জাফর ইকবাল অপুঃ দৈনিক আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে ফরমায়েশি সাজা বাতিল ও পত্রিকা প্রকাশের সকল প্রতিবন্ধকতা দূর করার ব্যবস্থা নিতে অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহবান জানানো হয়েছে। শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) খুলনায় আমার দেশ পরিবারের ব্যনারে অনুষ্ঠিত কর্মসূচি থেকে এ আহবান জানানো হয়।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, পালিয়ে যাওয়া স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার সরকার আজকের অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনুসের বিরুদ্ধে সারা দেশে পাতানো মামলা দিয়েছিল এবং রায়ে তাকে সাজা দিয়েছিল তারই আজ্ঞাবহ আদালত। সেই সাজা বাতিল হয়েছে, সেই সমস্ত পাতানো মামলা বাতিল হয়েছে। আশা করবো সরকার মাহমুদুর রহমান ও তার স্ত্রীর নামে দায়ের হওয়া মামলা প্রত্যাহার ও ফরমায়েশি রায় বাতিলের পদক্ষেপ নেবে। একই সাথে আমার দেশ প্রেস সিলগালা করার সময় জব্দ তালিকায় ২৫ কোটি টাকা মূল্যের প্রিন্টিং মেশিন, ৫ কোটি টাকার কাগজ ও এক কোটি টাকার কালি রয়েছে বলে পুলিশ উল্লেখ করেছিল। বিগত ১১ বছরে এই সকল সম্পদ লুটপাট ও ধ্বংস করা হয়েছে। সমাবেশ থেকে লুন্ঠিত সম্পদের ক্ষতিপূরণ এবং বেকার থাকা সাংবাদিক, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের বকেয়া সকল বেতন ভাতা পরিশোধের জোর দাবি জানানো হয়। ছাত্র জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীনতাকে সুরক্ষিত করতে ও রাষ্ট্র সংস্কার
প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত ও দিগন্ত টিভি, ইসলামী টিভি, চ্যানেল ওয়ানসহ বন্ধ সকল মিডিয়া অবিলম্বে চালু করার দাবি জানান তারা।
খুলনা প্রেসক্লাব চত্বরে সকাল সোয়া ১০ টায় সমাবেশ শুরু হয়ে চলে দুপুর পর্যন্ত। এরপর একটি বিক্ষোভ মিছিল প্রেসক্লাব থেকে বের হয়ে নগরীর প্রাণকেন্দ্র পিকচার প্যালেস গিয়ে সংক্ষিপ্ত পথসভার মাধ্যমে শেষ হয়।
সাংবাদিকদের এই আয়োজনে বিপুল সংখ্যক রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতাকর্মীরা অংশ নেন। প্রেসক্লাব চত্বর কানায় কানায় পরিপূর্ণ হওয়ার পর আশেপাশের রাস্তায় জনতা ছড়িয়ে পড়ে।
দৈনিক আমার দেশের খুলনা ব্যুরো প্রধান ও বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন-বিএফইউজের সহকারী মহাসচিব এহতেশামুল হক শাওনের সভাপতিত্বে এবং মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়ন খুলনার কোষাধ্যক্ষ আব্দুর রাজ্জাক রানার পরিচালনায় প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের খুলনার আহবায়ক প্রফেসর মোহাম্মদ মাজহারুল হান্নান।
সমাবেশে প্রধান বক্তা ছিলেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও খুলনা মহানগর বিএনপির আহবায়ক এডভোকেট এস এম শফিকুল আলম মনা। বিশেষ অতিথি ছিলেন খুলনা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিন, মহানগরী জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি এডভোকেট শেখ জাহাঙ্গীর হুসাইন হেলাল, মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়ন খুলনার সভাপতি মো. আনিসুজ্জামান, খুলনা প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শেখ দিদারুল আলম, বিএফইউজের সাবেক সহ-সভাপতি আবু তৈয়ব ও মো. রাশিদুল ইসলাম, সাবেক নির্বাহী সদস্য এইচএম আলাউদ্দিন, বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের খুলনার সদস্য সচিব প্রফেসর ডা. সেখ মো. আখতার উজ জামান, বাংলাদেশ ল’ইয়াস কাউন্সিলের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি এডভোকেট শাহ আলম, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের মহানগর আহবায়ক ডা. প্রদীপ দেবনাথ, ড্যাব নেতা ডা. আবু জাফর সালেহ মো. পলাশ, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের এডভোকেট মাহফুজুর রহমান মফিজ, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের খুলনার প্রতিনিধি আহমেদ হামীম রাহাত।
এতে বক্তব্য দেন, খুলনা বিশ^বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক প্রফেসর ড. মো. রায়হান আলী, মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়ন খুলনার ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসান হিমালয়, সাংবাদিক নেতা এরশাদ আলী, সোহরাব হোসেন, মুহাম্মদ নূরুজ্জামান, তরিকুল ইসলাম তুহিন, কে এম জিয়াউস সাদাত, আশরাফুল ইসলাম নূর, শেখ শামসুদ্দিন দোহা, মহানগরী ছাত্রশিবিরের সভাপতি আরাফাত হোসেন মিলন, ছাত্র নেতা মো. নূরুল্লাহ, সৈয়দ এমরান, এডভোকেট রফিকুজ্জামান, খুবির বন্ধনের সাধারণ সম্পাদক আতিয়ার রহমান, জাসাসের যুগ্ম আহবায়ক এম এ জলিল, ছাত্রনেতা নেতা মুশফিকুর রহমান, তারেক রহমান, নারী নেত্রী মনিরা ইয়াসমিন রত্না, সাংবাদিক নেতা আল আমিন গোলদার, সাইফুল্লাহ তারেক।
কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন সাংবাদিক আতিয়ার পারভেজ, এ এইচ এম শামীমুজ্জামান, আহমদ মুসা রঞ্জু, শামসুল আলম খোকন, মাকসুদ আলী, নাজমুল হক পাপ্পু, দ্বীন মোহাম্মদ রেজা সোহাগ, এম এ জলিল, নূর ইসলাম রকি, আবুল হাসান শেখ, আজিজুল ইসলাম, রকিবুল ইসলাম মতি, কামরুল হোসেন মনি, সেলিম গাজী, হারুন অর রশীদ, মাজহারুল ইসলাম, রবিউল ইসলাম শিমুল, শফিকুল ইসলাম শফি, বিএনপি নেতা বদরুল আনাম খান, চৌধুরী হাসানুর রশীদ মিরাজ, খন্দকার হাসিনুল ইসলাম নিক, রফিকুল ইসলাম বাবু, ব্যবসায়ী নেতা রবিউল ইসলাম বিপ্লব, সাইমুন ইসলাম রাজ্জাক, মো. জাহান আলী, আসাদুর রহমান সানা, ছাত্র নেতা গাজী শহিদুল ইসলাম, এস এম ইউসুফ, আমীর হামজা প্রমুখ।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, দৈনিক আমার দেশ সৎ ও বস্তনিষ্ঠ সাংবাদিকতা করতো। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের দুর্নীতি ও লুটপাটের বিরুদ্ধে উচ্চকন্ঠ ছিল আমার দেশ। সম্পাদক মাহমুদুর রহমান সরকার প্রধানকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে বলেছিলেন, সততায় পারবেন না প্রধানমন্ত্রী। তিনিই সবার আগে শাহবাগে ফ্যাসিবাদের পদধ্বনি শুনতে পেয়েছিলেন। দেশে নবরূপে বাকশাল কায়েম হতে চলেছে তা তিনিই লিখেছিলেন। বিচারপতিদের স্কাইপ সংলাপ ফাঁস করে দেশের বিচার ব্যবস্থার অন্তঃসারশূণ্যতাকে প্রমাণ করে দিয়েছিলেন। সরকার গেছে পাগল হইয়া তারা একটা রায় চায়- আমার দেশের এই সংবাদ শেখ হাসিনার সরকার সহ্য করতে পারেনি। বিদ্যুৎ সেক্টর সহ মেগা প্রকল্পে মেগা দুর্নীতি নিয়ে আমার দেশ সবচেয়ে সাহসি রিপোর্ট গুলো করেছিল। আর সে কারণে ২০১০ সালের জুনে প্রথম দফায় এবং ২০১৩ সালের ১১ এপ্রিল দ্বিতীয় বার তাকে গ্রেফতার, কারারুদ্ধ ও রিমান্ডের নামে বর্বরোচিত নির্যাতনের শিকার হতে হয়। তার বিরুদ্ধে স্রাা দেশে ১২৪ টি মামলা দায়ের ও একটি মামলায় ৭ বছরের সাজা হয়। কুষ্টিয়ার আদালতে হাজিরা দিতে এলে ছাত্রলীগ-যুবলীগের সশস্ত্র ক্যাডাররা তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা চালিয়ে রক্তাক্ত জখম করে।