ফারুকুজ্জামান,কিশোরগঞ্জ : কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জে ২০২০ সালের আলোচিত লিজন হত্যার বিচার চেয়ে মানববন্ধন করেছে এলাকাবাসী।
মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলার গুণধর ইউনিয়নের গুনধর বাজারে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধন থেকে অভিযোগ করা হয় স্বৈরাচার সরকারের সহযোগী জাপা মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুর মদদে ২০২০ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর এই হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হয়। পরে পুলিশ প্রশাসনের মাধ্যমে এই হত্যাকে অপমৃত্যু বলে চালিয়ে দেয়া হয়।
ঘন্টাব্যাপী মানববন্ধনে লিজনের মা, বড় ভাই, পরিবারের অন্যান্য সদস্য ছাড়াও, স্থানীয় বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ সহস্রাধিক মানুষ অংশ নেন।
মানববন্ধনে বক্তৃতায় লিজনের বড় ভাই আশিক খান বলেন, ‘আমি বিএনপির রাজনীতি করি বলে আমার ভাইকে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। এই হত্যাকাণ্ড মুজিবুল হক চুন্নুর মদদে হয়েছে। পরে এই হত্যাকাণ্ডকে বজ্রপাতে নিহত বলে চালিয়ে দেয়া হয়। অথচ আমার ভাইয়ের হত্যাকান্ডের দুই দিন আগে থেকে দুইদিন পর পর্যন্ত কোন বজ্রপাত হয়নি, বৃষ্টিপাত হয়নি। আমার ভাইকে হত্যা করা হয়েছে এটাই মহাসত্য, এই মামলা ডিসমিস করে দেয় মুজিবুল হক চুন্নু । এখন দেশ স্বাধীন হয়েছে। আমি এই হত্যাকাণ্ডের পুনঃ তদন্ত চাই। আমি আমার ভাইয়ের হত্যার সাথে যারা জড়িত তাদের শাস্তি চাই।
লিজনের মা রুবিয়া আক্তার বলেন, ‘গত সরকারের সময় আমরা বিচার পাই নাই। এ সরকারের কাছে আমি আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই। আপনাদের কাছে অনুরোধ আমি আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই।’
কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার জয়কা ইউনিয়নের কিশোরগঞ্জ-মরিচখালী সড়কের পানাহার গ্রামের সামনে মাদলের ব্রিজের নিচ থেকে ২০২০ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর লিজনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
লিজন খান গুনধর গ্রামের মরহুম আমিনুল ইসলাম খানের ছেলে। তিন ভাই, দুই বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার ছোট।
লাশ উদ্ধারের সময় ঘটনাস্থল থেকে কয়েক জোড়া স্যান্ডেল, প্লাস্টিকের (কোল্ড ড্রিংসের) তিনটি বোতল ও একটি মোবাইল সেট পায়।
পরে এই ঘটনায় হত্যা মামলা করতে গেলে পুলিশ মামলা নেয়নি। করিমগঞ্জ থানার তৎকালীন ওসি মমিনুল ইসলাম জোর করে অপমৃত্যুর মামলা নেয়। এরপর করোনা মহামারী দেখা দেয়।
পরে ২০২১ সালে ৮ নভেম্বর স্থানীয় চারজনকে আসামি করে লিজনের বড় ভাই পারভেজ মিয়া আদালতে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
বাদী পক্ষের দাবি ছিল ওই মামলাটি যেন সিআইডি অথবা পিবিআইকে দেয়া হয়। কিন্তু পরে থানা পুলিশকেই মামলার তদন্ত দেয়া হয়। পরে ওই হত্যা মামলাটিকে বজ্রপাতের ঘটনায় নিহত বলে ফাইনাল রিপোর্ট দিয়ে দেয় ওসি।
লিজনের পরিবারের অভিযোগ, মামলাটিকে শেষ করার জন্য প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত থানা হাসপাতাল আদালতে মুজিবুল হক চুন্নু ও তার লোকজন নেপথ্যে থেকে কাজ করেছে। তাই তারা বিচার পায়নি। বর্তমান সরকারের কাছে তাদের দাবি মামলাটির জন্য পুনঃ তদন্ত হয়।
মানববন্ধনে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন, জয়কা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির, গুণধর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আশরাফ আলী, করিমগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি শাহ মো. হেদায়েত উল্লাহ, উপজেলা যুবদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মুকছেদুল মমিন সবুজ, উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক পারভেজ, উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহবায়ক জিয়ন কামাল, গুনধর ইউনিয়ন বিএনপির সহ সভাপতি রফিকুল ইসলাম প্রমুখ।