
আলোচক-মাহবুব: সার বাজারে লাগামহীন অনিয়ম, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক বাংলাদেশ একটি কৃষিপ্রধান দেশ। দেশের মোট জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কৃষির সঙ্গে জড়িত। জাতীয় অর্থনীতি, খাদ্য নিরাপত্তা ও উন্নয়নে কৃষির অবদান অস্বীকার করার উপায় নেই। অথচ সেই কৃষক আজ নানা অনিয়ম, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার কারণে চরম দুর্দশার শিকার। কৃষকের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চনা চাষাবাদের মৌসুমে কৃষকের প্রধান ভরসা সার। জেলা ও উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বিসিআইসি (BCIC) ও বিএডিসি (BADC) অনুমোদিত লাইসেন্সধারী ডিলাররা প্রতি বস্তা ডিএপি সার সর্বোচ্চ ১,৩৫০ টাকায় বিক্রি করতে পারবেন। প্রতিটি ডিলারের দোকানে সরকার নির্ধারিত এই মূল্য তালিকা ঝুলিয়ে রাখার বাধ্যবাধকতাও রয়েছে। কিন্তু বাস্তব চিত্র একেবারেই ভিন্ন। মাঠপর্যায়ের কৃষকেরা অভিযোগ করছেন, সরকারি ডিলাররাই প্রতি বস্তা সার বিক্রি করছেন ২,২৫০ টাকায়। খুচরা দোকানদাররা তা আরও বাড়িয়ে ২,৪৫০ টাকায় বিক্রি করছে। ফলে কৃষকের উৎপাদন খরচ বেড়ে গিয়ে তারা চরম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। দায় এড়াচ্ছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো—এই অনিয়ম ঠেকানোর জন্য সরকারের নির্দিষ্ট তদারকি সংস্থা ও কর্মকর্তারা থাকলেও কার্যত কোনো উদ্যোগ তারা নিচ্ছেন না। অনিয়ম-দুর্নীতির এই অদৃশ্য চক্র এতটাই প্রভাবশালী যে, কৃষকের ঘামঝরা টাকার অপচয় রোধ করা যাচ্ছে না। কৃষির ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা বিশেষজ্ঞদের মতে, কৃষি উপকরণের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধি ও অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে কৃষকরা একসময় চাষাবাদে অনীহা দেখাতে পারেন। এতে দেশে খাদ্য উৎপাদন ব্যাহত হয়ে বড় ধরনের সংকট দেখা দেবে। জরুরি করণীয় কৃষিকে বাঁচাতে হলে উপকরণের বাজারে কঠোর নজরদারি নিশ্চিত করতে হবে। অনিয়মে জড়িত ডিলারদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি কৃষকদের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে হলে সরকারের পক্ষ থেকে আরও আন্তরিক ও কার্যকর উদ্যোগ জরুরি। কারণ একটাই—কৃষক বাঁচলে দেশ বাঁচবে, কৃষি টিকলে বাংলাদেশও টিকবে।




