শুভ্র মজুমদার কালিহাতী(টাঙ্গাইল)প্রতিনিধি: টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে দূর্গা প্রতিমা তৈরির ঐতিহ্য বহুদিনের। প্রতি বছরের মতোই শারদীয় দুর্গাপূজার আগমনী ধ্বনি শোনা যেতেই প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন স্থানীয় মৃৎশিল্পীরা। প্রতিমা তৈরির এই প্রক্রিয়া শুধু একটি ধর্মীয় আয়োজন নয়, বরং এটি এক ধরনের সামাজিক মেলবন্ধন ও ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির ধারক।
কালিহাতী উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম, বিশেষত সদর এলাকা ও আশপাশের মৃৎশিল্পীদের ঘরে এখন পূজার আমেজ বিরাজ করছে। তারা দিন-রাত পরিশ্রম করে প্রতিমা তৈরির কাজ করে যাচ্ছেন।
প্রতিমা তৈরির কাজে শিল্পীরা প্রথমে কাঠ, বাঁশ ও খড় দিয়ে প্রতিমার অবয়ব নির্মাণ করেন, এরপর কাদামাটি দিয়ে সেটি মূর্তির আকার দেন। মাটি শুকিয়ে গেলে তার উপর রঙের কাজ শুরু হয়। প্রতিমার চেহারা ফুটিয়ে তোলার জন্য বেশ কয়েকটি ধাপে রং করা হয়। প্রতিমার চোখ ও মুখশ্রীর নান্দনিকতা নিয়ে মৃৎশিল্পীরা অত্যন্ত যত্নশীল।
তবে এই পেশায় থাকা শিল্পীদের জীবনে সুখের চেয়ে দুঃখই বেশি। বেশিরভাগ শিল্পীই আর্থিক টানাপোড়েনের মধ্যে থাকেন। আধুনিক কালের প্লাস্টিক ও ফাইবারের তৈরি প্রতিমার প্রভাব পড়েছে মাটির প্রতিমার চাহিদার উপর। তবে তবুও ঐতিহ্য রক্ষার জন্য অনেক শিল্পী এই কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
স্থানীয় বাসিন্দারা প্রতিমা তৈরির প্রক্রিয়াকে তাদের সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে দেখেন। এই উৎসবকে কেন্দ্র করে গ্রামীণ অর্থনীতি কিছুটা সচল হয়। প্রতিমা তৈরির কাজ দেখতে ও পুজার আয়োজনে অংশ নিতে বহু মানুষ কালিহাতী এলাকায় আসেন, যা সামগ্রিকভাবে এলাকার মানুষের জীবনযাত্রার উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
উপজেলার একজন প্রবীণ মৃৎশিল্পী হরিদাস পাল বলেন, এটা শুধু আমাদের পেশা নয়, আমাদের আত্মার তৃপ্তি। পূজার প্রতিমা তৈরি আমাদের পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে পাওয়া একটি ঐতিহ্য। যদিও বর্তমানে আমরা আর্থিক সংকটে ভুগছি। প্রতিমা তৈরির সব উপকরনের দাম ও বেড়ে গেছে।
তবুও আমরা চেষ্টা করি প্রতিমা তৈরিতে আমাদের সমস্ত মেধা ও শ্রম ঢেলে দিতে।
উপজেলার পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক পরিতোষ সেন জানিয়েছেন, এবার উপজেলার ১৫৬টি পূজা মন্ডপে দুর্গোৎসবের আয়োজন করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে পূজা উদযাপন পরিষদ, রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি এবং প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগের মধ্যে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, অন্যান্য বছরের মতো এবারও দুর্গোৎসব শান্তিপূর্ণ, সুন্দর ও সার্থকভাবে সম্পন্ন হবে।
কালিহাতী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবুল কালাম ভূঁইয়া বলেন, এ বছর কালিহাতী উপজেলায় মোট ১৫৬ টি পূজা মণ্ডপ স্থাপনের প্রস্তুতি চলছে। আসন্ন দুর্গাপূজার সময় শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখার বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন যে ধর্মীয় উৎসবকে কেন্দ্র করে এলাকার সকল মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ রয়েছে।