অনন্ত গ্রুপের শরীফ জহিরের অর্থপাচার অনুসন্ধানে দুদক

 

নিজস্ব প্রতিবেদক:  আলোচিত পানামা পেপার্সের নথিতে নাম আসা ব্যক্তিদের মধ্যে অনন্ত গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শরীফ জহির অন্যতম। পোশাক খাতের এই ব্যবসায়ীর জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও অর্থপাচারের অভিযোগ অনুসন্ধানের উদ্যোগ নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এরইমধ্যে অনুসন্ধান কর্মকর্তা নিয়োগ করে দুদকের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, জোরপূর্বক অন্যের জমি দখল, পোশাক কারখানার শ্রমিকদের সঠিক সময়ে বেতন না দেওয়া ও নির্যাতনসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে শরীফ জহিরের বিরুদ্ধে। ২০১৯ সালে আদমজী ইপিজেডে অনন্ত গ্রুপের একটি পোশাক কারখানার শ্রমিকদের নির্যাতন ও ছাটাইয়ের অভিযোগে সেখানকার শত শত শ্রমিক মানববন্ধনও করেছিলেন। সেসময় ওই পোশাক কারখানার প্রায় আড়াই হাজার শ্রমিককে পুলিশ দিয়ে নির্যাতন ও বকেয়া পরিশোধ না করেই অন্তত দেড়শ শ্রমিককে ছাটাই করা হয়।

শরীফ জহিরের অনন্ত গ্রুপের নামে অবৈধভাবে জমি দখলের বিষয়ে রাজধানীর ভাটারা থানায় সাধারণ ডায়েরি, পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বরাবর প্রতিকার চেয়ে আবেদনও করেন জনৈক ভুক্তভোগী আক্তার হোসেন। সম্প্রতি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বরাবরে দেওয়া আবেদনে আক্তার হোসেন তার জমি বেদখলের চেষ্টা রোধ, নিজের ও পরিবারের নিরাপত্তা ও প্রাপ্যতা সুনিশ্চিতের সাহায্য চেয়েছেন। গত ২০ এপ্রিল ভাটারা থানায় করা সাধারণ ডায়েরিতে আক্তার হোসেন উল্লেখ করেন— অনন্ত রিয়েল এস্টেট লিমিটেড কোম্পানির নামে শরীফ জহির, ওমর মবিন, তামান্না রাব্বানী ও ব্রজানন্দ সরকার পরস্পর যোগসাজশে তার (আক্তার হোসেন) ক্ষতি ও হয়রানি করার নানা কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। আক্তার হোসেন আরও অভিযোগ করেন, তার সম্পত্তিতে তিনি কয়েক কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন। বর্তমানে সেখানে কাজ করতে গেলে তাকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়। এ কারণে তিনি পরিবার নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।

ভুক্তভোগী আক্তার হোসেনের সাধারণ ডায়েরিটি তদন্ত করছেন ভাটারা থানার সাব ইন্সপেক্টর (এসআই) মো. ইমরান হাসান। এ বিষয়ে তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সাধারণ ডায়েরির অভিযোগটি তদন্তের অনুমতির জন্য আদালতে পাঠানো হয়েছে। আদালতের অনুমতি পেলে পুলিশ সেটি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’
পানামা পেপার্সে নাম আসা বাংলাদেশিদের নিয়ে কয়েক বছর আগে থেকেই দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ), পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ, শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদদফতরসহ সরকারের বিভিন্ন সংস্থা অনুসন্ধান ও তদন্ত চালিয়ে আসছিল। বিষয়টি তখন আলোচিত হয়ে উঠলে উচ্চ আদালত থেকে তাদের তালিকা চাওয়া হয় বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে। পরে ২০২২ সালের ২৬ জানুয়ারি পানামা ও প্যারাডাইস পেপারস কেলেঙ্কারিতে নাম আসা ৬৯ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের তালিকা হাইকোর্টের (উচ্চ আদালত) বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের বেঞ্চে দাখিল করে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) এবং বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মধ্যে পানামা পেপারসে ৪৩ ও প্যারাডাইস পেপারসে ২৬ জনের নাম রয়েছে। সেই তালিকাতেও এই শরীফ জহিরের নাম রয়েছে বলে দায়িত্বশীল সূত্রগুলো জানিয়েছে।
অনন্ত গ্রুপের শরীফ জহিরের অর্থপাচার ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের বিষয়ে অনুসন্ধানের স্বার্থে অভিযোগ-সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র সরবরাহের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটকে গত ৭ মে (২০২৪) চিঠি দেয় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদকের মানিলন্ডারিং বিভাগের পরিচালক গোলাম শাহরিয়ার চৌধুরীর সই করা চিঠিতে আরও বলা হয়, শরীফ জহিরের জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন, বিদেশে অফশোর কোম্পানি খুলে বিনিয়োগের মাধ্যমে কর ফাঁকি ও মানিলন্ডারিংয়ের অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য দুদকের উপ-পরিচালক মো. আব্দুল মাজেদকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতার কথা বলা হয়।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দুদকের উপ-পরিচালক মো. আব্দুল মাজেদ বলেন, এ বিষয়ে অনুসন্ধানের জন্য তাকে নিয়োগ করেছে কমিশন। এজন্য তিনি বিএফআইইউতে চিঠি পাঠিয়ে সহযোগিতা চেয়েছেন। তবে সেটা সময়-সাপেক্ষ। তিনি এর বেশি কিছু বলতে রাজি হননি।

অপরদিকে, এ বিষয়ে জানতে চাইলে হেড অব বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট বা বিএফআইইউ’র প্রধান মো. মাসুদ বিশ্বাস বলেন, এ ধরনের চিঠি বিএফআইইউ এবং দুদকের মধ্যে লেনদেন নিয়মিত বিষয়। রুটিন ওয়ার্ক। চিঠি পাওয়ার পর তারা দুদকের চাওয়া অনুযায়ী, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেন। তথ্য সংগ্রহ করে তা সরবরাহ করেন। তবে এ চিঠিটি তার হাত পর্যন্ত এখনও পৌঁছায়নি। পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।

জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন এবং বিদেশে অফশোর কোম্পানি খুলে বিনিয়োগের মাধ্যমে কর ফাঁকি ও মানিলন্ডারিংসহ বিভিন্ন অভিযোগের বিষয়ে মতামত জানতে অনন্ত গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শরীফ জহিরের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সরকারি কর্মকর্তা জানান এই ধরনের ভূমি সন্ত্রাসী এবং অর্থপাচার কারিরা কোন উপায়ান্তর না পেয়ে দেশ ছেড়ে অন্যত্র পালিয়ে যায়। অনতি বিলম্বে এই ধরনের ভয়ংকর অর্থ পাচারকারীদের দেশ ত্যাগে বাধা দেওয়ার জন্য বিনীতভাবে অনুরোধ করেন। তারা যাতে বিচার কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ ছেড়ে অন্যত্র পালিয়ে যেতে না পারে।

এলাকাবাসীরা তাহার বিচার দাবি করেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন। সরকারের ভিতর থেকে সরকার বিরোধী কর্মকান্ড চালানোর জন্য এরা বিভিন্ন ভাবে অর্থ বিনিময় করে থাকে বলে জানান। তারা তদন্ত সাপেক্ষে তাহার বিচার দাবি করেন। বাংলাদেশে নামে বেনামী জ্ঞাত আয়বহির্ভূত যে সম্পদ গড়েছেন তাহা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই-বাছাই করে তার অপদর্শিত অর্থ বাজেয়াপ্ত করার জন্য অনুরোধ করেছেন।সেই সাথে তার এবং তার ভাইয়ের পরিবারের জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদের হিসাব দুদক বরাবর দাখিল করার জন্য জোর দাবি করেন।

সম্পৃক্ত পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button