পাথরঘাটার বধ্যভূমি এখন ট্রলার মেরামতের কারখানা!

হিমাদ্রি শেখর কেশব, বরগুনা: পাক হানাদার বাহিনী বাঙালিদের নিশ্চিহ্ন করার জন্য দেশের বিভিন্ন এলাকায় যে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল, তার সাক্ষী হিসেবে দাঁড়িয়ে থাকা পাথরঘাটার লঞ্চঘাটের পূর্ব পাশের স্থানটি এখন প্রভাবশালী মহলের ট্রলার তৈরি ও মেরামত করার স্থান হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। অযত্নে-অবহেলায় পড়ে রয়েছে ৫২ বছর।

ইতিহাস থেকে জানা যায়, স্থানীয় রাজাকার ও শান্তি কমিটির সদস্যরা ’৭১-এর ১৫ মে পাক হানাদার বাহিনীকে পাথরঘাটা নিয়ে আসে। তাদের সহায়তায় পাথরঘাটা বন্দর ও গহরপুর গ্রামের সতীন্দ্র হাওলাদারের বাড়িতে আশ্রয় নেয়া সাতজন মুক্তিকামী মানুষকে ধরে এনে পাথরঘাটা লঞ্চঘাটের পূর্ব পাশে বিষখালী নদীর তীরে হত্যা করা হয়। এদের মধ্যে ছিলেন দীলিপ শাহ, প্রহ্লাদ মিস্ত্রী, ক্যাশফ চন্দ্র গাইন, জাদব গাইন, রাম চন্দ্র গাইন, দীলিপ গাইন। এদেরকে নির্বিচারে হত্যা করে স্বজনের কাছে লাশ না দিয়ে নদীতে ভাসিয়ে দেয়া হয়।

এ প্রসঙ্গে শহীদ পরিবার সদস্য বিজয় সাহা বলেন, পাথরঘাটা উপজেলায় নতুন নতুন অফিস, রাস্তাঘাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ অনেক উন্নয়নমূলক কাজ হয়েছে। এগুলো দেখলে আমার খুব ভালো লাগে। স্বাধীনতার ফসল এসব। কিন্তু যেখানে আমার ভাইসহ ছয়জনকে পাকবাহিনী হত্যা করেছে সেই স্থানটি আজও সংস্কার করা হয়নি। এখন এই স্থানটি প্রভাবশালীরা ট্রলার তৈরি ও মেরামতের কাজে ব্যবহার করছে। অযত্ন-অবহেলায় পড়ে রয়েছে এই বধ্যভূমিটি।

পাথরঘাটার সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও শহীদ পরিবারের সদস্য রফিকুল ইসলাম রিপন বলেন, পাথরঘাটা লঞ্চঘাটের পূর্ব পাশে ৭ জনকে হাত-পা বেঁধে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করে নদীতে ফেলে দেয়। আমি উপজেলা চেয়ারম্যান থাকা কালে সেই জায়গাটাকে চিহ্নিত করেছিলাম। তবে জায়গাটি এখন স্থানীয় প্রভাবশালীদের দখলে আছে। সেখানে চলছে ট্রলার তৈরির কাজ।

স্থানীয় সাংবাদিক এবং আমরা মুক্তিযুদ্ধকে জানি’র প্রতিষ্ঠাতা শফিকুল ইসলাম খোকন এ প্রসঙ্গে বলেন, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাথরঘাটার লঞ্চঘাটের পূর্ব পাশের যে স্থানটিতে ৭ জনকে প্রকাশ্য দিবালোকে গুলি করে মেরে নদীতে ফেলে দেয়া হয়, সেই জায়গাটির কোনো স্মৃতি চিহ্ন এখন দেখা যায় না। এক শ্রেণির রাঘব বোয়াল সেই জায়গাটিকে অবৈধভাবে দখল করে ট্রলার তৈরির ব্যবসা করে যাচ্ছে।

সম্পৃক্ত পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button