সংগ্রাম দত্ত: স্বামী শিবানন্দ ৮ আগস্ট ১৮৯৬ তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের আসাম প্রদেশের সিলেট জেলার হবিগঞ্জ মহকুমার বাহুবল থানার হরিতলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি হলেন যোগী সন্ন্যাসী এবং যোগগুরু। ১২৮ (২০২৪ সাল পর্যন্ত) বছরের স্বামী ডক্টর শিবানন্দ পৃথিবীর সবচেয়ে বয়স্ক জীবিত ব্যক্তি বলে জানা গেছে।
তাঁর পিতার নাম পিতা শ্রীনাথ গোস্বামী মাতা ভগবতী দেবী। মা, বাবা, কয়েক বছরের বড় দিদি আরতি সহ দ্বারে দ্বারে ভিক্ষা করে জীবন ধারণ করতেন। চরম দারিদ্র্যতার কারণে ৪ বছর বয়সে উনাকে নবদ্বীপের বিখ্যাত সন্ন্যাসী স্বামী ওঙ্কারানন্দর কাছে দিয়ে দেন। এর দুই বছর পর, যখন তাঁর বয়স ৬ বছর, তিনি সন্ন্যাসীর সাথে বাড়ীতে ফিরে এসে শোনেন দিদি না খেতে পেয়ে মারা গেছেন। বাড়ীতে আসার ৭ দিন পর মা-বাবা একই দিনে মারা যান। তিনি স্বামী ওঙ্কারানন্দের সাথে পিতা-মাতার শ্রাদ্ধ শেষ করে ১৯০১ সালে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের নবদ্বীপ গমন করেন। বিদেশি অনুরাগীদের আমন্ত্রণে তিনি ইংল্যান্ড, গ্রিস, ফ্রান্স, স্পেন, অস্ট্রিয়া, ইতালি, হাঙ্গেরি, রাশিয়া, পোল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, নেদারল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড, জার্মানি, বুলগেরিয়া, যুক্তরাজ্যসহ অর্ধশতাধিক দেশ সফর করেছেন।
১৯০১ সালে ভারতবর্ষের নবদ্বীপ গমন করেন ও সেখানে পড়াশোনা শুরু করেন। পরবর্তীতে তিনি কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ থেকে এম বি বি এস পাশ করেন। ১৯২৫ সালে তিনি বিলেত যাত্রা করেন সেখান থেকে মনো বিজ্ঞানে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন।
যোগব্যায়ামের ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য স্বামী শিবানন্দ ২০২২ সালের মার্চ মাসে ভারত সরকার কর্তৃক দেশের চতুর্থ সর্বোচ্চ পদ্মশ্রী পুরস্কারে ভূষিত হন।
ভারতের উত্তরপ্রদেশের বারাণসীতে বসবাসরত চিরকুমার স্বামী শিবানন্দের মানবসেবাই ব্রত। তাঁর কোন রোগ নেই। তিনি স্বল্পহারী, তৈলাক্ত খাবার, দুধ, ফল এড়িয়ে চলেন। চশমা ছাড়াই পড়তে পারেন। ভক্তদের দেওয়া টাকা পয়সা উনি গ্রহণ করেন না। প্রতিদিন যোগ ব্যায়াম করেন। বারাণসীতে (কাশী) উনার এক ভক্তের দেয়া ফ্ল্যাট উনি ছেড়ে দিয়েছেন বাংলাদেশ থেকে যাওয়া পূণ্যার্থীদের জন্য। সেখানে এক মাস থাকা- খাওয়া ফ্রি।
২০২৪ সালের গত ৯ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে আসেন ভারতের ধর্মগুরু স্বামী শিবানন্দ। তিনি ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে যান। পরে আসেন হবিগঞ্জে। তিনি বানিয়াচং উপজেলার দক্ষিণ-পশ্চিম হাওড় পাড় বিখ্যাত তীর্থস্থান বিথঙ্গল আখড়া, মৌলভীবাজারের রাজনগরের বিষ্ণুপদ ধামসহ শতাধিক মন্দির পরিদর্শন করে ভক্তদের দীক্ষাদান করছেন।
সোমবার ( ১৯ ফেব্রুয়ারী ) বাহুবল থানার হরিতলা গ্রামের কৃতি সন্তান যোগ সাধক মানব হিতৈষী পরম বৈষ্ণব ১২৮ বছর বয়সী পদ্মশ্রী পুরস্কারে ভূষিত ড. স্বামী শিবানন্দ’জীকে ৪নং বাহুবল সদর ইউনিয়নের পক্ষ থেকে চেয়ারম্যান আজমল হোসেন চৌধুরী লালগালিচা দিয়ে গণসংবর্ধনা প্রদান করেন। বাহুবলের মৌড়ি গ্রামের মন্দির প্রাঙ্গণে সকাল ১০ ঘটিকায় এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানের সার্বক্ষণিক সহযোগিতা ও সভাপতিত্ব করেন বাহুবল সদর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আজমল হোসেন চৌধুরী।
তাঁর নিজ গ্রাম হরিপুরের শত শত মানুষ তাঁকে দেখতে সেখানে আসেন।
মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) ধর্মগুরু সন্ন্যাসী ডক্টর স্বামী শিবানন্দ (যোগী) সিলেট শহরের মির্জা জাঙ্গাল রাজবাড়ী মাতৃকুঠিরে শ’শ’ শিষ্যকে জীবনমুখী শিক্ষা দেন। গত ২৩ শে ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ভারতে ফিরে যান বলে জানা গেছে।