নটো কিশোর আদিত্য : পহেলা বৈশাখ ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে নতুন করে বছর শুরুর একটি নাম পহেলা বৈশাখ। আবার শুধু ঝড় এলো বলে বিপণীগুলো বন্ধ করে নিরাপদ আশ্রয়ে পৌছাও নয়, গ্রীষ্মের এই দিনটিকে ঘিরে বাঙালির জীবন ও জীবিকার হিসেব-নিকেষও জড়িয়ে আছে।
চৈত্র সংক্রান্তি। পহেলা বৈশাখের মতই বাংলার আরেক চিরায়ত উৎসব হল চৈত্র সংক্রান্তি। নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর উৎসব হল পহেলা বৈশাখ। আর পুরোনো বছরকে বিদায় জানানোর উৎসব হল এই চৈত্র সংক্রান্তি। বছরের শেষ মাস চৈত্র, আর সেই মাসের শেষ দিন, মানে বছরেরই শেষ দিনে হয় এই উৎসবটি। এই দিনে গ্রামেগঞ্জে গান বাজনার মাধ্যমে পুরোনো বছরকে বিদায় জানানো হয়। শুধু তাই নয়, নতুন বছরের জন্য শুভকামনাও করা হয়। চৈত্র মাসের শেষ বিকেল থেকে মধ্য রাত পর্যন্ত নানা জায়গায় উৎসব হয়।
পহেলা বৈশাখ বা পয়লা বৈশাখ (বাংলা পঞ্জিকার প্রথম মাস বৈশাখের ১ তারিখ) বঙ্গাব্দের প্রথম দিন, তথা বাংলা নববর্ষ। দিনটি সকল বাঙালি জাতির ঐতিহ্যবাহী বর্ষবরণের দিন। দিনটি বাংলাদেশ এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গে নববর্ষ হিসেবে বিশেষ উৎসবের সাথে পালিত হয়। ত্রিপুরায় বসবাসরত বাঙালিরাও এই উৎসবে অংশ নিয়ে থাকে। পহেলা বৈশাখ বাংলাদেশে জাতীয় উৎসব হিসেবে পালিত হয়ে থাকে। সে হিসেবে এটি বাঙালিদের একটি সর্বজনীন লোকউৎসব হিসাবে বিবেচিত।
গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জি অনুসারে বাংলাদেশের প্রতি বছর ১৪ই এপ্রিল এই উৎসব পালিত হয়। বাংলা একাডেমি কর্তৃক নির্ধারিত আধুনিক বাংলা পঞ্জিকা অনুসারে এই দিন নির্দিষ্ট করা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে চান্দ্রসৌর বাংলা পঞ্জিকা অনুসারে ১৫ই এপ্রিল পহেলা বৈশাখ পালিত হয়। এছাড়াও দিনটি বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের সরকারি ছুটির দিন হিসেবে গৃহীত। বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যবসায়ীরা দিনটি নতুনভাবে ব্যবসা শুরু করার উপলক্ষ হিসেবে বরণ করে নেয়।
বাংলা নববর্ষের সূচনালগ্ন
বাংলা নববর্ষের গোড়াপত্তনের খোঁজে ফিরে যেতে হবে অনেক অনেক আগে অবাংলা অধ্যূষিত এলাকায়। খ্রিস্টপূর্ব ৫৭ অব্দে প্রাচীন ভারতের রাজা বিক্রমাদিত্যের নামানুসারে হিন্দু বিক্রমী পঞ্জিকা প্রণয়ন করা হয়েছিলো। এই পঞ্জি অনুসারে ভারতের পূর্বাঞ্চল, উত্তর পূর্বাঞ্চল ও নেপালের বিভিন্ন অংশে বসবাসরত গ্রামীণ বাঙালি সম্প্রদায়ের মধ্যে নিছক একটি ঋতু উৎসব হিসেবে প্রচলিত ছিলো পহেলা বৈশাখ।
তবে তার আমেজ বাংলা অব্দি পৌছতে চলে এসেছিলো ৫৯৩ খ্রিস্টাব্দ। ৭ম শতকে বাংলা বর্ষের প্রমাণ সময়ে বেশ পরিবর্তন এনে বাংলার বুকে বাংলা দিনপঞ্জির উদ্ভব ঘটান বাংলার প্রথম স্বাধীন নৃপতি গৌড়েশ্বর মহারাজাধিরাজ শশাঙ্ক মহাদেব।
বাংলা পঞ্জিকা ও বাংলা নববর্ষ
ভারতবর্ষে মুঘল শাসনামলে আরবী হিজরী পঞ্জিকা অনুযায়ী কৃষি পণ্যের খাজনা আদায়ের কাজ করা হতো। কিন্তু এই বর্ষপঞ্জি কৃষিকাজের জন্য উপযোগী ছিল না, কারণ চন্দ্র বছরের ৩১ বছর সৌর বছরের ৩০ বছরের সমান। কৃষিকাজ সৌর বছরের হিসাবের ওপর নির্ভর করা সত্ত্বেও চন্দ্র বছরের হিসাবেই কৃষকদের রাজস্ব প্রদানে বাধ্য করা হতো। তাছাড়া চন্দ্র বছরের ৩৫৪ দিন আর সৌর বছর ৩৬৫ বা ৩৬৬ দিনের মধ্যে ১১ বা ১২ দিনের ব্যবধান। ফলে রাজস্ব আদায় সহ অন্যান্য কাজকর্মে প্রশাসনিক জটিলতা তৈরি হতো। এমতাবস্থায় ১৫৮৫ সালের ১০ কিংবা ১১ মার্চ-এ মুঘল সম্রাট আকবর এক ডিক্রি জারির মাধ্যমে প্রবর্তন করেন প্রাথমিক বাংলা সন তারিখ-এ-এলাহী। এই গণনা পদ্ধতির হিসেব কার্যকর হয়েছিলো সম্রাট আকবরের সিংহাসনের অধিষ্ঠিত হওয়া সময় অর্থাৎ ১৫৫৬ সালের ৫ নভেম্বর থেকে। তিনি একটি কর্মপোযোগী, বৈজ্ঞানিক, ও সার্বজনীন বর্ষপঞ্জি প্রণয়নের লক্ষ্যে সে সময়ের বিখ্যাত বিজ্ঞানী ও জ্যোতির্বিদ আমীর ফতুল্লাহ সিরাজিকে নতুন বর্ষপঞ্জি তৈরির নির্দেশ দেন। এভাবে রাজস্ব আদায়ের সংস্কারের পটভূমিতে জন্ম নেয় আধুনিক বাংলা সন। প্রথমে ফসলি সন নামে প্রকাশ পেলেও, পরে তা বহুলভাবে পরিচিতি পায় “বঙ্গাব্দ” বা বাংলা বর্ষ হিসেবে।
বিবর্তনে বাংলা নববর্ষ
ভারতের অঙ্গরাজ্যগুলোতে প্রচলিত বাংলা দিনপঞ্জির উৎস ছিলো সংস্কৃত গ্রন্থ সূর্য সিদ্ধান্ত। এখানেই পাওয়া যায় সংস্কৃত শব্দের বাংলা বারো মাসের নাম। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ সহ অন্যান্য অঙ্গরাজ্যের বাঙালিরা এই চান্দ্রসৌর পঞ্জিকা মতে প্রতি বছর ১৫ এপ্রিলকে নববর্ষ রূপে গ্রহণ করে।
তবে ১৯৬৬ সালে তৎকালীন পূর্ব বাংলায় ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ বাংলা দিনপঞ্জি সংশোধন কমিটি গঠন করেন। সংশোধিত পঞ্জিকায় প্রথম পাঁচ মাস-এ ৩১ দিন, আর বাকি সাত মাসে ৩০ দিন নির্ধারিত হয়। অধিবর্ষের ক্ষেত্রে ফাল্গুন মাসটিতে একটি অতিরিক্ত দিন যুক্ত করে ৩১ দিন করা হয়। ১৯৮৭ সালে স্বাধীন বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিকভাবে এই দিনপঞ্জি গৃহীত হয়। তখন থেকে প্রতি বছর বাংলা নববর্ষ ১৪ এপ্রিলেই উদযাপিত হয়ে থাকে। ১৪২৬ বঙ্গাব্দ ২০১৯ সালে দ্বিতীয়বারের মত সংশোধন হয় বাংলা ক্যালেন্ডার। উদ্দেশ্য ছিলো বিশ্বব্যাপি গৃহীত গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জির সঙ্গে বাংলা দিনপঞ্জির বিশেষ দিনগুলোর সামঞ্জস্য বিধান। বাংলা একাডেমি কর্তৃক পরিবর্তিত নতুন বর্ষপঞ্জিতে প্রথম ছয়টি মাস তথা- বৈশাখ, জ্যৈষ্ঠ, আষাঢ়, শ্রাবণ, ভাদ্র এবং আশ্বিন-এ ৩১ দিন ধার্য করা হয়। ফাল্গুন মাস ছাড়া বাকি পাঁচ মাসের জন্য নির্ধারিত হয় ৩০ দিন। আর ২৯ দিনের ফাল্গুন মাসকে শুধুমাত্র অধিবর্ষের বছরগুলোতে হিসেব করা হবে ৩০ দিন ধরে।
বছরক্রান্তিতে হালখাতা
সম্রাট আকবরের বাংলা সন প্রবর্তনের সাথে যুগপৎ ভাবে শুরু হয় হালখাতার প্রথা। পুরনো বছরের হিসাব গুটিয়ে নতুন হিসাব খোলার খাতাকে নাম দেয়া হয় হালখাতা। ১৬১০ সালে সম্রাট জাহাঙ্গীরের নির্দেশে তৎকালীন ঢাকার সুবেদার ইসলাম খান চিশতি নিজ বাসভবনের সামনে প্রজাদের মিষ্টি বিতরণ করতেন। খাজনা আদায় ও হিসাব নিকাশের সাথে সাথে চলতো নানান উৎসব ও হালখাতার অনুষ্ঠান। পরবর্তীতে ব্রিটিশ আমলে ঢাকার ফরাশগঞ্জের রূপলাল হাউস, মিটফোর্ডের নলগোলার ভাওয়াল রাজার কাচারিবাড়ি, এবং পাটুয়াটুলীর সামনে প্রতিবছর পয়লা বৈশাখে এরকম আয়োজন হতো পুণ্যাহ নামে।
কৃষি নির্ভর সমাজ হাতে নগদ পয়সা আসার একমাত্র মাধ্যম ছিলো ফসল বিক্রি। ফলনের মৌসুমে ফসল বিক্রির টাকা হাতে পাওয়া না গেলে কৃষকসহ ব্যবসায়ীদের সকলেই খালি হাতে থাকতেন। ফলে সারা বছর তাদের বাকিতে জিনিসপত্র কিনতে হতো। এই পয়লা বৈশাখই ছিলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ যখন তারা নিজেদের বাকির টাকা পরিশোধ করতেন। কেউ কেউ কিছু পরিশোধ করে নতুন বছরের জন্য নতুন হিসেবের খাতা খুলতেন। বিপণীরা তখন বাকিতে এদের কাছে পণ্য বিক্রি করতেন। কেউবা আসন্ন বছরের জন্য অগ্রিম অর্থ দিয়ে লেনদেন চালু রাখতেন। সবাই সবার পরিচিত ছিলো বলে পরস্পরের ভেতর অগাধ বিঃশ্বাস কাজ করতো।
১৯৬০-১৯৭০ দশকে পুরান ঢাকায় হিন্দু ব্যবসায়ী বিশেষ করে পাইকারি ব্যবসায়ীদের মধ্যে হালখাতা প্রথা অনুসরণের প্রবণতা ছিল। এমনকি বেশ ভাবগাম্ভীর্যের সাথেই পালিত হতো অসাম্প্রদায়িক এই আচার-অনুষ্ঠানটি। হালনাগাদের খাতাটি ছিল লাল রঙের লাল সালু কাপড়ের মলাটে মোড়ানো। দুই-তিন ভাঁজ করে তার উপর ফিতা দিয়ে বেঁধে রেখে হাত বিনিময় হতো। এই খাতাটিই ছিলো বিগত বছরের যাবতীয় হিসাবের বিবরণী নথি।
ছায়ানটের বর্ষবরণ
রাজধানী ঢাকায় পহেলা বৈশাখের মূল অনুষ্ঠানের কেন্দ্রবিন্দু সাংস্কৃতিক সংগঠন “ছায়ানট” ছায়ানটের সঙ্গীতানুষ্ঠানের মাধ্যমে নতুন বছরের সূর্যকে আহ্বান। রমনা বটমূলে ছায়ানটের সঙ্গীতে বাংলা নতুন বছরকে বরণ করে নেয়ার প্রথা শুরু হয় ১৯৬৭ সাল থেকে। বটমূল নামে পরিচিত মঞ্চটি মুলত অশ্বত্থ গাছের ছায়ায় নির্মিত বিশাল বেদী। ছায়ানটের শিল্পীদের সম্মিলিত কণ্ঠে এই গানের নেপথ্যে ছিলো ১৯৬০-এর দশকের পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর নিপীড়ন ও সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের প্রতিবাদ।
আবহমান বাংলার মঙ্গল শোভাযাত্রা
ঢাকার বৈশাখী উৎসবের একটি আবশ্যিক অঙ্গ মঙ্গল শোভাযাত্রা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে পহেলা বৈশাখের সকালে এই শোভাযাত্রাটি বের হয়ে শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে পুনরায় চারুকলা ইনস্টিটিউটে এসে শেষ হয়। এই শোভাযাত্রায় গ্রামীণ জীবন এবং আবহমান বাংলাকে ফুটিয়ে তোলা হয়। শোভাযাত্রায় সকল শ্রেণী-পেশার বিভিন্ন বয়সের মানুষ অংশগ্রহণ করে। শোভাযাত্রার জন্য বানানো হয় বিভিন্ন রঙের মুখোশ ও বিভিন্ন প্রাণীর প্রতিকৃতি। ১৯৮৯ সাল থেকে এই মঙ্গল শোভাযাত্রা পহেলা বৈশাখ উৎসবের একটি অন্যতম আকর্ষণ হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।
জাতিসংঘের অঙ্গসংস্থা ইউনেস্কো বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আবেদনক্রমে ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দের ৩০শে নভেম্বর বাংলাদেশের ‘‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’’কে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ অধরা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে। ইথিওপিয়ার রাজধানী শহর আদ্দিস আবাবা’য় ২৮ নভেম্বর থেকে ২ ডিসেম্বর ২০১৬ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত ইউনেস্কোর সংশিষ্ট আন্তজাতিক পর্ষদ (অধরা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রক্ষার জন্য আন্তঃসরকার কমিটি) বাংলাদেশ সরকারের প্রস্তাবটি অনুমোদন করে। বাংলাদেশের প্রস্তাব অনুমোদনক্রমে ইউনেস্কো লিখে: “মঙ্গল শোভাযাত্রা হল জনসাধারণের একটি উৎসব যা ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখে (নববর্ষের দিনে) উদযাপন করা হয়, যা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের দ্বারা আয়োজন করা হয়। ঐতিহ্যটি ১৯৮৯ সালে শুরু হয়, যখন সামরিক শাসনের অধীনে বসবাসরত হতাশ শিক্ষার্থীরা সম্প্রদায়কে একটি উন্নত ভবিষ্যতের আশা দিতে চেয়েছিল। এটির বৈশিষ্ট্যের মধ্যে রয়েছে মুখোশ ও ভাসমান প্রতিকৃতি যা শক্তি, শান্তি এবং অগ্রগতির জন্য অশুভকে দূরে সরানোর প্রতীক। বিদ্যালয়ের দ্বারা ভাগভাগি করা জ্ঞানের উপাদানসহ, এটি জনসংহতি এবং গণতন্ত্রকে প্রচার করে।”
১৯৮৬ সালে চারুপীঠ নামের একটি বেসরকারি সংগঠন যশোরে সর্বপ্রথম নববর্ষ উপলক্ষে আনন্দ শোভাযাত্রা বের করে। পাপেট, বাঘের প্রতিকৃতি, পুরানো বাদ্যযন্ত্রসহ নানা শিল্পকর্ম দিয়ে সাজানো শোভাযাত্রাটি দেশ জুড়ে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করে।
অতঃপর এর আদলেই ১৯৮৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইন্সটিটিউটের উদ্যোগে আয়োজিত হয় আরো একটি শোভাযাত্রা। তবে এবারের প্রেক্ষাপট ছিলো ১৯৮০’র দশকের স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের এক হওয়া এবং শান্তির বিজয় ও অপশক্তির অবসান কামনা। সেই আনন্দ শোভাযাত্রাটি সকল স্তরের মানুষের মাঝে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়। সেদিন থেকে প্রতি বছর বৈশাখের প্রথম সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইন্সটিটিউটের শিক্ষক-শিক্ষার্থীবৃন্দ এই আনন্দ শোভাযাত্রা অব্যাহত রাখে। বিশালাকার পুতুল, বিভিন্ন পশুপাখির বিচিত্র মুখোশ ও সাজসজ্জ্বার পাশাপাশি বাদ্যযন্ত্র ও নৃত্যের মাধ্যমে জাকজমক করে তোলা হয় এই আনন্দ শোভাযাত্রা।
প্রথম দিকে চারুকলার এই শোভাযাত্রাটির নাম ছিলো বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা। পরবর্তীতে ১৯৯৬ সাল থেকে এটি মঙ্গল শোভাযাত্রা হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।
সব মিলিয়ে বাংলা নববর্ষ শুধুমাত্র বিনোদনের উৎস নয়; বরং বাঙালি জাতির শত-সহস্র বছরের পুনঃজাগরণের প্রতীতি। এর নিরিখে প্রতি বছর কালবৈশাখী ঝড়ের মাঝেও বাঙালির উৎসব মুখরতা পাতালের বুকে শক্ত ভীত গড়ে বিদ্যমান থাকার বিকশিত স্বকীয়তার জানান দেয়। সর্বস্তরের বাঙালিদের জীবিকার দ্যোতনার বৈশাখী মেলাগুলো সরবে আলিঙ্গন করে নেয় নতুন বছরকে। বিগত মলিন বছরের ভস্মের মাঝেই অঙ্কুরিদগম হয় নতুন বছরকে ধুয়ে মুছে সাফ করার অনুপ্রেরণার।
নতুন বছরের উৎসবের সঙ্গে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর কৃষ্টি ও সংস্কৃতির নিবিড় যোগাযোগ। গ্রামে মানুষ ভোরে ঘুম থেকে ওঠে, নতুন জামাকাপড় পরে এবং আত্মীয়স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবের বাড়িতে বেড়াতে যায়। বাড়িঘর পরিষ্কার করা হয় এবং মোটামুটি সুন্দর করে সাজানো হয়। বিশেষ খাবারের ব্যবস্থাও থাকে। কয়েকটি গ্রামের মিলিত এলাকায়, কোন খোলা মাঠে আয়োজন করা হয় বৈশাখী মেলার। মেলাতে থাকে নানা রকম কুটির শিল্পজাত সামগ্রীর বিপণন, থাকে নানারকম পিঠা পুলির আয়োজন। অনেক স্থানে ইলিশ মাছ দিয়ে পান্তা ভাত খাওয়ার ব্যবস্থা থাকে। এই দিনের একটি পুরনো সংস্কৃতি হলো গ্রামীণ ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন। এর মধ্যে নৌকাবাইচ, লাঠি খেলা কিংবা কুস্তি একসময় প্রচলিত ছিল। বাংলাদেশে এরকম কুস্তির সবচেয়ে বড় আসরটি হয় ১২ বৈশাখ, চট্টগ্রামের লালদিঘী ময়দানে, যা জব্বারের বলি খেলা নামে পরিচিত
সূত্র: উইকিপিডিয়া,ইউএনবি।