মো.ফারুকুজ্জামান, কিশোরগঞ্জ: কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের দান বাক্সে ৩ মাস ২৬ দিনে গনণা করে ৭ কোটি ২২ লক্ষ ৪৬হাজার ৪৬ টাকা। এছাড়াও রয়েছে বিপুল পরিমান স্বর্ণালঙ্কার ও বিদেশি মুদ্রা। আগে এসব অর্থ জেলার অন্যান্য মসজিদ, মাদ্রাসা ও এতিমখানার উন্নয়নসহ গরীব মেধাবী ছাত্রদের জন্য ব্যয় করা হলেও, এবার পাগলা মসজিদকে আন্তর্জাতিক মানের কমপ্লেক্স বানানোর কাজে এসব টাকা ব্যয় করা হবে বলে জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।
মসজিদের লোহার দানবাক্স যেন টাকার খনি। বাক্স খুলতেই শুধু টাকা আর টাকা। এসব টাকা বস্তায় ভরে নেয়া হয় ঐ মসজিদেরই দোতলায়।
জেলা প্রশাসনের তথ্য মতে, ৩ মাস ২৬ দিন পর পাগলা মসজিদের দানবাক্স খোলা হয়েছে। যেখানে ১২ জন ম্যাজিস্ট্রেট, ১৫ জন পুলিশ সদস্য ৯ জন আনসার সদস্য, ৭০ জন ব্যাংক কর্মকর্তা ও ৩০ জন সেনা সদস্য উপস্থিত ছিলেন। গণনা কাজে ২৪৫ মাদ্রাসার শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেছেন।
শনিবার ১৮ আগষ্ট সকাল ৮টায় মসজিদের ৯টি দানবাক্স খুলে বের করা হয় ২৮ বস্তা টাকা। দিনভর গননা শেষে টাকার পরিমান দাঁড়ায় ৭কোটি ২২ লাখ ১৪ হাজার ৪৬টাকা ও প্রচুর পরিমান স্বর্ণাঙ্কার এবং বৈদেশিক মুদ্রা।
এর আগে সর্বশেষ গত বছরের ৯ ডিসেম্বর এ মসজিদের দানসিন্দুকগুলো খোলা হয়েছিল। তখন ২৭ বস্তা টাকা পাওয়া গিয়েছিল। পরে টাকা গণনা করে সর্বোচ্চ ৭ কোটি ৭৮লাখ ৬৭ হাজার ৭৩৭ টাকা পাওয়া গিয়েছিল। এ মসজিদে সঠিক নিয়তে মানত করলে রোগ-বালাই দূর হওয়াসহ বিভিন্ন মনোবাসনা পূর্ণ হয়।
এমন বিশ্বাস থেকেই দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে সকল ধর্মের মানুষ প্রতিনিয়ত মানতের নগদ অর্থ, স্বর্ণালঙ্কার, বৈদেশিক মুদ্রা, গরু,ছাগল, হাস, মুরগীসহ বিভিন্ন সামগ্রী দান করে থাকেন। নগদ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার ছাড়া দানের বিভিন্ন সামগ্রী প্রতিদিন নিলামে বিক্রি করে রূপালী ব্যাংকে থাকা মসজিদের একাউন্টে জমা করা হয়। ১৯৯৭ সাল থেকে এই মসজিদটি ওয়াকফের আওতায় পরিচালিত হচ্ছে। জানালেন মসজিদের সাধারণ সম্পাদক পৌরমেয়র মাহমুদ পারভেজ । ব্যাংকে রাখা টাকার লাভের অংশ দরিদ্রজটিল রুগীদের চিকিৎসাখাতে ব্যায় করা হয়।
দেশের অন্যতম আয়কারী ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃত এ পাগলা মসজিদকে আন্তর্জাতিক মানের দৃষ্টিনন্দন কমপ্লেক্স নির্মাণ করার কাজ হবে বলে জানালেন পাগলা মসজিদের সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ।
জনশ্রুতি রয়েছে, প্রায় আড়াইশ বছর আগে পাগলবেশী এক আধ্যাত্মিক পুরুষ খরস্রোতা নরসুন্দা নদীর মধ্যস্থলে মাদুর পেতে ভেসে এসে বর্তমান মসজিদ এলাকা জেলা শহরের হারুয়ায় থামেন। তাকে ঘিরে সেখানে অনেক ভক্তকুল সমবেত হন। ওই পাগলের মৃত্যুর পর সমাধির পাশে এই মসজিদটি ৩ একর ৮৮ শতাংশ জমির উপর গড়ে ওঠে। পরে কালক্রমে এটি পরিচিতি পায় পাগলা মসজিদ নামে।