বরিশাল বিভাগের শ্রেষ্ঠ “জয়িতা” ঝালকাঠির বাউল ছালমা

ঝালকাঠি প্রতিনিধিঃ গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অন্যতম একটি মহতী উদ্যোগ “জয়িতা অন্বেষণে বাংলাদেশ” শীর্ষক কার্যক্রমে ২৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৪. রোজ মঙ্গলবার বেলা ১১টায় বরিশাল জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে বরিশাল বিভাগীয় পর্যায়ে “সমাজ উন্নয়নে অসামান্য অবদান রেখেছে যে নারী” ক্যারাগরিতে শ্রেষ্ঠ জয়িতা সম্মাননা পেলেন ঝালকাঠি জেলার রাজাপুর উপজেলার বড়ইয়া ইউনিয়নের সংরক্ষিত নারী ইউপি সদস্য মোসাঃ ছালমা বেগম (বাউল ছালমা)।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমা মোবারেক। বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার মোঃ শওকত আলী এর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর গ্রেড-১ এর মহাপরিচালক কেয়া খান, বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজি মোঃ জামিল হাসান (পিপিএম-সেবা ও পিপিএম), বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার জিহাদুল কবির (পিপিএম-সেবা ও পিপিএম), মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের পরিচালক (যুগ্মসচিব) জাকারিয়া আফরোজ, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের কর্মসূচি পরিচালক (যুগ্মসচিব) সালেহা বিনতে সিরাজ ও জেলা প্রশাসক মোঃ শহিদুল ইসলাম বরিশাল।
অনুষ্ঠান পরিচালনায় ছিলেন বরিশালের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার সার্বিক  মোঃ পারভেজহাসান (বিপিএএ) ও বরিশাল মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মেহেরুন নাহার মুন্নি।
ঝালকাঠি জেলার রাজাপুর উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল বড়ইয়া ইউনিয়নের মেয়ে ছালমা বেগম। বিশখালি নদীর তীরবর্তী ভাঙ্গন কবলিত এলাকায় বেড়ে ওঠা ছালমার, স্বামীর বাড়িও একই এলাকায়। দরিদ্র ঘরে জন্ম নেয়া ছালমা বেগমের সমাজসেবা, জনসেবা ও গানের প্রতি আন্তরিকতা কমাতে পারেনি শত দারিদ্রতা। আর সেই শক্তি দিয়ে-ই ২৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৪ পেলেন “সমাজ উন্নয়নে অসামান্য অবদান রেখেছে যে নারী” ক্যাটাগরিতে বিভাগীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ “জয়িতা” সম্মাননা।
ছালমা পল্লীগীতির তালিকাভুক্ত নিয়মিত কন্ঠশিল্পী বাংলাদেশ টেলিভিশনের এবং বাউল গানের নিয়মিত কণ্ঠশিল্পী বাংলাদেশ বেতার বরিশালের।
উপজেলার বড়ইয়া ইউনিয়নের ৮ নং দক্ষিণ বড়ইয়া ওয়ার্ডের কৃষক মরহুম ইয়াকুব আলীর ২য় মেয়ে এবং ৯ নং পালট ওয়ার্ডের জনপ্রিয় সমাজকর্মী ও সাংবাদিক আলমগীর শরিফের স্ত্রী এবং বর্তমানে ইউনিয়নের ৭,৮,৯ নং ওয়ার্ডের নারী ইউপি সদস্য।
ছালমা বেগম ইউপি সদস্য হিসেবেও এলাকায় বেশ জনপ্রিয়। সমাজসেবা ও জনসেবায় প্রতিনিয়ত ছুটে চলাই এই জনপ্রিয়তার কারন। সমাজসেবার পাশাপাশি প্রতিনিয়তই করে থাকেন কন্ঠেরসেবা ও জনসেবা। তাইতো আজ বরিশাল বিভাগের শ্রেষ্ঠ “জয়িতা”, বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বরিশাল বেতারের নিয়মিত কণ্ঠশিল্পী তিনি।
বাউল ছালমা নামে পরিচিতি লাভ করা ছালমা বেগমের গানে যেমন দক্ষতা তেমন সামাজিক বিভিন্ন ভালো কর্মকান্ডের কারনেও আলোচিত সে। অদম্য মনোবল নিয়ে এগিয়ে চলার কারনেই আজকে তিনি হয়েছেন রাজাপুর উপজেলা, ঝালকাঠি জেলা ও বরিশাল বিভাগের শ্রেষ্ঠ জয়ীতা। পেয়েছেন ২০২৩ সালের “সাইবার ক্রাইম” এর উপর আন্তর্জাতিক গ্রামীণ নারী দিবসে জেলার অপরাজিতা নেটওয়ার্ক থেকে সম্মাননা স্মারক। গান গেয়ে তিনি অর্জন করেছেন একাধিক সনদ, পুরস্কার ও সম্মাননা স্মারক। এছাড়াও নিজেকে সাবলম্ভী হিসেবে সৃষ্টির লক্ষ্যে সেলাই কাজ, কৃষি কাজ, হাস মুরগী, ভেড়া ও গবাদিপশু পালন, মাছ চাষ এবং কম্পিউটার চালানো সহ একাধিক প্রশিক্ষণের সনদ আছে তার দক্ষতার ঝুলিতে।
গানের প্রতি তার টান এবং ভালোবাসা দেখে স্থানীয় সংগীতশিল্পী আব্দুর রাজ্জাক তাকে গান শেখানোর দায়িত্ব নেন ৪র্থ শ্রেণীতে লেখা পড়া অবস্থায়। ২০০৮ ইং সন থেকে এর পাশাপাশি গানে যথেষ্ট সহযোগীতা করেছেন রাজাপুর সদরের মাঈনুল মৃধা, বরিশালের সংগীত পরিচালক ঈমন খান, রাজাপুরের আসলাম হোসেন মৃধা, সাংবাদিক আঃ রহিম রেজা ও সিরাজুল ইসলাম। বর্তমানে সংগীত চর্চা করছেন দেশর অন্যতম কণ্ঠশিল্পী আশরাফ উদাস এর কাছে। এছাড়াও সকল ভালো কর্মে উৎসাহিত করেছে জেলা উপজেলার সকল সাংবাদিকরা-সহ সকল পদমর্যাদার কর্মকর্তারা। গুরুজনদের শিক্ষা ও সহযোগিতা পেয়ে তিনি উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে অনেক পুরস্কার জিতে নেন। তবে স্বমীর ইচ্ছা ও প্রচেষ্টায় আজকে ছালমা বেগম এ পর্যন্ত এসেছেন বলে প্রকাশ করেন তিনি। ছোটবেলা থেকেই সংগীতপ্রেমী হওয়ায় নিজেই শতাধিক গান রচনা, সুর দেওয়া ও সংগীত পরিবেশন করে সুনাম অর্জন করেছেন। জেলার বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশনের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আমন্ত্রিত হয়ে দেশাত্মবোধক, বাউল, পল্লীগীতি, লোকগীতি, ভাওয়াইয়া,ছায়াছবি, আদ্যাধিক, দরবারি ও ফোক গান গেয়ে থাকেন ছালমা। যার কারনে আজ তিনি সবার কাছে বাউল ছালমা হিসেবেই পরিচিত।

সম্পৃক্ত পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button