প্রভাবশালীর প্রভাবে শতাধিক  একর জমিতে বিদ্যুৎ নেই ফলে চাষিরা বিপাকে

 দিনাজপুর হিলি প্রতিনিধি: উত্তরাঞ্চলের শস্য ভান্ডার খ্যাত দিনাজপুরের জেলার হাকিমপুরকে শতভাগ বিদ্যুতায়নের আওতায় এনেছে সরকার। কিন্তু  হাকিমপুর উপজেলার  আলীহাট ইউনিয়নের কোকতারা গ্রামে  শতাধিক একর জমির চাষাবাদে  বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। ফলে এসব জমির চাষাবাদ নিয়ে বিপাকে চাষিরা। বিদ্যুৎ সংযোগ  না-থাকায় বিগত পাঁচ বছর ডিজেল চালিত সেচপাম্প দ্বারা পানি সেচ দিয়ে আসছেন তারা। এতে  কয়েকগুণ বাড়তি খরচ করতে হয় তাদের। দপ্তর দপ্তরে ঘুরেও বিদ্যুৎ সংযোগ পাচ্ছে না এখানকার চাষিরা।

গেলো মঙ্গলবার ২০ ফেব্রুয়ারি  সরেজমিনে উপজেলার কোকতারা গ্রামের মাঠে  দেখা যায়,  শতাধিক একর জমিতে রয়েছে বিদ্যুৎ সংযোগহীন একটি গভীর নলকূপ। তবে নলকূপের পাশ দিয়ে রয়েছে বিদ্যুতের পৈলসহ লাইন। কিন্তু এই নলকূপের সাথে নেই বিদ্যুৎ সংযোগ। ফসল ফলার তাগিদে ডিজেল চালিত সেচ পাম্প দিয়ে এই শতশত একর  জমিতে চাষাবাদ করছেন তারা। প্রতি একর সেচ  পানির মুল্য দিতে হয় প্রায় ১২ হাজার টাকা। অথচ বিদ্যুৎ সংযোগের মাধ্যমে খরচ হয়ে থাকে  ৩হাজার ৬০০ টাকা। ৮হাজার ৪শত  টাকা বেশি ব্যয় করতে হয় এখানকার কৃষকদের। এতে করে বছরে তিনটি ফসল ফলাতে লোকসানের সম্মুখীন হতে হচ্ছে তাদের। এতেকরে দিনদিন এই তিন শতাধিক একর ফসলি জমিতে ফসল ফলাতে আগ্রহ হারিয়ে সর্বশান্ত হতে বসেছে এখানকার কৃষকেরা।

জানা যায়, ২০০৪ সালে প্রথম বিদ্যুৎ সংযোগের মাধ্যমে এখানে চালু হয় গভীর নলকূপটি।  ২০১৮ সাল পর্যন্ত এই মাঠের কৃষকেরা এই নলকূপটি সচল পেয়েছিলো। কিন্তু কাদের নামে এক প্রভাবশালী নলকূপটিকে নিজের বলে দাবি করে এবং প্রভাব খাটিয়ে নলকূপটির বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। কোন মতেই বিদ্যুৎ সংযোগটি না পেয়ে চাষাবাদ নিয়ে দিশেহারা এখানকার ভুক্তভোগী চাষিরা।

মহির উদ্দিন, আলম হোসেন, জহুরুল ইসলাম সহ ভুক্তভোগী কৃষকেরা বলেন, আমরা কোকতারা গ্রামের অসহায় কৃষক। বর্তমান সরকার আমাদের উপজেলাকে শতভাগ বিদ্যুতায়নের আওতায় এনেছে। অথচ আজ আমরা কৃষি কাজে বিদ্যুৎ সংযোগ থেকে বিচ্ছিন্ন। গত ৫ বছর যাবৎ বিদ্যুৎ না পেয়ে চাষাবাদ নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছি। আমাদের এই  শতাধিক  একর জমির চাষাবাদ নিয়ে  অনিশ্চয়তায় পড়ে আছি। সরকার সেচে ভর্তুকি দিচ্ছেন। অথচ আমরা তা থেকে বঞ্চিত রয়েছি।

তারা আরও বলেন, বছরে আমরা তিনটি ফসল ফলাই। ডিজেল দিয়ে আবাদ করতে আমাদের কয়েকগুণ বাড়তি খরচ হয়ে যায়। একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি আমাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করে রেখেছে। কোথাও কোন অভিযোগ দিয়ে আমাদের সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রীর নিকট আমাদের আকুল আবেদন বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে আমাদের বাঁচান।

হাকিমপুর  উপজেলা পরিষদের  ভাইস চেয়ারম্যান শাহিনুর রেজা শাহিন বলেন, উপজেলার কোকতারা গ্রামে প্রায় শতাধিক  একর জমিতে বিদ্যুৎ সংযোগ নেই, আমি বিষয়টি জানি। বিগত ৫ বছর ধরে বিদ্যুৎ নেই, আগে সংযোগটি ছিলো। কাদের নামের একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি তার প্রভাব খাটিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যুৎ সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে। এতোগুলো জমিতে ডিজেল চালিত মেশিন দ্বারা পানি সেচ দিয়ে ফসল ফলাতে তারা হিমশিম খাচ্ছে। আমি সরকার এবং জেলা প্রশাসক মহোদয়ের নিকট অনুরোধ করছি দ্রুত বিদ্যুৎ সংযোগ দিবেন এবং এই ৩ শতাধিক একর জমিতে ফসল ফলাতে কৃষকদের উৎসাহিত করবেন।

এবিষয়ে হাকিমপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার অমিত রায় বলেন, কোকতারা গ্রামের গভীর নলকূপের বিষয়টি অবগত আছি। কয়েক দিনের মধ্যে গ্রামবাসী সহ দুই পক্ষকে নিয়ে বসবো এবং এর একটা সমাধান করবো।

সম্পৃক্ত পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button