অবৈধ সরকার একটি রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করতে পারে না। আমীরে জামায়ারে নির্দেশে দেশের জনগণ সে ব্যাপারে কোন আন্দোলন করেননি। তারা জামায়াতকে নিষিদ্ধ করতে গিয়ে তারাই দেশ থেকে বিতাড়িত হয়েছে। আমরা আশা করি খুব শীঘ্রই যে নির্বাহী আদেশে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল সেই নির্বাহী আদেশে আমাদের অধিকার ফিরে পাবো ইনশাআল্লাহ। সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘অন্তবর্তী সরকার দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করার জন্য কর্মতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। দেশের এ শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিনষ্ট করার জন্য ফ্যাসিবাদের দোসররা অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের এই বিজয়কে দুষ্কৃতকারীরা যেন নস্যাৎ করতে না পারে এজন্য দেশবাসীকে সোচ্চার থাকতে হবে এবং কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে ভূমিকা পালন করতে হবে। প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। আমাদের ঐক্যকে আরও দৃঢ়তার এবং মজবুত করতে হবে। আমরা একটা ষড়যন্ত্রের মধ্যে সময় অতিবাহিত করছি।’ সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, হাজারো মানুষের তাজা প্রাণ ও রক্তের বিনিময়ে আজকে বাংলাদেশ স্বৈরাচার মুক্ত হয়েছে। এঅর্জনের একমাত্র কৃতিত্ব শিক্ষার্থীদের, আমাদের সন্তানদের। আমরা যা গত ১৫ বছরে করতে পারিনি আমাদের সন্তানেরা তা করে দেখিয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশকে দ্বিতীয় বারের মতো স্বাধীন করার জন্য আপনাদের প্রিয়জন শহীদ হয়েছেন। শাহাদাত বরণকারী এসব ছাত্র জনতা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। সরকারকেই সকল শহীদের পরিবারের ভরণপোষনের যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। প্রত্যেকের পরিবারকে ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করতে হবে। যাদের রক্তের ওপরে আজকের অন্তর্ব্তীকালীন সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সে সব শহীদ পরিবারের সার্বিক প্রয়োজন পূরণে এগিয়ে আসতে হবে।যারা আহত হয়েছে এবং যারা এখনো চিকিৎসাধীন রয়েছে তাদের রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। তাদের সকলকে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে পুনর্বাসন করতে হবে। সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, টানা ভারীবর্ষণ এবং ভারত থেকে ধেয়ে আসা আকষ্মিক বন্যায় ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জসহ দেশের পূর্বাঞ্চলের ১২টি জেলায় স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের ডুম্বুর বাঁধ খুলে দেয়ায় এসব এলাকায় বন্যা ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। ভারত সরকার এই বাঁধখুলে দিয়ে বাংলাদেশের মানুষকে পানিতে ডুবে মারার ব্যবস্থা করেছে। এসব এলাকার বাড়িঘর, রাস্তা-ঘাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সবকিছু বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে অর্ধকোটি মানুষ। মাছের ঘের, জমির ফসল, তরিতরকারী, ফলের বাগান পানিতে তলিয়ে গেছে। অসংখ্য গবাদি পশু, হাঁস-মুরগি বানের পানিতে ভেসে গেছে। গৃহপালিত পশু-পাখি রাখার জায়গা পাওয়া যাচ্ছে না। কিছু কিছু এলাকায় মানুষের ঘরের ছাদ ও টিনের চাল ছুঁয়েছে বন্যার পানি। এমন পরিস্থিতিতে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন লাখো কোটি মানুষ। তিনি গত ২২ আগস্ট বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান ফেনী, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর জেলার বিভিন্ন বন্যাদুর্গত এলাকায় ছুটে যান এবং বানভাসী মানুষের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেন। এবংআমাদের ত্রাণ ও বন্যা দুর্গতদের উদ্ধার তৎপরতা অব্যহত রয়েছে। অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার আরও বলেন, কথিত বন্ধু ভারত ফারাক্কাসহ অভিন্ন ৫৪টি নদীতে বাঁধ দিয়ে বাংলাদেশের বিশাল এলাকা মরুভূতিতে পরিণত করেছে। ভারত শুকনা মওসুমে পানি আটকিয়ে রাখে, আর বর্ষায় মওসুমে রাতের আধারে একসাথে সব গেট খুলে দেয়। গ্রীষ্মে যখন আমাদের পানির প্রয়োজন হয়, তখন তারা আমাদেরকে পানি না দিয়ে শুকিয়ে মারে। পানির অভাবে হাজার হাজার একর জমির ফসল নষ্ট হয়। আবার বর্ষার মওসুমে যখন পানির প্রয়োজন নেই, তখন পানি ছেড়ে দিয়ে আমাদেরকে বন্যায় ভাসায়। ভারত সরকারের এহেন অমানবিক কর্মকান্ডে আমরা হতবাক।স্বভাবতই আমাদের মনে প্রশ্ন জাগে ভারত আমাদের কেমন বন্ধু! সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক বিপ্লবের পর দেশকে অর্থবহ স্থিতিশীল ও উন্নয়নের জায়গায় নিয়ে যাওয়ার জন্য বৈষম্যহীন, সাম্প্রদায়িক-সম্প্রীতির সমাজ প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন। বিগত ফ্যাসিবাদী সরকারের কর্তা ব্যক্তিগণ, দলীয় সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা দেশে যে নৈরাজ্যকর হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে তাদের অবিলম্বে বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। ‘দেশের প্রতিটি সেক্টরে আইনের শাসন, সব মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। বিগত সরকারের অপকর্মের মদদদাতা কর্মকর্তাদের অপসারণ করে সৎ, দক্ষ ও পেশাদার কর্মকর্তাদের নিয়োগ দিতে হবে। ফ্যাসিবাদীদের লুটপাট করা বিদেশে পাচারকৃত টাকা ফেরত আনার ব্যবস্থা করে দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে হবে।
8