নওগাঁয় আমনতের টাকা ফেরতের দাবিতে মানব বন্ধন ও সড়ক অবরোধ

 

কাজী নূরনবী,জেলা প্রতিনিধি নওগাঁঃ নওগাঁয় বন্ধু মিতালী নামে অর্থ লগ্নিকারী প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকদের
পাওনা টাকা ফেরতের দাবিতে নওগাঁ শহরের ব্যস্ততম মুক্তির মোড় এলাকায় প্রধান সড়কে অবস্থান নেয় কয়েক’শো গ্রাহক। এ সময় পুলিশ সেখান থেকে সরিয়ে দিতে গেলে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তি হয়।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ রোববার সকাল ১০টা থেকে আন্দোলনকারীরা শহরের নওযোয়ান মাঠে অবস্থান নেয়। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে প্রথমে তারা নওযোয়ান মাঠের সামনে সড়ক অবরোধের চেষ্টা করে। পুলিশের বাধায় সেখান থেকে সরে গিয়ে সেখান ২০-২৫ মিটার দূরে শহরের মুক্তির মোড় চার মাথায় সড়ক অবরোধ করে আন্দোলনকারীরা। সেখান থেকেও পুলিশ আন্দোলনকারীদের সরে যেতে বলে পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের ধস্তাধস্তি হয়। এতে মুক্তির মোড় এলাকায় উত্তেজনাকর পরিস্থিরি সৃষ্টি হয়। পুলিশের বাধায় দুপুর ১২টার দিকে আন্দোলনকারীরা সড়ক ছেড়ে দিলে সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। অবরোধ কর্মসূচি চলার সময় সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে ভোগান্তিতে পড়েন সড়কটিতে চলাচলকারী বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার হাজারো মানুষ।আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, বারবার প্রতিশ্রুতি দিয়েও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসন বন্ধু মিতালী ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক নাজিম উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। পাওনা টাকা ফেরত ও প্রতারক নাজিম উদ্দিনকে গ্রেপ্তারের দাবিতে আজ সড়ক অবরোধ ও থানা ঘেরাও কর্মসূচি ছিল। কিন্তু পুলিশের বাধায় তাঁদের কর্মসূচি প- হয়ে গেছে। এ বিষয়ে নওগাঁ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূরে আলম সিদ্দিকী বলেন, ‘মুক্তির মোড় শহরের একটি ব্যস্ততম এলাকা। এখানে সড়ক অবরোধ করলে পুরো শহরজুড়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে মানুষকে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়। এজন্য আমরা আন্দোলনকারীদের সড়ক থেকে সরে যাওয়ার অনুরোধ করেছি। সেখানে কোনো সংঘর্ষ বা ধস্তাধস্তির মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি।এর আগে গত ১ ডিসেম্বর আমানতের টাকা ফিরে পাওয়ার দাবিতে শহরের মুক্তির মোড়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ-মিছিল করেছিল প্রতিষ্ঠানটির কয়েক হাজার গ্রাহক। প্রায় দেড় ঘন্টা চলে এই অবরোধ, এতে তৈরি হয় যানজট। এ সময় তারা নিজেদের টাকা উদ্ধারে বন্ধু মিতালী ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক নাজিম উদ্দিন তনুকে গ্রেপ্তারের দাবি জানান। এক পর্যায়ে পুলিশ সুপার (অতিঃডিআইজি) মোঃকুতুব উদ্দিন এসে প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালককে গ্রেপ্তারের আশ্বাস দিলে আন্দোলনকারীরা অবরোধ প্রত্যাহার করে চলে যান। পাওনা টাকা ফেরতের দাবিতে একাধিকবার মানববন্ধন কর্মসূচিও পালন করেছেন।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, তাঁদের জমানো টাকা আত্মসাৎ করে প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পরিচালক নাজিম উদ্দিন পরিবার নিয়ে গত ১২ নভেম্বর উধাও হয়ে যান। তাঁর পালিয়ে যাওয়ার খবর জানতে পেরে তাঁরা নওগাঁ সদর থানা ও নওগাঁ আদালতে একাধিক মামলা করেছেন। জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার এবং দায়িত্বরত সেনা কর্মকর্তাদের কাছেও একাধিকবার অভিযোগ দিয়েছেন। কিন্তু এখনো নাজিম উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করতে পারেননি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
ভুক্তভোগী গ্রাহকদের ভাষ্য, নওগাঁ ছাড়াও পাশের জয়পুরহাট, রাজশাহী ও বগুড়া জেলায় বন্ধু মিতালী ফাউন্ডেশন নামের এই প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৫ হাজার গ্রাহক রয়েছেন। এর মধ্যে ৪ হাজার ৩০০ গ্রাহকের পাওনা হিসাব করে ৫০০ কোটি ৮০ লাখ টাকার হিসাব পাওয়া গেছে। সব সদস্যের পাওনা টাকার পরিমাণ জানা গেলে এই টাকার পরিমাণ আরও বেশি হবে।
২০০৯ সালে বন্ধু মিতালী ফাউন্ডেশন নামের প্রতিষ্ঠানটি চালু করেছিলেন নাজিম উদ্দিন (তনু) নামের এক ব্যক্তি। এ প্রতিষ্ঠানটি চালু করার আগে তিনি ঢাকায় একটি এমএলএম কোম্পানিতে চাকরি করতেন। এমএলএম কোম্পানিতে চাকরি করার সুবাদে সেখানকার রপ্ত জ্ঞান থেকে বন্ধু মিতালী ফাউন্ডেশন গড়ে তুলেছিলেন তিনি। নওগাঁ শহরের খাস-নওগাঁ এলাকায় প্রতিষ্ঠানটির প্রধান কার্যালয় করা হয়। এ কার্যালয় ছাড়াও নওগাঁ শহরের সরিষাহাটির মোড়, বালুডাঙ্গা বাসস্টান্ডসহ নওগাঁ জেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রতিষ্ঠানটির অফিস ছিল। নওগাঁ ছাড়াও পার্শ্ববর্তী জয়পুরহাট, রাজশাহী ও বগুড়া জেলাতেই বন্ধু মিতালীর অফিস ছিল।জয়পুরহাট, রাজশাহী ও বগুড়া জেলায় প্রতিষ্ঠানটির ৭৫টি অফিস ছিল। গত ১২ নভেম্বরের পর থেকে সব অফিস বন্ধ রয়েছে।
জানতে চাইলে নওগাঁর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গাজীউর রহমান বলেন, ‘টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ইতোমধ্যে থানায় দুটি মামলা হয়েছে। এই প্রতারণার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ইতোমধ্যে কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বন্ধু মিতালী ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক নাজিম উদ্দিনকে গ্রেপ্তারের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। নাজিম উদ্দিনকে গ্রেপ্তারের জন্য ইতোমধ্যে বেশ কয়েক জায়গায় অভিযানও চালানো হয়েছে। কিন্তু তাঁকে পাওয়া যায়নি। তিনি যাতে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে না পারেন সে জন্য ইমিগ্রেশনে বার্তা পাঠানো হয়েছে। আশা করছি,খুব শিঘ্রই নাজিম উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এ বিষয়ে তৎপর রয়েছে

সম্পৃক্ত পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button