কাজী নুরনবী,নওগাঁ: মুসলিম স্থাপত্যের এক অপূর্ব নিদর্শন নওগাঁর কুসুম্বা মসজিদ। ছয় গম্বুজ বিশিষ্ট মূল্যবান কালো পাথর দিয়ে নির্মিত এই মসজিদটি প্রায় ৪৬৪ বছরের ইতিহাস বহন করে। পাঁচ টাকার কাগজের নোটে এ মসজিদের জদের ছবি মুদ্রিত আছে। প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন জেলাসহ বিদেশি পর্যটকরা মসজিদটি দেখতে আসেন।
বছরের দুই ঈদে প্রচুর দর্শনার্থীদের সমাগম হয়। এ মসজিদকে কেন্দ্র করে গত কয়েক বছর থেকে সেখানে গড়ে উঠেছে দোকানপাট। এটি জেলার অন্যতম ঐতিহাসিক পর্যটনকেন্দ্র। যেখানে দূরদূরান্ত থেকে প্রতিদিন পর্যটকরা দেখতে আসেন।
মসজিদটিকে ঘিরে পর্যটনশিল্পের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। নওগাঁ জেলা শহর থেকে প্রায় ৩৪ কিলোমিটার পশ্চিমে মান্দা উপজেলার নওগাঁ-রাজশাহী মহাসড়কের পশ্চিমপাশে কুসুম্বা গ্রামে এই মসজিদটি অবস্থিত। মসজিদটি স্থানীয়দের কাছে কালাপাহাড় নামে পরিচিত। মসজিদের প্রবেশদ্বারে বসানো ফলকে মসজিদের নির্মাণকাল লেখা রয়েছে হিজরি ৯৬৬ সাল (১৫৫৮-১৫৬৯) খ্রিষ্টাব্দ)। সুলতান গিয়াস উদ্দিন বাহাদুর শাহের রাজত্বকালে সুলতান সোলায়মান নামে এক ব্যক্তি মসজিদটি নির্মাণ করেন। যার দৈর্ঘ্য প্রায় ৬০ ফুট ৬ ইঞ্চি এবং প্রস্থ প্রায় ৪৪ ফুট ৬ ইঞ্চি। দুই সারিতে ৬টি গোলাকার গম্বুজ রয়েছে। কালো পাথর দিয়ে
নির্মিত এই মসজিদটি প্রায় ৪৬৪ বছরের ইতিহাস বহন করে। মসজিদের গায়ে রয়েছে লতাপাতার নকশা। মসজিদটি আয়তাকার এবং এতে রয়েছে তিনটি বে এবং দুটি আইল। মসজিদের ভেতরে উত্তর-পশ্চিম কোনের স্তম্ভের উপর একটি উঁচু আসন আছে।
ধারণা করা হয়, এই আসনে বসেই তৎকালীন কাজী-বিচারকরা এলাকার বিভিন্ন সমস্যার বিচার কার্যপরিচালনা করতেন। কুসুম্বা মসজিদে চত্বরে হাতে ডান পাশে বাক্স আকৃতির একটি কালো পাথর আছে। কথিত আছে- জনৈক কৃষক হালচাষের সময় তার জমিতে ওই পাথরটি পাওয়া যায়। পাথরটিতে লাঙ্গলের ফলার আঘাতে কিছুটা ভেঙে যায়। পাথরটি জমি থেকে তুলে এনে রাস্তার পাশে রাখা হয়। উদ্ধারকৃত পাথরের গায়ে তোগড়া হরফে আরবি লিপি রয়েছে। আল মালিকু মা হুমম মোকাররামা আবুল মোজাফফর হোসেন শাহ বিন সৈয়দ আশরাফ আল হোসেন। অর্থাৎ তিনি শাসক যিনি পরাক্রমশালী ও সম্মানের অধিকারী সৈয়দ আশরাফ আল হোসেনের ছেলে আবুল মোজাফফর হোসেন শাহ। এ থেকে বোঝা যায় পাথরখণ্ডটি হুসেন শাহের স্মৃতিবিজড়িত।
মসজিদের কিছু সংস্কারের প্রয়োজন মনে করছেন স্থানীয়রা। কুসুম্বা মসজিদের মোয়াজ্জিন মাওলানা ইসরাফিল আলম বলেন- মসজিদে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করেন ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা। মসজিদে মিহরাব আছে তিনটি, যার সবগুলো কালো পাথরের তৈরি।