খুলনার শাতিল এই প্রথম মামলা করলেন শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে

জাফর ইকবাল অপুঃ সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা প্রসঙ্গে বাদী খুলনার এস এম আমীর হামজা শাতিল বলেছেন, ‘ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেন। এর আগে সরকারি চাকুরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে প্রায় এক মাস ধরে চলা আন্দোলনে বহু ছাত্র-জনতা নিহত হন। এর মধ্যে আবু সাঈদ, মীর মুগ্ধসহ অনেকের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে বিভিন্ন ব্যক্তি, সংগঠন। কিন্তু আবু সায়েদ নামের পঞ্চগড়ের এক মুদি দোকানির খোঁজ নেয়নি কেউ। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে পরিবারটির পাশে দাঁড়িয়েছি, সাহায্যের চেষ্টা করেছি।’
মঙ্গলবার বাদী শাতিল আরও বলেন, ‘সবাই হত্যাকাণ্ডের বিচার চাইছে, কিন্তু এগিয়ে আসছে না। আমি পরিবারটিকে মামলার কথা বলেছি। তারা বলছে, ঘরে খাবার চাল নেই, মামলা চালাবো কী দিয়ে? তখন ঢাকায় ফিরে বিবেকের তাড়নায় আমি নিজেই বাদী হয়ে মামলা করেছি।’ গরুর খামারি শাতিলের বাড়ি খুলনার ফেরিঘাট এলাকায়। বর্তমানে থাকেন রাজধানীর কল্যাণপুরে।
মোবাইল ফোনে শাতিল বলেন, ‘চিকিৎসার জন্য ১৮ জুলাই পর্যন্ত দেশের বাইরে ছিলাম। ১৯ জুলাই ঘরে বসে সময় টিভিতে দেখলাম, একটি লোক রাস্তা পার হয়ে কিছু আনতে যাচ্ছে। হঠাৎ একটি গুলি তার মাথার একপাশ দিয়ে ঢুকে অন্যপাশ দিয়ে বের যায়। তিনি সড়কে পড়ে যান। সেই সময় অত্যন্ত খারাপ লাগছিল। তাৎক্ষণিক সংঘাতময় পরিস্থিতিতে বেশি খোঁজ নিতে পারিনি। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি লোকটির নাম আবু সায়েদ। তিনি ছোট্ট একটি মুদি দোকান চালান। বাড়ি পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলায়। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে তার স্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করি। তার স্ত্রী আমাদের জানান, তাদের একটি মেয়ে, তার বিয়ে হয়ে গেছে। ছেলে এসএসসি পরীক্ষার্থী। আর্থিক অবস্থা এতোই করুন যে, ঘরে খাবার চাল নেই। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে সাধ্যমতো সাহায্য করলাম। কৃষি ব্যাংক বা অন্য কোনো ব্যাংকে তাদের ১ লাখ ৩০ হাজার টাকার ব্যাংক ঋণ ছিল, সেটা পরিশোধের প্রক্রিয়া চলছে।’
পরিবারটির অবস্থা এতো করুণ যে বিচার চাওয়ার সাহস পাচ্ছেন না জানিয়ে শাতিল আরও বলেন, ‘তখন ঢাকায় ফিরে এসে, সিদ্ধান্ত নিলাম মামলাটি আমিই করবে।’ তিনি বলেন, একটি মানুষকে সরাসরি মাথায় গুলি করে হত্যা করল। তার কোনো সুরতহাল হলো না, বিচার হলো না। এটা ঠান্ডা মাথায় খুন এবং এই খুনের জন্য সরকারের শীর্ষ ব্যক্তিরাই দায়ী।
এস এম আমীর হামজা শাতিল খুলনা জিলা স্কুল, এম এম সিটি কলেজ ও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থী ছিলেন। কিন্তু সম্মান শেষ করার আগেই চলে যান লন্ডনে। সেখানে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্মান শেষ করে ২০১৪ সালে দেশে ফেরেন। সরকারের বিভিন্ন কর্মকান্ডের সমালোচনা করে ফেসবুকে লেখালেখি করায় তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করে পুলিশ। পরে সেই মামলায় খালাস পান।
শাতিল বলেন, ‘যে কোনো ইস্যুতে গণগ্রেফতার শুরু হলেই পুলিশ আমার বাড়িতে অভিযান চালায়। সম্পূর্ণ বিনা কারণে তিন বার আমাকে গ্রেফতার করেছে। মিথ্যা মামলার আসামি করেছে। মামলা-গ্রেফতারের কারণে চাকুরি-ব্যবসা কিছুই করতে পারিনি। পরে গরুর খামার করেছি।

সম্পৃক্ত পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button