নড়াইল প্রতিনিধি ঃ নড়াইল সদর উপজেলার আগদিয় মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের খেলার মাঠে নির্মাণসামগ্রী রেখে সড়ক সংস্কার কাজ করছেন ঠিকাদার।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি নগত নারায়ণে তুষ্ট হয়ে আগদিয়া চৌরাস্তা হতে শেখহাটি সড়কের নির্মাণসামগ্রী ঠিকাদারকে রাখতে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে।
এতে মাঠের চরম ক্ষতি হওয়ার পাশাপাশি শিক্ষার্থীসহ শিশু-কিশোরদের খেলাধুলা বন্ধ হয়ে গেছে। প্রায় ২০ দিন ধরে চলছে এ অবস্থা। এতে এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
সরেজমিন দেখা যায়,আগদিয়া চৌরাস্তা হতে শেখহাটি নির্মাণাধীন সড়কের ঠিকাদার খেলার মাঠে পূর্ব পাশে পাথর ও বালুর বিশাল স্তূপসহ সড়কের বিভিন্ন রকম নির্মাণসামগ্রী রেখেছেন। মাঠের একটি বড় অংশজুড়ে ফেলে রাখা হয়েছে পাথর। মাঠজুড়ে ছড়িয়ে আছে পাথরের কুচি। মাঠের ভেতর রয়েছে ভারী ভারী যন্ত্র। মাঠের মধ্যে ওঠা-নামা করছে পাথরবোঝাই ট্রাক ও ভারী ভারী যন্ত্র। মাঠটির পূর্ব পাশের গোলপোস্টের সামনেই পাথর-বালু মিশ্রণের জন্য প্লান্ট মেশিন বসানো আছে। বিকট শব্দে চলছে সেটি। দক্ষিণ পাশেই মাটি খুঁড়ে পিচ (বিটুমিন) গলানোর চুলা স্থাপন করা হয়েছে। নির্মাণসামগ্রীর ধুলাবালি এবং বিটুমিন গলানোর কাজে ব্যবহৃত টায়ার ও গার্মেন্টস তুলা পোড়ানোর তীব্র কালো ধোঁয়ায় যেন ওই এলাকা আচ্ছন্ন হয়ে আছে। ফলে স্থানীয় বাসিন্দা ও বিদ্যালয়ের শিশু কিশোর শিক্ষার্থীরা পড়েছে চরম স্বাস্থ্যঝুঁকিতে।
মাঠ সংলগ্ন আগদিয়া গ্রামের বাসিন্দা টিপু শেখ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘খেলার মাঠে নির্মাণসামগ্রী রাখাসহ পরিবেশ দূষণকারী টায়ার পুড়িয়ে বিটুমিন গরম করার সময় দুর্গন্ধে এলাকায় থাকা দায়। প্রতিবাদ করেও কোনো কাজ হয়নি। আশপাশের এলাকার ভেতরে ছেলেমেয়েদের একটি মাত্র খেলাধুলার মাঠ এটা। সেটাও বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে টাকার বিনিময়ে ভাড়া দিয়েছেন বলে তিনি শুনেছেন। খেলার মাঠ বন্ধ থাকায়, শিক্ষার্থীরা খেলাধুলা করতে পারছে না।’
সদর উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত আহবায়ক মিনা মরফদুল হাসান শিল্পী বলেন,স্কুল মাঠ দখল করে সড়কের নির্মাণ সামগ্রী রাখার প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এলাকাবাসীর একটা মাত্র খেলার মাঠ। খেলাধূলা বন্ধ হয়ে গেছে। পরবর্তীতে মাঠের চরম ক্ষতি হবে। স্কুল পড়ুয়া কোমলমতি শিক্ষার্থীদের দূষিত কালো ধোঁয়ায় শ্বাস কষ্ট সহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হবে। আমরা প্রশাসনের কাছে এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করি।
স্থানীয় খেলোয়াড় দিপু শেখ বলেন, ‘পাথর আর বালুর বিশাল সব স্তূপের নিচে চাপা পড়েছে মাঠটি। মাঠ দখল করে নির্মাণসামগ্রী রাখার কারণে কোনো টুর্নামেন্টের আয়োজন করা যাচ্ছে না। মাঠটি খেলার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। অথচ তা দেখার কেউ নেই।’
কলোড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আশিস কুমার বিশ্বাস বলেন,মাঠটিতে এভাবে নির্মাণ সামগ্রী রাখা খুবই দুঃখ জনক।ইতিপূর্বে এই মাঠ সংস্কারের জন্য টাকা বরাদ্দ হলে ও নাম মাত্র বালু দিয়ে সমুদয় টাকা উত্তোলন করা হয়েছে।
এ বিষয়ে তিনি প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
সড়ক নির্মাণ কাজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান
বলেন, মাঠ ভাড়ার বিষয়টি তিনি জানেন না।
এ বিষয়ে আগদিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘বিদ্যালয়ের খেলার মাঠ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কিভাবে ব্যবহার করছেন- সেটি তার জানা নেই।
এ বিষয়ে জানতে আগদিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি আব্বাস আলী সর্দার বলেন,নড়াইল ১ আসনের সাংসদের অনুরোধে মাঠ দেওয়া হয়েছে।খেলার মাঠ সড়কের উন্নয়ন কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সুলতান মাহমুদ বলেন, এ বিষয়টি সম্পর্কে তিনি অবগত নন। তবে বিদ্যালয়ের খেলার মাঠ ভাড়া দেয়ার কোনো বিধান নেই। আর যদি ভাড়া দিয়ে থাকেন, এর সব দায়দায়িত্ব স্কুল কর্তৃপক্ষকে নিতে হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাদিয়া ইসলাম, বলেন, খেলার মাঠটি দখল করে নির্মাণসামগ্রী রাখার বিষয়টি তিনি জানেন না। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।