কুলি থেকে রাতারাতি শতকোটির মালিক ‘ডিবি হারুনের দোসর’

ফারুকুজ্জামান, কিশোরগঞ্জ :একসময় মাত্র ১০০ টাকা রোজে লোড-আনলোডের কাজ করতেন নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায়। পরে শ্রমিক লীগ নেতা বনে যাওয়া সেই মোকারিম হোসেন সরদার এখন কয়েকশ কোটি টাকার মালিক। স্থানীয়রা বলছেন, আলাদিনের সেই জাদুর চেরাগের মতো তিনি পেয়েছেন সাবেক ডিবিপ্রধান হারুনের জাদুর চেরাগ। রাতারাতি এতো টাকার মালিক বনে যাওয়ার পেছনে রয়েছে ডিবির হারুনের ছত্রছায়া।
স্থানীয়রা জানান, সাবেক ডিবিপ্রধান হারুনের অবৈধ সম্পদের কেয়ারটেকার ছিলেন মোকারম সরদার। বিষয়টি জনগণের কাছে পরিষ্কার হলে আত্মগোপণ করেন তিনি।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, আলোচিত সাবেক ডিবিপ্রধান হারুন অর রশিদ তার অবৈধ টাকার কেয়ারটেকার মোকারম সরদারকে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করতে বিপুল পরিমাণ টাকা ছিটিয়ে কিশোরগঞ্জ জেলার নিকলী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত করেছেন। তার ছোট ভাই মো. আনোয়ার হোসেন দামপাড়া ইউনিয়নের চেয়াম্যান, বাবার ভিটি বাড়ী ছাড়া কিছুই ছিল না,কিন্তু অবৈধভাবে সম্পদ করে আজ বাবার নামে দামপাড়া নুরুল ইসলাম কলেজ। নিকলীর দামপাড়া ৩ কোটি টাকা মূল্যের ২৫ শতাংশ জমি ক্রয় করে তাতে ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ডুপ্লেক্স ভবন করেছেন।
তাছাড়াও মজলিস পুরে প্রায় ১৫ কোটি টাকায় ডিজিটাল রাইসমিল,দুটি ইটভাটা আছে।
মোকারিম হোসেন সরদার কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলার উওর দামপাড়ার দরিদ্র নুরুল ইসলামের ছেলে। কোন দিন স্কুলের বারান্দায় যায় নাই।
তিনি আজ নিকলী উপজেলা পরিষদের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থানের চেয়ারম্যান।
তাকে চেয়ারম্যান বানানো হয়েছে অবৈধ সম্পদ পাহারা দেওয়ার জন্য ডিবি প্রধান হারুন। এ নিয়ে কিশোরগঞ্জ থেকে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত চলছে আলোচনা সমালোচনার ঝড়।
জানা যায়, বুড়িগঙ্গায় জাহাজ থেকে লোড-আনলোডের সময় চুরি করে রাখা চাল, ডাল, গম, পাথর, কয়লা সার বিক্রি করতেন মোকারম সরদার। তার রয়েছে জাহাজের পণ্যচোরাই সিন্ডিকেট। সেই সিন্ডিকেট থেকে মোকারিম হোসেন সরদার যে পরিমাণের টাকা আয় করতেন তার অর্ধেক স্থানীয় নেতাদের ভাগ দিতেন।
স্থানীয়রা আরও জানান, হারুন অর রশিদ নারায়ণগঞ্জে পুলিশ সুপার হিসেবে থাকাকালে প্রায়ই আলীগঞ্জ এলাকায় বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে মোকারম সরদারের লেবার অফিসে সময় দিতেন। দীর্ঘ সময় মোকারম ও হারুনকে লেবার অফিসে বসে টাকাপয়সার হিসাব করতে দেখেছেন। এরপরই আলীগঞ্জ এলাকায় অন্তত ৮ থেকে ১০টি প্লট কিনেন মোকারিম হোসেন সরদার। এর মধ্যে ৪টি বহুতল বাড়ি করেছেন। অনেকেই এসব বাড়িকে এসপির বাড়ি নামে চেনেন।
কিশোরগঞ্জের স্থানীয়রা জানান, পৌর শহরের উকিলপাড়াতে ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি বাড়ি ক্রয় করেছেন। এলাকার রইস মেম্বারের কাছ থেকে ৩ কোটি টাকার জমি ক্রয় করেছেন। ভৈরব বাজার পূবালী ব্যাংকের নামে কোটি টাকার একটি নিশান পেট্রল জিপ ক্রয় করেন। ২০১৩ সালে ১ কোটি ৭০ লাখ টাকা ব্যয়ে ইভটিজিং নামের একটি সিনেমাও প্রযোজনা করেন মোকারিম।
নিকলী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মোকারিম হোসেন সরদারের হলফনামায় উল্লেখ করেছেন- তিনি স্বশিক্ষিত, তার কোনো ঋণ নেই। বাড়ি ভাড়া থেকে ৯০ হাজার টাকা ও ব্যবসা থেকে ২০ লাখ ৪০ হাজার টাকা বছরে আয় হয়। তার কাছে নগদ টাকা রয়েছে দুই কোটি বিশ লাখ ৯০ হাজার ও ১০ ভরি স্বর্ণালংকার। এছাড়া দামপাড়া মৌজায় দেড় শতাংশ, কিশোরগঞ্জ মৌজায় আড়াই শতাংশ, ভিন্নগাঁও মৌজায় ১২ শতাংশ ৩ পয়েন্ট এবং একই মৌজায় রয়েছে ৭০ শতাংশ জমি।
তবে স্থানীয়দের অভিযোগ নির্বাচনি হলফনামায় মোকারিম হোসেন সরদার সম্পদের তথ্য গোপন করেছেন।
এ বিষয়ে মোকারিম হোসেন সরদারের বক্তব্য নিতে তার গ্রাম কিশোরগঞ্জে একাধিক বাড়িতে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। তার ব্যবহার করা দুটি নম্বরে যোগাযোগ করলে বন্ধ পাওয়া যায়।

সম্পৃক্ত পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button