সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি : সিরাজগঞ্জের তাড়াশে চাঞ্চল্যকর ট্রিপল মার্ডারের (বাবা-মা ও মেয়ে) ঘটনায় একমাত্র আসামিকে ভাগ্নে রাজিব কুমার ভৌমিককে (৩৫) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি) বিকেলে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত রড ও হাসুয়া পুকুর থেকে উদ্ধার করা হয়।
মামার সঙ্গে মোটা অঙ্কে আর্থিক লেনদেন নিয়ে বিরোধই হত্যাকাণ্ডের একমাত্র কারণ বলে জানিয়েছে পুলিশ। জেলার পুলিশ সুপারের (এসপি) কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে বুধবার (৩১ জানুয়ারি) বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান এসপি আরিফুর রহমান মন্ডল।
এর আগে গত মঙ্গলবার ভোরের দিকে তাড়াশ পৌর শহরের বারোয়ারী বটতলা মহল্লার বিকাশ সরকারের বাড়িতে ওই ট্রিপল মার্ডার হয়। অভিযুক্ত রাজিব কুমার জেলার উল্লাপাড়া উপজেলার তেলিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। তিনি হত্যার শিকার নিহত বিকাশ সরকারের বোনের ছেলে। ঘটনার দিন বিকাশ ছাড়াও স্ত্রী স্বর্ণা সরকার ও তাদের মেয়ের পারমিতা সরকার তুষি খুন হন।
পুলিশ সুপার জানান, মামার সঙ্গে মোটা অঙ্কের টাকার ব্যবসায়িক লেনদেনের কারণে এ হত্যাকাণ্ড ঘটান বলে পুলিশের কাছে স্বীকারাক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন রাজিব কুমার ভৌমিক। তিনটি হত্যাকাণ্ড রাজিব ভৌমিক একাই ঘটিয়েছেন। হত্যা ঘটনায় মঙ্গলবার রাতেই স্বর্ণা সরকারের বড় ভাই সুকমল চন্দ্র সাহা বগুড়া থেকে এসে তাড়াশ থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।
পুলিশ সুপার জানান, যৌথ ব্যবসার জন্য ভাগ্নে রাজিবকে ২০ লাখ টাকা দেন বিকাশ সরকার। ব্যবসা চলা অবস্থায় তাকে লভ্যাংশসহ ২৬ লাখ টাকা দেন রাজীব। কিন্তু তার কাছে অতিরিক্ত ৩৫ লাখ টাকা দাবি করেন বিকাশ। এই টাকা চাপ দেওয়ায় মামা-ভাগ্নের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। টাকা জোগারে অপারগ হয়ে মামাসহ পুরো পরিবারকে হত্যার পরিকল্পনা করেন রাজীব।
গ্রেপ্তার রাজীবের স্বীকারোক্তির বরাত দিয়ে হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দেন এসপি আরিফুর রহমান মন্ডল। তিনি বলেন, সোমবার (২৯ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় ফোন করে বাকি টাকা দিতে বাসায় আসতে চায় রাজীব। এ সময় বিকাশ সরকার বাইরে থাকায় টাকা তার স্ত্রীর (মামী) কাছে দিতে বলেন তিনি। মামার অনুপস্থিতিতে মামী ও মামাতো বোনকে হত্যার পরিকল্পনা করেন রাজীব।
সোমবার সন্ধ্যাকালীন পূজা শেষ করে কফি আনতে দোকানে যান মামী স্বর্ণা সরকার। এ সুযোগে মামাতো বোন পারমিতা সরকা তুষির মাথায় ভারী রড দিয়ে আঘাত করলে অজ্ঞান হয়ে পড়েন। পরে ঘরে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গেই মামীকেও রড দিয়ে আঘাত করলে তিনিও মাটিতে পড়ে যান। সন্ধ্যার পর মামা বাসা ফিরে কড়া নাড়লে দরজা খুলে মামার মাথায় আঘাত করে মাটিতে ফেলে দেন রাজিব। পরে তিনজনকে একটি কক্ষে নিয়ে গলা কেটে মৃত্যু নিশ্চিত করে বাইরে তালা লাগিয়ে চলে যান।
এদিকে সোমবার (২৯ জানুয়ারি) রাতে বিকাশ সরকারের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করলেও কেউ রিসিভ না করায় সন্দেহ হয় স্থানীয়দের। পরে তারা রাতেই তাড়াশ থানা পুলিশকে ঘটনাটি অভিহিত করেন। পরদিন মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি) সকালে তাড়াশ পৌর শহরের বারোয়ারী বটতলা মহল্লার বাড়িতে গিয়ে ঘরের তালা ভেঙে তিনটি লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে তাদের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ এম মনসুর আলী মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে পাঠানো হয়।
এদিকে বুধবার (৩১ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় মর্গে থেকে হত্যার শিকার তিনজনের মহদেহ পৌর এলাকার শোলাপাড়া মহল্লার বিকাশ সরকারের বাড়িতে আনলে লোকজন ভিড় করে। পরে তাদের দাহ কার্যে শতাধিক লোক অংশ নেয়।
বুধবার সকালে হত্যার শিকার বিকাশ সরকারের মা ও ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা কে এম হোসেন আলী হাসান, সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ তালুকদার। এর আগে সকাল ১০টার দিকে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির প্রেসিডিয়াম সদস্য মিলন কান্তি দত্ত, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনিন্দ্র কুমার নাগ, সাংগঠনিক সম্পাদক সাগর হাওলাদার, প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক বিপ্লব দে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এ সময় তারা বিকাশ সরকারের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করে অভিযুক্তকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।