এম এইচ চৌধুরীঃ ১৮ মে ২০২৪ইং সন্ধ্যায় প্রেস ব্রিফিং -এ জানানো হয়, বহুল আলোচিত একজন নারী জুজুৎসু ক্রীড়াবিদ’কে জোরপূর্বক ধর্ষণের ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে বারবার ধর্ষণের ঘটনায় প্রধান আসামী বাংলাদেশ জুজুৎসু এ্যাসোসিয়শনের সাধারণ সম্পাদক মোঃ রফিকুল ইসলাম নিউটন সহ ০২ জনকে রাজধানীর শাহ আলী ও মিরপুর এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-১২।
১) র্যাব প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বিভিন্ন ধরণের অপরাধীদের গ্রেফতারের ক্ষেত্রে অত্যন্ত অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। র্যাবের সৃষ্টিকাল থেকে অদ্যাবধি জঙ্গি, মাদক, অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী, অপহরণকারী, ছিনতাইকারী, চাঁদাবাজ ও প্রতারকচক্র গ্রেফতারে সদা তৎপর রয়েছে। এছাড়াও সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কয়েকটি চাঞ্চল্যকর ধর্ষণের মত নেক্কারজনক ঘটনার সাথে জড়িত আসামীদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে আটক করে আইনের আওতায় এনে সাধারণ জনমনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে র্যাব।
২) যেখানেই মানবাধিকার লুষ্ঠিত হয়েছে, নারী অধিকার ক্ষুন্ন করা হয়েছে বা নারী নির্যাতন/ধর্ষণের কোন ঘটনা ঘটেছে, র্যাব তৎক্ষণাৎ ভিকটিম অথবা নির্যাতিতার পাশে দাঁড়িয়েছে এবং ঘটনার সাথে জড়িত আসামিদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে এসেছে। বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের মেয়েরা দেশকে ক্রীড়া, চিকিৎসা, শিক্ষাসহ সকল ক্ষেত্রে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। কতিপয় ভালো মানুষের মুখোশধারী চরিত্রহীন ব্যক্তিরা নারী সমাজের এই অগ্রযাত্রা কে ব্যাহত করতে অপচেষ্টা চালাচ্ছে। বাংলাদেশের নারী অধিকার সংরক্ষণ ও নারী জাগরণ এর ব্যাপারে র্যাব ফোর্সেস সোচ্চার রয়েছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে।
৩) সাম্প্রতিক সময়ে জুজুৎসু এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম নিউটন এর বিরুদ্ধে এসোসিয়েশনের নারী ক্রীড়াবিদের যৌন হয়রানীসহ বিভিন্ন নির্যাতনের ঘটনা নিয়ে একটি অনুসন্ধানি প্রতিবেদন দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। পরবর্তীতে জুজুৎসু এসোসিয়েশনের একজন নারী খেলোয়াড় রফিকুল ইসলাম এর বিরুদ্ধে নারী শিশু নির্যাতন দমন ও পর্ণোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি মামলা দায়ের করেন; যার মামলা নং-৩০, তারিখ ১৮ মে ২০২৪। ঘটনাটি বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় প্রচারিত হলে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে এবং দেশব্যাপী ব্যাপক আলোচিত হয়। র্যাব উক্ত ধর্ষণের ঘটনার সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে।
৪) এরই ধারাবাহিকতায় র্যাব ফোর্সেস সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা এবং র্যাব-১২ এর একটি অভিযানিক দল রাজধানীর শাহ আলী ও মিরপুর এলাকা থেকে এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে উক্ত ধর্ষণের ঘটনার প্রধান আসামি বাংলাদেশ জুজুৎসু এ্যাসোসিয়শনের সাধারণ সম্পাদক ১। মোঃ রফিকুল ইসলাম নিউটন (৬৫), পিতাঃ মৃত রজব আলী, পল্লবী, ঢাকা ও তার সহযোগী একজন নারীকে গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা ধর্ষণের সাথে তাদের সম্পৃক্ততার বিষয়ে তথ্য প্রদান করে।
৫) প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, গ্রেফতারকৃত রফিকুল ইসলাম নিউটন একজন জুজুৎসু খেলার প্রশিক্ষক। পাশাপাশি সে রাজধানীর শ্যামলীতে অবস্থিত বাংলাদেশ জুজুৎসু এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। উক্ত এসোসিয়শনের অধিকাংশ প্রশিক্ষণার্থী নারী। যেখানে অভিভাবক হিসেবে এই কোমলমতি মেয়েদেরকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে দায়িত্ব পালন করার কথা ছিল। কিন্তু সেই ব্যক্তি কোমলমতি মেয়েদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে তার হীন চরিত্র চরিতার্থ করার প্রয়াস চালায়। গ্রেফতারকৃত রফিকুল এসোসিয়েশনের সাধারন সম্পাদকের মত পদে থেকে প্রশিক্ষণার্থীদের ভালো অবস্থানে নিয়ে যাওয়া এবং বিদেশ ভ্রমণের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ ও শারীরিক নির্যাতনের মতো অপকর্ম করতো বলে জানা যায়। এছাড়াও সে এসোসিয়েশনের অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়ে খেলোয়ারদের সাথে অনৈতিক কার্যকলাপের কারণে গর্ভবতী হলে তাদের গর্ভপাত করানোর মতো ভয়ংকর কাজও করেছে বলে জানা যায়। এমনকি সে অনুশীলনের আগে মেয়েদের পোশাক পরিবর্তনের কক্ষে প্রবেশ করে তাদের জোরপূর্বক ধর্ষণ করে ভিডিও ধারণ ও নগ্ন ছবি তুলে রাখতো। পরবর্তীতে ধারণকৃত নগ্ন ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় ভীতি দেখিয়ে ব্ল্যাকমেইল করে বারংবার ধর্ষণ করে তার হীন চরিত্র চরিতার্থ করতো বলে জানা যায়।
৬) মামলার এজাহার সূত্রে আরও জানা যায় গ্রেফতারকৃত রফিক এসোসিয়েশনের গ্রেফতারকৃত অপর এক নারী খেলোয়াড় এর সহায়তায় অন্য নারী খেলোয়াড়দের মিথ্যা প্রলোভন ও ভয়ভীতি দেখিয়ে যৌন হয়রানি সহ জোর পূর্বক শারীরিক সম্পর্ক করতো। ভিকটিম বিগত ০২ বছর যাবত উক্ত জুজুৎসু এসোসিয়েশনে গ্রেফতারকৃত রফিক এর অধীনে জুজুৎসু খেলার প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে আসছিলো। খেলার প্রশিক্ষণকালীন সময়ে গ্রেফতারকৃত রফিক বিভিন্ন অজুহাতে ভিকটিমকে শারীরিকভাবে হেনস্তা করতো। পরবর্তীতে ভিকটিম প্র্যাকটিস শেষে চেঞ্জিং রুমে পোষাক পরিবর্তন করার সময় গ্রেফতারকৃত নারী খেলোয়াড় ভিকটিমকে রুমের মধ্যে আটকে রেখে গ্রেফতারকৃত রফিকুল ইসলামকে ডেকে আনে এবং গ্রেফতারকৃত রফিকুল রুমে প্রবেশ করে ভিকটিমকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। পরবর্তীতে গ্রেফতারকৃত নারী খেলোয়াড় রুমে প্রবেশ করে মোবাইল ফোনে ভিকটিমের নগ্ন ছবি ধারণ করে এবং কাউকে জানালে ভিকটিমের নগ্ন ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি প্রদান করে। উক্ত ঘটনার পর গ্রেফতারকৃত রফিকুল ইসলাম ভিকটিমের নগ্ন ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে রাজধানীর একটি ফ্ল্যাটে নিয়ে একাধিকবার জোরপূর্বক ধর্ষণ করেছে বলে জানায়। উক্ত ঘটনায় ভিকটিম মামলায় দায়ের করলে গ্রেফতারকৃতরা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর গ্রেফতার এড়াতে দেশের বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান পরিবর্তন করে আত্মগোপন করে এবং আত্মগোপনে থাকাকালীন অবস্থায় র্যাব কর্তৃক গ্রেফতার হয়। মামলার এজাহার নামীয় ২নং আসামি গ্রেফতারকৃত অপর নারী খেলোয়াড়কে ইতোমধ্যে রাজধানীর শেরে বাংলা নগর থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলে জানান, আরাফাত হোসেন সহকারী পরিচালক লিগ্যাল এন্ড মিডিয়া উইং।