
ছাতক (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি: সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার নোয়াকোট সীমান্ত দিয়ে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) দফায় দফায় বাংলাদেশি নাগরিকদের পুশইন করার ঘটনা অব্যাহত রয়েছে। সর্বশেষ মঙ্গলবার (২৪ জুন) ভোরে তিনটি পরিবারের ২০ জনকে পুশইন করা হলে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) তাদের আটক করে। আটককৃতদের মানবিক সহায়তা দিয়ে পাশে দাঁড়িয়েছে ছাতক উপজেলা প্রশাসন।
ছাতক থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোখলেছুর রহমান আকন্দ জানান, বিজিবি মঙ্গলবার দুপুরে আটককৃতদের থানায় হস্তান্তর করেছে। তাদের মধ্যে নারী, পুরুষ ও শিশু রয়েছে।
আটককৃত তিনটি পরিবারের ২০ সদস্যকে তাৎক্ষণিকভাবে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে উত্তর খুরমা ইউনিয়নের জাহান আরা চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয়ে স্থাপিত আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখানে তাদের থাকা, খাওয়া, পোশাক ও চিকিৎসার সুব্যবস্থা করা হয়েছে।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ছাতক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তরিকুল ইসলাম আশ্রয়কেন্দ্র পরিদর্শন করে তাদের খোঁজখবর নেন এবং মানবিক সহায়তা প্রদান করেন। তিনি বলেন, “পুশইন হয়ে আসা নাগরিকদের প্রতি আমরা মানবিক দায়িত্ব পালন করছি। তাদের থাকা, খাওয়া, পোশাক ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পরিচয় যাচাই করে দ্রুততম সময়ে যেন তারা নিজ নিজ পরিবারের কাছে ফিরতে পারে, সে বিষয়ে আমরা সব ধরনের সহযোগিতা করছি।”
নোয়াকোট সীমান্ত দিয়ে পুশইনের ঘটনা এটিই প্রথম নয়। এর আগেও একাধিকবার বাংলাদেশিদের পুশইন করেছে বিএসএফ।
১২ জুন: একই সীমান্ত দিয়ে ১৭ জন বাংলাদেশি নাগরিককে পুশইন করা হয়, যাদের মধ্যে ৫ জন পুরুষ, ৪ জন নারী এবং ৮ জন শিশু ছিল।
২৮ মে: নোয়াকোট বিওপির অধীনস্থ ছনবাড়ী সীমান্ত দিয়ে কুড়িগ্রাম জেলার ৫টি পরিবারের ১৬ জনকে পুশইন করা হয়েছিল।
জানা যায়, ফেরত আসা এসব নাগরিক দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে ভারতে নির্মাণ শ্রমিক, কৃষিশ্রমিক ও গৃহকর্মীসহ বিভিন্ন পেশায় কর্মরত ছিলেন।
গত ২৮ মে পুশইনের শিকার হওয়া ১৬ জনকেও ইউএনও মো. তরিকুল ইসলামের তত্ত্বাবধানে আশ্রয়কেন্দ্রে রেখে মানবিক সহায়তা দেওয়া হয়েছিল। পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর ৩১ মে কুড়িগ্রাম জেলা পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের মাধ্যমে তাদের নিজ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। সেসময় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৫টি পরিবারকে ৫ হাজার টাকা করে মোট ২৫ হাজার টাকা আর্থিক প্রণোদনাও দেওয়া হয়েছিল।
আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা ২০ জন হলেন:
কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ী থানার: জয়নাল আবেদীন (৫৫), তার দুই স্ত্রী জাহেরা বিবি (৩৬) ও মনোয়ারা বিবি (৩৩)। তাদের সন্তান মজিদুল ইসলাম (১৮), আশিদুল হক (১৫), আব্দুল্লাহ (০৫), ইসমাইল (০২), আকলিমা খাতুন (১৪), জামিলা (১৩), জান্নাতি (১০) ও সুমাইয়া (১০) এবং মজিদুলের স্ত্রী রেহেনা বিবি (১৮)।
একই থানার: নজির হোসাইন (৮০), তার স্ত্রী মোমেনা বেগম (৭৪), তাদের ছেলে মো. মমিনুল (৩২), মমিনুলের স্ত্রী মোছা. আমিনা (২৮) এবং তাদের সন্তান মাসুদ (১৬), আল আমিন (০৭) ও মেয়ে মোছা. মনিশা (০৫)।
পাবনা জেলার ভাংগুরা থানার: আব্দুর রাজ্জাকের মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস (২০)।