কিশোরগঞ্জের মহিনন্দে আলো ছড়াচ্ছে কৃষক পার্টনার স্কুল

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি : খেলার মাঠ কিংবা পাঠাগার ও বাড়ির আঙিনায় খোলা মাঠে চলছে স্কুল। বই-খাতা নিয়ে এসব স্কুলে পড়ছে না কৃষক-কৃষাণীরা। টেকসই, পুষ্টিকর নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন ও উদ্যোক্তাদের মান উন্নয়নে কিশোরগঞ্জে আলো ছড়াচ্ছে কৃষি বিভাগের পার্টনার স্কুল। ব্যতিক্রমী এই স্কুলে পড়ে কৃষক-কৃষাণীরা দক্ষ হয়ে উঠেছেন পরিবেশবান্ধব চাষাবাদে। ভূমিকা রাখছেন পারিবারিক পুষ্টির চাহিদা মিটাতে।
এই স্কুলে শিক্ষার্থীদের হাতে কলমে শেখানো হচ্ছে কীভাবে সহজে বাড়ির আঙিনায় নানা জাতের সবজি চাষ করে পরিবারের পুষ্টি চাহিদা মেটানো যায়।
কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার মহিনন্দ ইউনিয়নের গোয়ালাপাড়ায় অবস্থিত মহিনন্দ ইতিহাস ওইতিহ্য সংরক্ষণ পাঠাগারের আঙিনায় পার্টনার ফিল্ড স্কুল ও কৃষক সেবা কেন্দ্রের উদ্বোধন করা হয়েছে। মংগলবার (৩ সেপ্টেম্বর ) বিকেলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কিশোরগঞ্জ সদর এর আয়োজনে পার্টনার ফিল্ড স্কুল ও কৃষক সেবা কেন্দ্র উদ্বোধনকরা হয়। পার্টনার ফিল্ড স্কুল ও কৃষক সেবা কেন্দ্র উদ্বোধন করেন সদর উপজেলার কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার মো.এমাজ উদ্দিন।
জানা যায়, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সম্প্রতি শুরু হওয়া প্রোগ্রাম অন এগ্রিকালচারাল এন্ড রুরাল ট্রান্সফরমেশন ফর নিউট্রিশন, এন্টারপ্রেনরশিপ এন্ড রেসিলিয়েন্স ইন বাংলাদেশ (পার্টনার) প্রোগ্রামের আওতায় পার্টনার ফিল্ড স্কুলে ২৫ জন কৃষক কৃষানিকে নিয়ে পরিচালিত হচ্ছে। উত্তম কৃষি চর্চার মাধ্যমে আধুনিক ধান উৎপাদন কলাকৌশলের ওপর হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে ওই স্কুলে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা নাছিরুজ্জামান সুমন, সাবিহা সুলতানা,মহিনন্দ ইতিহাস ওইতিহ্য সংরক্ষণ পরিষদ ও পাঠাগারের সভাপতি আমিনুল হক সাদী,ইউপি সদস্য মো.কামাল উদ্দিনসহ স্থানীয় কৃষকরা।
কৃষি বিভাগ জানিয়েছে আগামী অগ্রহায়ণ এর ধান কর্তনের পূর্ব পর্যন্ত ১০টি সেশনে এই স্কুল চালু থাকবে। উত্তম কৃষি চর্চার মাধ্যমে আধুনিক ধান উৎপাদন কলাকৌশল, পরিবেশবান্ধব চাষাবাদ, পুষ্টি উন্নয়ন, উদেোক্তা তৈরীর ওপর হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে ওই স্কুলে।
কৃষকরা জানান, এই স্কুলে পড়ে তারা অনেক কিছুই শিখতে পারছেন। বিশেষ করে জমিতে সঠিক মাত্রায় সার ও কীটনাশক ব্যবহার, পোকা দমনসহ এই স্কুলে পড়ে তারা অনেক কিছুই শিখতে পারছেন।
স্কুলের স্থানদাতা মহিনন্দ ইতিহাস ওইতিহ্য সংরক্ষণ পাঠাগারের প্রতিষ্ঠাতা আমিনুল হক সাদী বলেন, পাঠাগারের আঙিনায় উন্মুক্ত স্থানে বসে ক্লাস করছেন একদল কৃষক কৃষানী। নিমগ্ন হয়ে শুনছেন কৃষি অফিসার শিক্ষকের কথা। নানা বয়সের এসব নারী পুরুষ কৃষি কাজের সঙ্গে জড়িত। কিন্তু সবাই এখানে ‘স্কুলছাত্রী’ তবে এটি গতানুগতিক কোনো স্কুল নয়। মুক্ত এলাকায় চেয়ার-টেবিল ছাড়া এই স্কুলে শিক্ষার্থীদের হাতে কলমে শেখানো হচ্ছে কীভাবে সহজে বাড়ির আঙিনায় নানা জাতের সবজি চাষ করে পরিবারের পুষ্টি চাহিদা মেটানো যায়। কৃষি কাজের নানা তথ্য ও কৌশল শিখছেন ২৫ জন কৃষক কৃষাণী।
স্থানীয় উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো: নাছিরুজ্জামান সুমন ও সাবিহা সুলতানা বলেন,পার্টনার স্কুলে পড়ে কৃষকরা কৃষি ও পারিবারিক পুষ্টি বিষয়ে দক্ষ হয়ে উঠেছেন। বিশেষ করে নারীরা সন্তান লালন পালন ও পারিবারিক পুষ্টি চাহিদা মিটাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারছেন। কৃষকরা মাঠে ফসলের পরিচর্চা করে খাদ্য উতপাদনে বিরাট ভূমিকা রাখছেন।
কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার মো.এমাজ উদ্দিন জানান, বাংলাদেশ সরকার ও বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে পরিচালিত প্রোগ্রাম অন এগ্রিকালচারাল অ্যান্ড রুরাল ট্রান্সফর্মেশন ফর নিউট্রিশন এন্টারপ্রেনরশিপ অ্যান্ড রিসিলিয়েন্স ইন বাংলাদেশ- পার্টনার প্রকল্পের আওতায় সদর উপজেলায় ৪টি এলাকায় পরিচালিত হচ্ছে ‘পার্টনার ফিল্ড স্কুল’ নামে এসব স্কুল।

সম্পৃক্ত পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button