চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ভিটেমাটি কেটে রাস্তা নির্মাণ করার অভিযোগ

লংগদু (রাঙ্গামাটি প্রতিনিধি: পার্বত্য জেলা রাঙামাটির লংগদুতে আনোয়ার হোসেন নামক এক ব্যক্তির নিজস্ব বসত ভিটার মাটি কেটে রাস্তা নির্মাণের অভিযোগ পাওয়া গেছে স্থানীয় এক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে।
এলাকায় প্রভাবশালী হওয়ায় তার বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতেও পারছেন না। এতে প্রতিনিয়তই নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে ওই এলাকার সাধারণ জনগণের এমনটাও জানিয়েছেন তারা।
জানা গেছে, কিছুদিন যাবৎ সরকারি রাস্তা নির্মাণে বেআইনি ভাবে জোরদখল করে প্রভাব খাটিয়ে উপজেলার গুলশাখালী ইউনিয়নের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. শফিকুল ইসলাম তার ইউনিয়নের সাথে মাইনী ইউনিয়নের ৭নম্বর ওয়ার্ড বড় কলোনি এলাকার সংযোগ সড়কের সংস্কার কাজ করছেন।
ওই এলাকার জনগণের যাতায়াতের সুবিধার্থে কয়েক বছর আগে খালের পাশ দিয়ে মাটি ফেলে একটি রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছিল। রাস্তার পাশেই আনোয়ার হোসেনের ক্রয়কৃত ৩০ শতাংশ জায়গাজুড়ে ভিটেমাটি। রাস্তার উচ্চতা বাড়াতে ঐ ঘরের ভিটা মাটিও ভেকু দিয়ে কেটে নেয়া হয় চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলামের নির্দেশে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বর্ষা মৌসুমে রাস্তাটি প্লাবিত না হওয়ার জন্য ও নির্মাণাধীন কালভার্টের সঙ্গে সংযোগ সড়ক সমান করতে সড়কে মাটি ফেলে কাজ করছে।
স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘদিনের পরিশ্রমের টাকা দিয়ে আনোয়ার এই জমিটা কিনেছিলেন। ঘর তুলেও কয়েকবছর এখানেই ছিলেন। যাতায়াত ও কর্মক্ষেত্রের অসুবিধার জন্য কয়েক বছর ধরে নদীর ওপারে (গাঁথাছড়ার দোকান টিলা) ৮নম্বর ওয়ার্ডে বাড়ি করে থাকেন। তাই অনেকদিন ধরে এ জায়গায়টা খালি পড়ে আছে। আর এই সুযোগে শফিক চেয়ারম্যান বাড়ির মাটি কেটে নিয়ে রাস্তায় দেন।
ভুক্তভোগী আনোয়ার হোসেন বলেন, ৭বছর গার্মেন্টসে কাজ করে উপার্জিত টাকা দিয়ে পরিবার নিয়ে থাকার জন্য এ জায়গা ক্রয় করি। অনেকদিন না থাকার কারণে জমি ফাঁকা পড়ে আছে। কিন্তু গত কয়েকদিন আগে দেখি আমার জমির মাটি ভেকু দিয়ে কেটে রাস্তায় ফেলছে। তাৎক্ষণিকভাবে শফিক চেয়ারম্যানকে জানালেও কোন লাভ হয়নি। পরে আমার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামাল হোসেন কমলকে জানাই।
তিনি অশ্রুশিক্ত কণ্ঠে আরো বলেন- এখন আমার সব শেষ! নিজের দলীলভুক্ত জমিও অন্যের রোষানলে। বসত ভিটার যে মাটি কেটে নিয়ে গেছে তা ৫ লাখ টাকায়ও ক্ষতিপূরণ হবে না।
এবিষয়ে অবগত নন বলে জানান মাইনীমূখ ইউনিয়ন পরিষদের ৭নম্বর ওয়ার্ড সদস্য মো. রুবেল। তিনি বলেন, আমাকে এবিষয়ে কেউই কিছু জানায়নি তাই আমার কিছু জানা নেই।
এদিকে গাঁথাছড়া ৮নম্বর ওয়ার্ড সদস্য মো. ইদ্রিস হোসেন বলেন, আনোয়ার আমাকে বিষয়টি জানালে আমি সরজমিনে যাই এবং কথার শতভাগ সত্যতাও পাই। তবে যতদূর জানি এখনো কোনো মীমাংসা হয়নি।
মাইনীমূখ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামাল হোসেন কমল বলেন, বিষয়টি আমাকে জানিয়েছে। যেভাবে সমন্বয় করা যায় সেভাবেই করার চেষ্টা করবো। তবে এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে ও রাস্তা উচু ও প্রসস্থকরণে জমির মাটি নেয়া হয়েছে।
অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম বলেন, ইউএনও স্যার, পিআইও সহ স্থানীয়দের পরামর্শেই মাটি কেটে রাস্তায় দেয়া হয়েছে। রাস্তার আশেপাশের বেশিরভাগ জায়গায়ই খাস জমি। তবে এ জমি যে ব্যক্তি মালিকানার সেটা জানা ছিল না। তবুও যেহেতু মাটি কাটা হয়েই গেছে সেহেতু রাস্তার বিপরীত পাশ থেকে মাটি এনে সমান করে দিয়ে সমতল করা হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পিআইও অফিসের টিআর কাবিখার কাজে অল্প বাজেট এখান থেকে ক্ষতিপূরণ দিলে রাস্তার কাজ করার আর সুযোগ থাকবে না। গুলশাখালী-মাইনীর সংযোগ সেতুর জন্য রাস্তার উঁচু ও প্রসস্থ করা জরুরি তাই রাস্তার পাশের জায়গা থেকে মাটি কাটা হয়েছে।
জানতে চাইলে এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, “আমার এবিষয়ে কোনো বক্তব্য নেই, যে সেক্টর বা যিনি কাজ করছে আপনি তার সাথে কথা বলেন। পরে আমাকে জানাবেন। পরে হোয়াটসঅ্যাপে তাকে বার্তা দিয়েও আর কোন উত্তর মেলেনি।

সম্পৃক্ত পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button